বেলাল বাঙালিঃ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত মানবতার আর্তনাদ। এমন আর্তনাদ ক্রমেই বাড়ছে। কখনো গুজবের মহামারিতে কখনোবা বিচ্ছিন্নভাবে গুজবেই ভর করে মানবতাকে পুড়িয়ে মারছে একশ্রেণীর বর্বর হায়েনারা। এহেন নৃশংসতার সর্বশেষ বলি হলেন লালমনিরহাটের শহীদুন্নবী জুয়েল।
নিহত জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। সে রংপুর পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান। ঘটনার দিন বন্ধুর সাথে পাটগ্রাম বেড়াতে গিয়ে মসজিদে আসরের নামাজ শেষে কুরআন অবমাননার অভিযোগে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়।
জানাগেছে স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে তাকে জনৈক আবুল হোসেন ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। মূলত এই আবুল হোসেন’ই জুয়েলকে চড় থাপ্পড় দিয়ে স্থানীয় জনতাকে উস্কে দেয়। মুহুর্তেই জনতার মধ্যে কুরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুদ্ধ জনতা মারমুখী হয়ে উঠলে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ নেতৃস্থানীয়রা সরে পড়েন। জনতা পরিষদের দরজা জানালা ভেঙ্গে জুয়েলকে বাইরে নিয়ে তাকে ঘটনাস্থালেই হত্যা করে তার মৃত্যু দেহ আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে এই নির্মম হত্যাকাণ কেবলই গুজব না পরিকল্পিত হত্যাকান্ড! এর নেপথ্যে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে? এ প্রশ্ন দেশবাসী ও সচেতন মহলের। অবশ্য বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসছে গুজবের কারণেই এমন নির্মম মৃত্যুর শিকার হতে হয়েছে। আরো অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু জুয়েল ফিরবে না তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছে। তার বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ প্রকম্পিত হতেই থাকবে। এভাবে আর কত জুয়েলকে গুজবে মৃত্যু শিকার হতে হবে!
চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে পুলিশের উপস্থিতিতে এক যুবককে গণপিটুনী দিয়ে ঘটনাস্থলেই খুন করে জনতা। ২৫ এপ্রিল নোয়াখালীর সোনামুড়িতে তুচ্ছ ঘটনার জেরে গণপিটুনিতে খুন হয় সুমন নামের এক তরুণ। মানিকগঞ্জের এক কারখানায় ৪ সহকর্মীর হাতে খুন হয় জুলহাস নামে এক কিশোর। এরকম শত শত আদিমতম বর্বরতার শেষ শিকার পাটগ্রামে বেড়াতে যাওয়া রংপুরের জুয়েল। এহেন বিভৎসতায়, প্রতিহিংসায় হায়েনারূপী দানবদের তাÐবে দেশবাসী স্তম্ভিত, বিক্ষুদ্ধ, হতবাক।
কখনো গুজব রটিয়ে, ধর্মীয় জিগির তুলে, পূর্ব শত্রæতার জেরে দলবদ্ধভাবে পরিকল্পিতভাবে এসব নারকীয় বর্বরতা ঘটানো হচ্ছে। আইন সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর এক জরিপে দেখা যায় গত ১০ বছরে গণপিটুনীর নামে হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৯০০ মানুষকে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কাউকে গণপিটুনী দিয়ে মেরে ফেলাও খুন হিসেবে গণ্য হবে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেশিরভাগ গণপিটুনি ঘটনার তদন্ত ও বিচার হয় নি। এসব ঘটনার সাক্ষী পাওয়া যায় না বলে পুুলিশ ‘খুনি’ শনাক্ত না করেই আদালতে প্রতিবেদন দিচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী ও আইনজ্ঞরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার কারণেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটছে। সামাজিক ও মানসিক অস্থিরতার কারণে-নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নির্মম ও বর্বর হয়ে উঠছে মানুষ। অনেকে আবার এটাকে অপরাধ মনেই করে না। বিশ্লেষকদের মতে, বিচারব্যবস্থায় আস্থা ফেরাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে নানা সামাজিক কর্মসূচী ও প্রচার কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। আমাদের প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ এটিকে সামাজিকভাবে মানবিক ইস্যু বিবেচনা করে এগিয়ে আসতে হবে। একটি সভ্য দেশে নির্বিচারে এহেন বর্বরতম হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণপিটুনী রোধে গত ১ মার্চ হাইকোর্ট প্রশাসনকে ৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করে। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনাও গণপিটুনী রোধে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। এই ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কার্যকরভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটাই সচেতন মহলের দাবি।
