নতুন কথা প্রতিবেদন: জনসংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ঘরবাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। বাড়ছে দূষণ ও তাপমাত্রা। বাড়ছে মিথেনের ঘনত্ব। সেই সাথে বাড়ছে লোভ। হচ্ছে দুর্নীতি। ধুঁকছে নদী, কমছে পানি। নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। কমে যাচ্ছে বোধের উৎকর্ষতা। বিশ্বের মাঝে বসবাসের অযোগ্য শহরের একটি ‘ ঢাকা নগর’। চারশত বছরের পুরনো এই নগরের পানি, মাটি ও বাতাস ছিল নগরীর অলংকার, যার সৌন্দের্যে জাদু ছড়াতো। এ মুহূর্তে নগরী যেন তার সৌন্দর্যের সবটুকুই হারিয়েছে। নেই সেই প্রকৃতির নান্দনিকতা। সবকিছু হারিয়ে আজ বৈধব্যের বেশে যেন বসে আছে এই জাদুর শহর। আর এই বর্তমান অবস্থায় টেনে নামানোর জন্য অন্য কেউই দায়ী নয়। দায়ী আমাদের লোভ এবং ভোগবাদী মানসিকতা।
পানির অপর নাম জীবন-মানুষ শুনছেন জন্মের পর থেকেই। শুধু কি পানিই! পানির বাইরে আর কি কিছুই নেই। যদি বলি, বৃক্ষ কম নয়। আসলে পানি-বৃক্ষ-মাটি যেন একটা যমজ ত্রিভুজ। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য এ তিনের কোনো বিকল্প নেই। আবার বেঁচে থাকার প্রশ্নে এই তিন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি চক্রের মাঝে এদের বসবাস। এই তিনের একটিকে বাদ দিয়ে পৃথিবীর অস্তিত্বের কথা চিন্তা করা যায় না। বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তুটির নাম ‘অক্সিজেন’। প্রতিবেশি দেশ ভারত উপলদ্ধি করছে অক্সিজেন কতটা জরুরি। তাও কৃত্রিম অক্সিজেন। আমাদের দেশে সবুজ বৃক্ষরাজি হলো আমাদের অক্সিজেন ভাণ্ডার। গাছ আছে বলেই বাংলার মানুষ শান্তিতে অক্সিজেন পাচ্ছেন। আবার অক্সিজেন ভাণ্ডার ধরে রাখতে দরকার পানি ও মাটি। ফলে এই তিন’ই হলো আমাদের অক্সিজেন তৈরির কারখানা। অথচ মানুষ ভোগবাদী চেতনাকে ধ্যান-জ্ঞান করে আজ পৃথিবী ধ্বংসের পথে নেমেছে। তাইতো আমরা উদ্যানের গাছ কেটে ফুড কর্নার বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণে কোনো কার্পণ্য করি নি।
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওয়াকওয়ে ও সাতটি ফুড কর্নার বানানোর জন্য কাটা পড়ছে ৪০ থেকে ৫০টির মতো গাছ। স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের কাজের অংশ হিসেবে এ কর্মটি করা হয়েছে। প্রায় অর্ধশত বছরের বর্ষীয়ান এই গাছগুলো কাটা নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। শোনা যাচ্ছে প্রতিবাদ। প্রকৃত অর্থে বৃক্ষ নিধন যেকোনো অবস্থায় একটি গর্হিত অপরাধ। তবে রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে অথবা বৃহৎ জনসমষ্টির কল্যাণে এটি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। তবে গাছ কেটে ফুড কর্নার নির্মাণের যৌক্তিকতা কতটুকু, সে প্রশ্ন থেকেই যায়! আশপাশে কোনো জমি না থাকার কারণেই কি প্রকৌশলীরা তাদের নকশায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেন নি। না, মূল নকশায় পরিবর্তন করা যাবে না বলে কোনো নির্দেশনা ছিল!
আমরা মনে করি, নিধন না করে অর্থাৎ গাছগুলোকে রক্ষা করে ফুড কর্নার বসানো গেলে বিষয়টি অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেত। আমরা জানি, ধ্বংস করা খুবই সহজ, কিন্তু তৈরি করা অনেক কঠিন। কর্তন করা গাছগুলোকে আজকের পর্যায়ে আনতে ৫০ বছর সময় লেগেছে। আবারো যদি কোনো বৃক্ষকে এ পর্যায়ে আনতে হয়, তাহলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো অর্ধশত বছর। তবে আশার কথা হচ্ছে, উদ্যান কর্তৃপক্ষ কেবল কর্তন করেই থেমে থাকে নি। উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ এক হাজার নতুন চারা লাগানোর কর্মসূচিও রেখেছে তাদের পরিকল্পনায়। এটি নিশ্চয়ই একটি সুখবর। তবে যেকোনো বৃক্ষ নিধনের আগে রক্ষার প্রশ্নে আমাদের শতবার ভেবে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, পানির মতো বৃক্ষের অপর নামও জীবন। অক্সিজেন ভাণ্ডার গাছের চেয়ে ফুড কর্নার নিশ্চই বেশি জরুরি না। উন্নয়ন মানুষ চায়, কিন্তু তা প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে নয়। তাই ভবিষ্যতে এমন কাজ করতে হলে আরো বেশি ভেবে করা দরকার। যে ক্ষতি রাজধানী ঢাকাবাসীর জন্য হবে তা পোষাতে বহু বছর লেগে যাবে।