করোনাকালেও থেমে নেই জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা। জঙ্গীবাদের হোতারা এখন ইন্টারনেটেই ভয়ঙ্কর ফাঁদ পেতে বসেছে। জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের কাজ চলছে অনলাইনের মাধ্যমে। অন্ধকার জগতের প্রসার ঘটাতে ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্টফোন, ল্যাপ্টপ। প্রশিক্ষণ ও মাথা ওয়াশ করার জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে ইন্টারনেট, ইউটিউবসহ অত্যাাধুনিক সব প্রযুক্তি। রাজধানী ঢাকা ও সিলেট থেকে গ্রেপ্তারকৃত কয়েক জঙ্গির স্বীকারোক্তি থেকে উঠে এসেছে এসব তথ্য। অন্যদিকে কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থার পরেও টেনে ধরা যাচ্ছে না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজব নামক পাগলা ঘোড়ার লাগাম। দেশ-বিদেশে সমানতালে চলছে গুজব বা অপপ্রচার। আর এসব গুজবের পর্দার অন্তরালে কলকাঠি নাড়ছে জামাত-শিবিরের প্রচার বিভাগ। সূত্র বলছে, সরকার জঙ্গি নিয়ন্ত্রণে যতই তৃপ্তির ঢেকুর তুলুক জঙ্গিবাদীরা কিন্তু বসে নেই। এখন ঘরে বসেই তারা অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনা, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ, মার্শাল আর্ট ও জিহাদে যোগদানের জন্য ব্রেইন ওয়াসের কাজটি সারছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। জঙ্গিরা ইউটিউবের মাধ্যমে শিখছে উন্নত ধরণের আগ্নেয়াস্ত্রের নাম, ইফেক্টিভ রেঞ্জ, ওজন, কার্টিজ ও সাইজ সম্পর্কে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের তদন্তে উঠে এসেছে, হযরত ওমর, খালিদ বিন এর জীবনী ও জিহাদের বীবত্বগাঁথা পড়ে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে কিশোর যুবকরা। নানা অত্যাধুনিক অস্ত্র চালনা, তৈরি ও ব্যবহার সস্মর্কেও তারা ধারণা পাচ্ছে ইন্টারনেট থেকে। ভুয়া ফেসবুক আইডি বানিয়ে অস্ত্র ও বোমা তৈরির ম্যানুয়েল বাংলায় অনুবাদ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিচ্ছে জঙ্গিরা।তাদের ফাঁদে পড়ে সহজ সরল কিশোর যুবকরা এ্যাডভেঞ্চার ও জিহাদের নেশায় ঘর ছেড়ে যাচ্ছে। গ্রেফতারকৃত কিশোরদের জবানীতেই এর সত্যতা নিশ্চিত হয় পুুলিশ।
অন্যদিকে বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সকল শাখার মনিটরিং ব্যবস্থা থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো থামানো যাচ্ছে না। দেশে এমন কোনো ইস্যু নেই যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হয় নি। গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত শতাধিক মাস্টারমাইন্ড গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশই স্বাধীনতা বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত। গুজব ছড়ানো চক্র ঘন ঘন আইডি পরিবর্তন করে থাকে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে বিদেশ থেকেও। তাদের লক্ষ্য অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকার হঠানোর পরিকল্পনা। ইতোমধ্যে শতাধিক ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশে গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ৬০ জনকে সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। তার পরেও গুজব বন্ধ হচ্ছে না। রামু থেকে হালের ধর্ষণ-গুজব চলছে সমান তালে।
এই গুজব ছড়ানো চক্র ২০১২সালে কক্সবাজারের রামুতে উত্তম বড়–য়া নামে এক ব্যক্তির ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার গুজব তুলে বৌদ্ধ মন্দিরে ধ্বংসলীলা চালানো হয়। আজো উত্তম কুমারের হসিদ মেলেনি। এরপর রংপুরে টিটু নামে আরেক জনের ফেসবুকেও ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ৩০টি হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। লুটপাট করা ২৫টি বাড়িতে। নাসির নগরে রস রাজের বাড়িতে হামলা চালানো হয় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে। এর আগে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি সাইদীর মৃত্যুদÐ দেওয়ার পর সাইদীকে চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে ৩৪টি জেলায় ব্যাপক তাÐব চালানো হয়। গুজব রটনাকারিরা ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোর আন্দোলনেও চার নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ধানমÐির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে রাখা হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। ওরা কোটা আন্দোলনেও পুলিশের গুলিতে ছাত্র নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে তছনছ করা হয়। পদ্মাসেতুতে মাথা লাগার গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে ৮ জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে পদ্মাসেতুতে মাথা লাগার গুজবটি ছড়ানো হয় দুবাই থেকে।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, গুজব ও জঙ্গি প্রচারণা রোধে আরো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এসব প্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কোনক্রমেই দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ দেয়া ঠিক হবেনা।পুলিশ জানিয়েছে গুজব ছড়ানো অধিকাংশ আই ডি জামাত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধীচক্রের সদস্য। এদের সম্পর্কে সতর্ক থেকে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পুনরায় অঙ্গীরার ব্যক্ত করেছেন পুুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ। জঙ্গি অপতৎপরতা ও গুজব ছড়ানো বন্ধ করতেই হবে। তা না হলে দেশ ও সরকারের জন্য তা আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে-বলছেন বিশ্লেষকরা।