আন্তর্জাতিক ডেস্ক ॥ কদিন আগেও করোনা টিকার হাহাকার চলছিল। কিন্তু এখন আর ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যচ্ছে না বলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রতিষেধক উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ইতোমধ্যে উৎপাদন অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী আদর পুনেওয়ালা বলেছেন, ভারত সরকার কোভিশিল্ডের জন্য পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ দিচ্ছে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশও তেমনটা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাই মাসিক উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা বুস্টার ডোজ তৈরির দিকে নজর দিচ্ছি। যারা কোভিশিল্ডের দুটি করে ডোজ নিয়েছে তাদের বুস্টার ডোজের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে সরকারকে (ভারত) চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার এখনো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় নি।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিএইচও) জানিয়েছে, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন অতিসংক্রামক হলেও এটি ডেল্টার তুলনায় দুর্বল। ভাইরাসের আগের ধরনগুলোতে সংক্রমিত ব্যক্তি বা টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের সহজেই সংক্রমিত করতে পারে ওমিক্রন। তবে এতে সংক্রমণের প্রভাব অন্য ধরনগুলোর তুলনায় মৃদু। করোনার নতুন ধরনকে ডেল্টা ধরনের চেয়ে ৪.২ গুণ বেশি সংক্রামক বলে জানিয়েছেন জাপানের এক বিজ্ঞানী। দক্ষিণ আফ্রিকার গুটেং প্রদেশে (প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার স্থান) ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া জিনোম ডেটা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পেয়েছেন হিরোশি নিশিউরা নামের ওই বিজ্ঞানী। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বলেছেন, ওমিক্রন সত্ত্বেও ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হবে করোনা। ৯ ডিসেম্বর নিজের গেটসনোটস ব্লগে তিনি বলেন, ‘আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী করা বোকামি হতে পারে। তবে আমি মনে করি মহামারির তীব্র পর্যায়টি ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হবে।
১৩৫ কোটি জনসংখ্যার ভারতে ইতোমধ্যেই ১৩০ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক ৮৫ শতাংশ মানুষকে দুটি করে ডোজ দেওয়া হয়েছে। সেরাম থেকে বাংলাদেশ তিন কোটি ডোজ টিকা কিনেছিল। তবে ভারত সরকারের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে তা যথাসময়ে সরবরাহ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে এক কোটি ২৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে সেরাম।
ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত এপ্রিলে দেশীয়ভাবে টিকার চাহিদা মেটাতে টিকা রপ্তানি বন্ধ করেছিল সেরাম ইনস্টিটিউট। আন্তর্জাতিক কোভ্যাক্স প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্বে সেরাম ইনস্টিটিউটই সবচেয়ে বেশি টিকা সরবরাহ করে থাকে। গত অক্টোবর থেকে ভারতের এই ফার্মটি আবার টিকা রপ্তানি শুরু করে। এবার উৎপাদন কমানোর কথা জানালেও সেরাম সিইও আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, সংগ্রহে টিকা থাকবে না- এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হতে দিতে চান না তিনি। তাই যখনই দরকার হবে, তখনই পর্যাপ্ত টিকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করার বিষয়টিও মাথায় রাখা হবে।