Wednesday,13,November,2024
24 C
Dhaka
Wednesday, November 13, 2024
Homeজীবন সংগ্রামএকযুগ ধরে শিকলবন্দি বাবা-মা হারা মেহনাজ

একযুগ ধরে শিকলবন্দি বাবা-মা হারা মেহনাজ

অর্থ সংকটে চিকিৎসার অভাবে এক যুগ ধরে শিকলবন্দি শেরপুরের মেহনাজ। পরিবার বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায় মেধাবী শিক্ষার্থী মেহনাজ। তবে পরিবারের সামর্থ্য না থাকায় আটকে আছে তার চিকিৎসা।

আর চিকিৎসকরা বলছেন, সিজোফ্রেনিয়া নামে রোগে আক্রান্ত মেহনাজ। নির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালেই সম্ভব এই রোগের চিকিৎসা।

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ব্রিজপাড় এলাকার মৃত নূর মোস্তফা ও মৃত হাওয়া বেগমের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মেহনাজ। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাকে ভাঙা ঘরে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর অসুস্থ হয় মেহনাজ। তার কয়েকদিনের মধ্যেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হয়।

স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে কোনো লাভ না হওয়ায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ আর নেয়নি পরিবার। পরবর্তীতে অবস্থার আরও অবনতি হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।

সারাদিন কারো উপস্থিতি ছাড়াই একাই কথা বলেন মেহনাজ। কেউ কাছে গেলে মারধর করেন। শিকল খুলে দিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে হারিয়ে যান। এসব বিব্রতকর অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ একযুগ ধরে শিকলে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। ডান পায়ে দীর্ঘদিন ধরে শিকল বেঁধে রাখায় পচন ধরেছে পায়ে। এখন বাম পায়ে শিকল বেঁধে রাখা হয়েছে। ঠাঁই হয়েছে অস্বাস্থ্যকর ভাঙা একটি ঘরে।

jagonews24

বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর দরিদ্র বড়ভাই আর ভাবিই তার একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন খাওয়া গোসল সবই করাতে হয় বড় ভাই হাসানকে। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি তার। দুই বছর ধরে সব চিকিৎসা বন্ধ হয়ে আছে অর্থ সংকটে।

নৈশপ্রহরী ও চা দোকানি দুই ভাইয়ের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার অসম্ভব হওয়ায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দিন কাটাচ্ছেন মেহনাজ। প্রতিবেশী ও স্বজনদের বিশ্বাস, সরকার ও বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সুস্থ হবেন মেহনাজ।

বড়ভাই হাসান বলেন, বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায়, পাবনা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কোনো লাভ হয়নি। আমি নৈশপ্রহরীর চাকরি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাই। আমার বড় ভাই চা বিক্রি করেন। আমাদের পক্ষে বোনের চিকিৎসা খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব। সমাজসেবা থেকে কিছু সহযোগিতা পেয়ে মেহনাজকে ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে। মাসের পর মাস তার পেছনে বাড়তি খরচ করতে হয়। কোনোভাবে যদি বোনটার সুচিকিৎসা করাতে পারতাম, আমরা খুবই উপকৃত হবো।

প্রতিবেশী শাহরিয়ার কাজল বলেন, মেহনাজের পরিবার অনেক দরিদ্র। দুই ভাই নিজেদের পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেই হিমশিম খান। এর উপর মেহনাজের জন্য প্রতিনিয়ত চিকিৎসার খরচ তাদের পক্ষে চালানো কঠিন। তাই সরকার ও সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে একটি স্থায়ী সুচিকিৎসা করানো সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদী পরিচর্যা আর চিকিৎসায় মেহনাজ সুস্থ হতে পারে।

jagonews24

নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহিদুল হক মনির। তিনি বলেন, আমরা এরইমধ্যে তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা এলে আমরা তাদের পরিবারকে দেওয়ার চেষ্টা করি। তার দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে মেহনাজের সুচিকিৎসা করানো সম্ভব।

এদিকে সিজোফ্রেনিয়া নামের এই রোগের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা একমাত্র মানসিক হাসপাতালেই সম্ভব। তাই দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সাহা।

তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতাল থেকে সমাজসেবার মাধ্যমে তাকে বিনামূল্যে ওষুধ প্রদান করা হয়। তার চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতাল প্রয়োজন। সুচিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তার কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব। তবে দ্রুত চিকিৎসা করাতে পারলে উন্নতির হার বেশি।

সর্বশেষ