নতুন কথা প্রতিবেদন : শিক্ষা বিশ্লেষক, অভিভাবকদের দাবি এবং জাতীয় সংসদে সাংসদদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অবশেষে সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের দুই শিক্ষামন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলার সব রকম প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই খুলতে পারে ‘শিক্ষা’র তালা। ক্লাসে ফিরতে পারেন শিক্ষার্থীরা।
বৈশি^ক মহামারি করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে নেমে এসেছে মহা স্থবিরতা। বিশ্ব অর্থনীীত, সমাজব্যবস্থা, পর্যটন, স্বাস্থ্যখাতসহ নানা সেক্টরে করোনার গ্রাসে লণ্ডভণ্ড। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থায়। বিগত বছরের প্রথম ২ মাস বাদ দিলে পুরোটা বছর জুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি। করোনা মহামারির এক বছরের মাথায় এসে দেশের প্রায় সবকিছুই খুলে দেয়া হয়েছে, বন্ধ আছে কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বার বার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার তারিখ পেছানো হচ্ছে। সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছে আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। যদিও বেশীর ভাগ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সংশ্লিষ্ঠরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে। করোনা পরিস্থিতিতে দূরশিক্ষণ কার্যক্রম চললেও প্রায় ৭০ শতাংশ এ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন নি। তাই এ ব্যবস্থাকে সফল বলা যায় না। অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় না হওয়ায় প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীক্লাসে অংশগ্রহণ করেন নি। এভাবে বেশিদিন চলতে থাকলে আগামী প্রজন্মের চলার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়বে। জাতিও মেধাশূন্যতায় পতিত হবে। যা কখনোই কাম্য হতে পারে না।
জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। এমনকি উচ্চ আদালতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য রিট দায়ের করেছেন ভাওয়াল মির্জাপুর পাবলিক স্কুলএন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল কাইয়ুম। বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণস্বাক্ষরতা অভিযান পরিচালিত এক গবেষণাপত্রে এ বিষয়ে নানা তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে। তারা বলছে, ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থীই তাদের ক্লাসে ফিরে যেতে চান। ৬২ শতাংশ শিক্ষক মনে করেন শিক্ষার্থীদের ইতোপূর্বে পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য পাঠ্যসূচী সংক্ষিপ্ত করা দরকার। ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতামত, যে সব বিষয়ে পড়ানো হয়নি তা আগে পড়ানো হোক। করোনার অভিঘাতে ঝরে পড়া, অনুপস্থিতি, বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম বাড়বে। স্কুল কলেজ খোলার পর প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কেমন হবে সে বিষয়েও মতামত এসেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার রাখা, পালা করে বিভিন্ন শ্রেণীর ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষা কর্মকর্তারা মতামত প্রদান করেন। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, পরিবেশ পরিস্থিতি ও সক্ষমতা বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।
সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আগামী ফ্রেবুয়ারি থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খোলার কথা ভাবছে সরকার। প্রাথমিকভাবে প্রতি বেঞ্চে ১ জন এবং এক শ্রেণিতে সর্বোচ্চ ১৫ জন করে শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস শুরু হবে। ক্লাস হবে প্রাথমিক পর্যায়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি, মাধ্যমিককে ৯ম ও দশম শ্রেণি এবং উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বাদশ শ্রেণিতে। ইতোমধ্যে স্কুলগুলো সেই প্রস্তুতি শুরু করেছে।