চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজারে ট্রেনে করে যেতে লাগবে সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা আর সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা। আর শোভন চেয়ারে (নন-এসি) বসে যেতে দিতে হবে ২০৫ টাকা। নতুন নির্মিত এই রেললাইনে ট্রেনের ভাড়া বাসের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক সহনীয়, অনেক ক্ষেত্রে বাসের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।
আগামী শনিবার নতুন নির্মিত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ট্রেন চলাচলের সময় নির্ধারণ করা হয়নি। এর আগেই নতুন রুটে ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ের মার্কেটিং শাখা থেকে ৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনে ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়। এই ভাড়া রেলওয়ের মহাপরিচালক অনুমোদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভাড়া চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেনের ভাড়া ঠিক করা হয়েছে। তবে এই রুটে কয়টি ট্রেন চলবে, কখন চলবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রেল ভবনের নির্দেশনা পেলে তা ঠিক করা হবে।
চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে দোহাজারী পর্যন্ত আগে থেকেই রেললাইন আছে। ২০১৮ সালে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেললাইনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। নতুন নির্মিত রেললাইন ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই রেললাইনে মিটারগেজের পাশাপাশি ব্রডগেজ ট্রেনও চলাচল করতে পারবে। এই ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। নতুন রেললাইনে ৯টি স্টেশন রয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন এই রেললাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হলে তা অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। কেননা বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছরই প্রায় ৬০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসেন। তাঁদের বেশির ভাগই যাতায়াত করেন বাসে। অনেকে বিমানে চলাচল করেন, তবে এ রকম পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম।
আবার বর্তমানে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক সরু হওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় পর্যটক ও যাত্রীদের। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে অনেকেই ট্রেনে করে যাওয়া-আসা করেন। পর্যটকদের আকর্ষণে ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদরে আইকনিক স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে বেড়াতে আসা মানুষদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার যেতে যত ভাড়া
বর্তমানে রেলে কিলোমিটারপ্রতি এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ৯৫ পয়সা। নন-এসি শ্রেণির ভিত্তি ভাড়া ১ টাকা ১৭ পয়সা। দেশে লোকাল, মেইল, কমিউটার ও আন্তনগর—এই চার ধরনের ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভাড়ার হার কিছুটা কমবেশি আছে। এ ছাড়া আন্তনগর ট্রেনেও বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। এগুলো হলো শোভন চেয়ার, এসি চেয়ার, এসি সিট ও এসি বার্থ (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন)।লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা। আন্তনগরে তা ৩৫ টাকা। তবে সেতু ও উড়ালপথ থাকলে সর্বনিম্ন ভাড়া বাড়ে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ১৫০ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। তবে বাণিজ্যিক দূরত্ব হচ্ছে ১৮৯ কিলোমিটার। মূলত ৬টি সেতুর জন্য এই বাড়তি ৩৮ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দূরত্ব ধরা হয়েছে। একে রেলওয়ে পন্টেজ চার্জ বলা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এসি বার্থ (ঘুমিয়ে যাওয়ার আসন) শ্রেণির জন্য ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৬ টাকা। শোভন চেয়ারের জন্য ভাড়া ২০৫ টাকা। এসি চেয়ারের জন্য ৩৮৬ এবং এসি সিটের জন্য ৪৬৬ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নন-এসি বাসের ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকা।
এদিকে এখন পর্যন্ত আন্তনগর ট্রেন পরিচালনা করার পরিকল্পনা থাকলেও লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন চালানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এসব ট্রেনের জন্যও ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। যেমন লোকাল ট্রেনের জন্য (দ্বিতীয় সাধারণ শ্রেণির আসন) চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া ধরা হয়েছে ৫৫ টাকা। মেইল ট্রেনের জন্য তা ৭০ টাকা। এ ছাড়া কমিউটার ট্রেনে করে গেলে দিতে হবে ৮৫ টাকা।
চূড়ান্ত হয়নি ট্রেনের সময়সূচি
আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ থাকলেও তার আগে আগামী ডিসেম্বরের দিকে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালানোর জন্য তার আগেই বুঝিয়ে দেওয়া যাবে।
এদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ে আগামী ডিসেম্বর থেকে নতুন রেললাইনে ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সম্প্রতি আনা নতুন কোচ দিয়ে এই বিরতিহীন আন্তনগর ট্রেন পরিচালনা করা হবে। ট্রেনটিতে ১৮টি কোচ থাকবে। আসন থাকবে ৭৭৯ থেকে ৮২৪টি। এই ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়।
ঢাকা বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সরাসরি কক্সবাজার চলে যাবে। কক্সবাজারে পৌঁছাবে পরদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে। একইভাবে কক্সবাজার থেকে ছাড়বে বেলা ১টায়, আর ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি বিরতিহীন আন্তনগর ও একটি মেইল ট্রেন পরিচালনার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান রেলের কর্মকর্তারা।