আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এর শরিকেরাও এখন আর খুব একটা চাইছে না যে বিএনপি নির্বাচনে আসুক। এই পরিস্থিতিতে বিরোধী দলটির বিরুদ্ধে যে সর্বাত্মক অভিযান চলছে, তা সঠিক মনে করছে আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা। ক্ষমতাসীন জোটের শরিকেরা বলছে, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বলে আসছে বিএনপি। এর সঙ্গে এখন গ্রেপ্তার অভিযানসহ সরকারের কঠোর অবস্থানের মুখে বিএনপির নির্বাচনে আসার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।
বিএনপির মূল্যায়ন: দল ভাঙার পরিকল্পনা থেকে গ্রেপ্তার চলছে
আওয়ামী লীগ ও জোটের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, বিএনপিকে চাপে রেখে এখন সময়মতো ভোট অনুষ্ঠান নিয়ে খুব একটা সংশয় নেই। বরং চ্যালেঞ্জ আছে ভোটের পর। এমনিতেই অর্থনীতি চাপে, দ্রব্যমূল্য আকাশছোঁয়া। একতরফা ভোটের দায়ে পশ্চিমারা কোনো ধরনের অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিলে সমস্যায় পড়তে হবে।
বিএনপি নয়, দলটির নেতাদের ভোটে আনতে আওয়ামী লীগের জোর তৎপরতা
বিএনপির বর্জনের পর কারা থাকবে ভোটে
২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার পর অধিকাংশ দল একই পথে হাঁটে। ১৫৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় নিবন্ধিত সব দল এবং অন্যান্য অনিবন্ধিত দলও অংশ নেয়। এবার বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো ভোট বর্জন করলে সেই নির্বাচনে কটি দল অংশ নেয়, এ বিষয়ে সংশয় আছে আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এবার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন চায় না ক্ষমতাসীনেরা। এ জন্য বেশি বেশি দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ভোটারের উপস্থিতি বাড়াতে চায় এবার। এর জন্যও প্রয়োজন অনেক দলের অংশগ্রহণ। এমনকি বিএনপি থেকেও নেতাদের ভাগিয়ে এনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়াতে চাইছে আওয়ামী লীগ।
তবে দিন যত যাচ্ছে, ভোট নিয়ে বিএনপির বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও অনীহা দেখা যাচ্ছে। ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে ডাকে। ৪৪ দলের মধ্যে বিএনপিসহ ১৮টি দল তাতে সাড়া দেয়নি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পৌনে দুই মাস আগে এ সংলাপে রাজনৈতিক দলের অনীহা থেকে ভোটে অংশগ্রহণের একধরনের ধারণা মেলে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, কোনো দলের জন্য নির্বাচন বন্ধ থাকবে না। তবে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত চাইবে, সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সবার অংশগ্রহণ ছাড়া ভোটের বৈধতার বিষয়ে তিনি বলেন, জনগণ ভোট দিতে পারল কি না, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করবে।
ভাবনা মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতি নিয়ে
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপে বিএনপি রাজপথে টিকবে না, এটা জানাই ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের মূল ভাবনা এখন মূল্যস্ফীতি ও নির্বাচনের পর অর্থনীতির গতি কোন দিকে যায়, তা নিয়ে। অর্থাৎ মূল চ্যালেঞ্জটা ভোটের পরই আসতে পারে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, ভোটের পর কয়েকটি বিষয় খুব জরুরি। ২০১৪ সালের একতরফা ভোটের পর একের পর একটি প্রভাবশালী দেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ত্বরিত অভিনন্দন জানিয়েছিল। এটাকে একধরনের সরকারের বৈধতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। একইভাবে ২০১৮ সালের ভোটের পরও সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়নি। কিন্তু এবার প্রথমে প্রভাবশালী দেশের সমর্থন পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা ভোটের আগেই চাপে রাখছে আওয়ামী লীগকে। ভোটের পরও হয়তো তারা চাপ অব্যাহত রাখতে পারে। এমনকি অর্থনৈতিক নানা চাপও আসতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের চাপ অব্যাহত থাকবে, এটা আওয়ামী লীগ মেনেই নিয়েছে। এটা নিয়ে আর মাথা ঘামাতে রাজি নয় ক্ষমতাসীন দলটি। নির্বাচন হয়ে গেলে এবং সরকার গঠনের পর এ বিষয়ে করণীয় ও কৌশল ঠিক করা হবে। এমন বিবেচনা থেকে বিএনপিকে চাপে রেখেই নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে ক্ষমতাসীনেরা।
১৪ দলের অন্যতম শরিক ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর রাজনৈতিকভাবে বড় ভুল করেছে। এর ফল তারা ভোগ করছে। এখন তাদের চলমান আন্দোলন কিংবা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এলে তা সরকার ও জনগণের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না।