বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচেই হারল অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা জিতল দুই ম্যাচেই।
খেলাধুলা প্রতিবেদন: ম্যাচের দ্বিতীয় ভাগে ফ্লাডলাইটের নিচে সুইং ও সিম মুভমেন্ট মিলল যথেষ্ট। সঙ্গে থাকল গতি আর বাউন্স। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা। পরে উইকেট শিকারে যোগ দিলেন স্পিনাররাও। কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরিতে বড় পুঁজি গড়ার পর বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে বড় জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ১৩৪ রানে। লক্ষ্ণৌতে বৃহস্পতিবার ৩১১ রানের পুঁজি গড়ে প্রতিপক্ষকে ১৭৭ রানেই গুটিয়ে দেয় প্রোটিয়ারা। চলতি বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচেই জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম দুই ম্যাচেই হারের তেতো স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ আসরের পর এই প্রথম বিশ্ব মঞ্চে এমন অভিজ্ঞতা হলো তাদের।
বিশ্বকাপে রানের হিসাবে নিজেদের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের হতাশাও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গী হলো এ দিন। এর আগে ১৯৮৩ আসরে ভারতের বিপক্ষে হেরেছিল ১১৮ রানে। ব্যাট হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার নায়ক ডি কক। আসরে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ১০৬ বলে ১০৯ রানের ইনিংস খেলার পর দুটি ক্যাচ নিয়ে ম্যাচের সেরাও কিপার-ব্যাটসম্যান। ৫ ছক্কা ও ৮ চারে গড়া তার ইনিংসটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে পঞ্চাশ ছুঁতে পারেন আর কেবল এইডেন মারক্রাম। প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান এবার ৪৪ বলে করেন ৫৬ রান। জবাবে ৭০ রানে ৬ উইকেটের ধ্বংসস্তূপ থেকে কোনোমতে দেড়শ ছাড়াতে পারে অস্ট্রেলিয়া। মার্নাস লাবুশেনের ৭৪ বলে ৪৬ ছাড়া উল্লেখ করার মতো কিছু করতে পারেননি আর কেউ।
৩৩ রানে ৩ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার পেসার কাগিসো রাবাদা। অন্য দুই পেসার মার্কো ইয়ানসেন দুটি ও লুঙ্গি এনগিডির প্রাপ্তি একটি। দুই স্পিনার কেশভ মহারাজ ও তাবরাইজ শামসি ধরেন দুটি করে শিকার। অস্ট্রেলিয়ার বড় হারে বিবর্ণ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি দায় আছে তাদের ফিল্ডিংয়েরও। ম্যাচে মোট ৬টি ক্যাচ হাতছাড়া করে তারা। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা বোলিংয়ের পাশাপাশি ফিল্ডিংয়েও নিজেদের মেলে ধরে দারুণভাবে।
রান তাড়ায় নতুন বলে পেসারদের সামনে মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না মিচেল মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নার। ইয়ানসেনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বল আকাশে তুলে বিদায় নেন মার্শ। এনগিডির অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ওয়ার্নার। পাওয়ার প্লের মধ্যে স্টিভেন স্মিথকেও হারায় অস্ট্রেলিয়া। দক্ষিণ আফ্রিকা উইকেটটি পায় রিভিউ নিয়ে। স্মিথকে এলবিডব্লিউ করে প্রথম শিকার ধরা রাবাদা পরের ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন জশ ইংলিসকে।