বেলাল বাঙালি \ অগ্নিকুÐে নিক্ষিপ্ত মানবতার আর্তনাদ। এমন আর্তনাদ ক্রমেই বাড়ছে। কখনো গুজবের মহামারিতে কখনোবা বিচ্ছিন্নভাবে গুজবেই ভর করে মানবতাকে পুড়িয়ে মারছে একশ্রেণীর বর্বর হায়েনারা। এহেন নৃশংসতার সর্বশেষ বলি হলেন লালমনিরহাটের শহীদুন্নবী জুয়েল।
নিহত জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। সে রংপুর পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান। ঘটনার দিন বন্ধুর সাথে পাটগ্রাম বেড়াতে গিয়ে মসজিদে আসরের নামাজ শেষে কুরআন অবমাননার অভিযোগে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়।
জানাগেছে স্থানীয় মেম্বারের মাধ্যমে তাকে জনৈক আবুল হোসেন ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে আসে। মূলত এই আবুল হোসেন’ই জুয়েলকে চড় থাপ্পড় দিয়ে স্থানীয় জনতাকে উস্কে দেয়। মুহুর্তেই জনতার মধ্যে কুরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুদ্ধ জনতা মারমুখী হয়ে উঠলে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ নেতৃস্থানীয়রা সরে পড়েন। জনতা পরিষদের দরজা জানালা ভেঙ্গে জুয়েলকে বাইরে নিয়ে তাকে ঘটনাস্থালেই হত্যা করে তার মৃত্যু দেহ আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রশ্ন হচ্ছে এই নির্মম হত্যাকাণ কেবলই গুজব না পরিকল্পিত হত্যাকান্ড! এর নেপথ্যে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে? এ প্রশ্ন দেশবাসী ও সচেতন মহলের। অবশ্য বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসছে গুজবের কারণেই এমন নির্মম মৃত্যুর শিকার হতে হয়েছে। আরো অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। কিন্তু জুয়েল ফিরবে না তার স্ত্রী ও সন্তানের কাছে। তার বুকফাটা আর্তনাদে আকাশ প্রকম্পিত হতেই থাকবে। এভাবে আর কত জুয়েলকে গুজবে মৃত্যু শিকার হতে হবে!
চলতি বছরের ১৮ এপ্রিল নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে পুলিশের উপস্থিতিতে এক যুবককে গণপিটুনী দিয়ে ঘটনাস্থলেই খুন করে জনতা। ২৫ এপ্রিল নোয়াখালীর সোনামুড়িতে তুচ্ছ ঘটনার জেরে গণপিটুনিতে খুন হয় সুমন নামের এক তরুণ। মানিকগঞ্জের এক কারখানায় ৪ সহকর্মীর হাতে খুন হয় জুলহাস নামে এক কিশোর। এরকম শত শত আদিমতম বর্বরতার শেষ শিকার পাটগ্রামে বেড়াতে যাওয়া রংপুরের জুয়েল। এহেন বিভৎসতায়, প্রতিহিংসায় হায়েনারূপী দানবদের তাÐবে দেশবাসী স্তম্ভিত, বিক্ষুদ্ধ, হতবাক।
কখনো গুজব রটিয়ে, ধর্মীয় জিগির তুলে, পূর্ব শত্রæতার জেরে দলবদ্ধভাবে পরিকল্পিতভাবে এসব নারকীয় বর্বরতা ঘটানো হচ্ছে। আইন সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর এক জরিপে দেখা যায় গত ১০ বছরে গণপিটুনীর নামে হত্যা করা হয়েছে প্রায় ৯০০ মানুষকে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কাউকে গণপিটুনী দিয়ে মেরে ফেলাও খুন হিসেবে গণ্য হবে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেশিরভাগ গণপিটুনি ঘটনার তদন্ত ও বিচার হয় নি। এসব ঘটনার সাক্ষী পাওয়া যায় না বলে পুুলিশ ‘খুনি’ শনাক্ত না করেই আদালতে প্রতিবেদন দিচ্ছে।
মানবাধিকার কর্মী ও আইনজ্ঞরা বলছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার কারণেই আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ঘটছে। সামাজিক ও মানসিক অস্থিরতার কারণে-নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নির্মম ও বর্বর হয়ে উঠছে মানুষ। অনেকে আবার এটাকে অপরাধ মনেই করে না। বিশ্লেষকদের মতে, বিচারব্যবস্থায় আস্থা ফেরাতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে নানা সামাজিক কর্মসূচী ও প্রচার কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। আমাদের প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ এটিকে সামাজিকভাবে মানবিক ইস্যু বিবেচনা করে এগিয়ে আসতে হবে। একটি সভ্য দেশে নির্বিচারে এহেন বর্বরতম হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গণপিটুনী রোধে গত ১ মার্চ হাইকোর্ট প্রশাসনকে ৫ দফা নির্দেশনা প্রদান করে। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনাও গণপিটুনী রোধে কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারে। এই ক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কার্যকরভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এটাই সচেতন মহলের দাবি।