Site icon নতুন কথা

কমরেড মীর দেলওয়ারের শেষ বিদায়ে ওয়ার্কার্স পার্টির শ্রদ্ধা

কমরেড মীর দেলওয়ার হোসেনের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

নতুন কথা ডেস্ক: ৭৪ বছর বয়সে চলে গেলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রবীণ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মীর দেলওয়ার হোসেন। তিনি ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ও গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা। আজীবন এই কমিউনিস্ট বিপ্লবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা। কমরেড মীর দেলওয়ারের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তার গাজীপুরের বাসায় ছুটে যান ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড মাহমুদুল হাসান মানিক ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরূল আহসান। সেখানে তার পার্টির পক্ষ থেকে তার মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর আগে দুপুর দেড়টার সময় গাজীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশের একটি চৌকশ দল বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মীর দেলওয়ার হোসেনকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করে।
কমরেড মীর দেলওয়ার হোসেন ১৯৪৭ সালের নভেম্বরে নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার ভাওর পাঁচ গ্রামের মীর বাড়ীতে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি গাজীপুরে মেশিনট্যুলস ফ্যাক্টরিতে যোগ দেন। এখানেই শ্রমিক নেতা চৌধুরি গিয়াস উদ্দিনের সাথে সম্পর্কিত হন। প্রখ্যাত কমিউনিষ্ট ও শ্রমিক নেতা নাসিম আলীর সান্নিধ্যে এসে ‘কমিউনিস্ট আন্দোলনের হাতিয়ার গ্রুপ’-এ যোগ দেন। ’৬৯-এর গণ আন্দোলনে মেশিনট্যুলস ফ্যাক্টরির শ্রমিকেরা সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন। কমরেড দেলওয়ার সেই আন্দোলনে ছিলেন একজন তরুণ কর্মি। সেই সময়ে শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান, চৌধুরি গিয়াস উদ্দিন ছিলেন মেশিনট্যুলস ফ্যাক্টরির সামনের সারির নেতা। তাদের নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে গাজিপুরে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে উঠে। সেই প্রতিরোধের দিন চৌধুরি গিয়াস উদ্দিন একজন পাকিস্তানি সেনাকে লাথি মারেন, পরে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় অপারেশনে কমরডে চৌধুরী গিয়াসুদ্দিন পাকিস্তানি আর্মির হাতে ধরা পরে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হন। তিনি মৃত ভেবে পরত্যিক্ত হন। পরে মুক্তিযোদ্ধারা তাকে উদ্ধার করেন। কমরেড দেলওয়ার মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। কমরেড দেলওয়ার ছিলেন সেই মুক্তিযোদ্দা কমান্ডের অধীন।

কমরেড মীর দেলওয়ার হোসেন ছিলেন আদর্শবাদী ও নিবেদিত প্রাণ কমিউনিস্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। পার্টির ঐক্য প্রক্রিয়ায় ‘হাতিয়ার গ্রুপ’ লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হলে তিনি তার সদস্য হন। ১৯৭৯ সালে লেনিনবাদী কমিউনিষ্ট পাটির খুলনা কংগ্রেসে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন। পরবর্তীতে লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পাটি, ‘বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি’ নামে প্রকাশ্য পার্টি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলে তিনি সেই পার্টির গাজীপুর জেলার সংগঠকের ভুমিকা পালন করেন। ১৯৮৫ সালে পার্টির বিভক্তিতে কমরেড দেলওয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির (নজরুল অংশ) কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য হন। চৌধুরি গিয়াস উদ্দিনের হাত ধরেই কমরেড দেলওয়ারের শ্রমিক আন্দোলনে আসা। শ্রমিক নেতা কমরেড নাসিম আলীর একজন যোগ্য শিষ্য ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
এক শোক বিবৃতিতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, “কমরেড মীর দেলওয়ার হোসেন ছিলেন আদর্শবাদী ও নিবেদিতপ্রাণ কমিউনিস্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, তার সংগ্রামী শ্রমিক রাজনীতি এদেশের শ্রমিক আন্দোলন বহু দিন মনে রাখবে। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কমরেড কামরূল আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন, কৃষিফার্ম শ্রমিক নেতা কমরেড আব্দুল মজিদ।

Exit mobile version