বাঁহাতি স্পিনার মহারাজকে ফিরতি ক্যাচ দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। রাবাদার তৃতীয় শিকার মার্কাস স্টয়নিস হন কট বিহাইন্ড। এটিও রিভিউ নিয়ে পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায় ব্যাটসম্যানকে। বল তার ব্যাট থাকা হাতের গ্লাভসে নাকি ব্যাট-বিহীন হাতের গ্লাভসে লেগেছিল, তা নিয়ে ছিল অস্পষ্টতা।
তখন ৭০ রানে ৬ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়ার সামনে বিশ্বকাপে তাদের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড নতুন করে লেখার শঙ্কা।১৯৮৩ সালের আসরে ভারতের বিপক্ষে সেই ১২৯ রানের স্কোর তারা পেরিয়ে যায় লাবুশেন ও মিচেল স্টার্কের ব্যাটে। দুজনে গড়েন ইনিংসের একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি (৯৮ বলে ৬৯ রান)। তবে দুজনই ফেরেন পরপর দুই ওভারে। এরপর অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের ২২ রানের সুবাদে পরাজয়ের ব্যবধানই কমে শুধু।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ডি ককের ব্যাটে দারুণ সূচনা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আরেক ওপেনার টেম্বা বাভুমা অবশ্য ভুগছিলেন শুরু থেকে। দুই দফা জীবন পেয়ে প্রোটিয়া অধিনায়ক বিদায় বিদায় নেন ৫৫ বলে ৩৫ রান করে। ভাঙে ১০৮ রানের শুরুর জুটি। ডি কক এ দিন শুরু থেকেই দারুণ সব শটের পসরা মেলেন। ছক্কা হাঁকিয়ে ১৯তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ৯০ বলে। গত দুই আসর মিলে ১৭ ইনিংসে যার ছিল না কোনো শতক, সেই ডি কক এবার প্রথম দুই ম্যাচেই করলেন শতক। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে বিশ্ব মঞ্চে টানা দুই শতক আগে ছিল কেবল এবি ডি ভিলিয়ার্সের।
মাইলফলক ছোঁয়ার খানিক পর ম্যাক্সওয়েলকে রিভার্স সুইপ করায় চেষ্টায় ব্যাটে লেগে বোল্ড হন ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মাঝে ২৬ রান করে ফেরার পথে ওয়ানডেতে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন রাসি ফন ডার ডাসেন (৪৫ ইনিংস)। রেকর্ডটি দক্ষিণ আফ্রিকার আরেক ব্যাটসম্যান হাশিম আমলার (৪০ ইনিংস)।
১ রানে মারক্রামের ফিরতি ক্যাচ নিতে ব্যর্থ হন কামিন্স। শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ডাররা ক্যাচ হাতছাড়া করে আরও কয়েকটি। ইয়ানসেনের ২২ বলে ২৬ রানের ক্যামিওতে তিনশ ছাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ। শেষ ওভারে কোনো রান না দিয়ে ২ উইকেট নেন স্টার্ক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের শুরু এতটাই বাজে হয় যে, সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারল না তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩১১/৭ (ডি কক ১০৯, বাভুমা ৩৫, ফন ডাসেন ২৬, মারক্রাম ৫৬, ক্লাসেন ২৯, মিলার ১৭, ইয়ানসেন ২৬, রাবাদা ০*, মহারাজ ০*; স্টার্ক ৯-১-৫৩-২, হেইজেলউড ৯-০-৬০-১, ম্যাক্সওয়েল ১০১-৩৪-২, কামিন্স ৯-০-৭১-১, জ্যাম্পা ১০-০-৭০-১, মার্শ ১-০-৬-০, স্টয়নিস ২-০-১১-০)
অস্ট্রেলিয়া: ৪০.৫ ওভারে ১৭৭ (মার্শ ৭, ওয়ার্নার ১৩, স্মিথ ১৯, লাবুশেন ৪৬, ইংলিস ৫, ম্যাক্সওয়েল ৩, স্টয়নিস ৫, স্টার্ক ২৭, কামিন্স ২২, জ্যাম্পা ১১*, হেইজেলউড ২; এনগিডি ৮-২-১৮-১, ইয়ানসেন ৭-০-৫৪-২, রাবাদা ৮-০-৩৩-৩, মহারাজ ১০-০-৩০-২, শামসি ৭.৫-০-৩৮-২)
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩৪ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কুইন্টন ডি কক