।। ড. সুশান্ত দাস ।।
১ জুলাই, ২০২১ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শততম বর্ষপূর্তি। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত বিপ্লবের পর, যে বিপ্লবগুলি বিশ্বকে সবচাইতে বেশী নাড়া দিয়েছে, তারমধ্যে চীনবিপ্লব অন্যতম এটা অনস্বীকার্য। ১৯৪৯ সালে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও মাও জে দং এর নেতৃত্বে চীন বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন’ এর প্রতিষ্ঠা বিশ্ব ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সন্দেহ নেই। তার অভিঘাত বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অভিঘাতকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছিল, এটাও ঐতিহাসিক সত্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকায় জার্মান নাজিবাদের পতনের পাশাপাশি, নাজিবাদের দোসর জাপানী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাপ বিরোধী যুদ্ধে চীন জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে ঐক্যের কৌশল নিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির বীরোচিত ভূমিকা ও বিজয় বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তির লড়াইএ নতুন দিক নির্দেশনা ও পথ নির্দেশ করে। এই সময়কালে চীনের পার্টির ঐতিহাসিক ‘লং মার্চ’ তো বিপ্লবী যুদ্ধকৌশলের ‘ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে চিহ্নিত। এই লং মার্চে চীনের পার্টির নেতৃত্বের দৃঢ়তা, দূরদৃষ্টি এবং পার্টি কর্মীদের সাহস ও আত্মত্যাগ মানবসভ্যতায় মানব মুক্তির ইতিহাসে অনন্য অধ্যায়। চীন বিপ্লবের পর সোভিয়েত ও চীন উভয় সমাজতান্ত্রিক শক্তির মিলিত শক্তি তখন বিশ্বব্যাপী তৈরি করেছিল এক নতুন অভিযাত্রা। তারই অভিঘাতে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির বিরুদ্ধে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকায় শুরু হয় জাতীয় মুক্তি অর্জনের বিজয় যাত্রা। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে অর্জিত বিপ্লব ও বিজয় শুধুমাত্র চীনা জনগণের বিজয় ছিল না, ছিল বিশ্ববিপ্লবের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তা দেশে দেশে সর্বহারা মানুষের লড়াই ও সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এক অমিত সম্ভাবনা তৈরি করে।
কিন্তু বিশ্ব পুঁজিবাদ বসে থাকেনি। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান ফ্যাসিবাদের পরাজয় হলেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদ নতুন করে তার বিশ্ব আধিপত্য বিস্তারের কৌশল নির্ধারণ করে। বিশ্ব পুঁজিবাদের এই নয়া কৌশলের বিরুদ্ধে যখন বিশ্বব্যাপী প্রয়োজন ছিল সকল কমিউনিস্ট, সমাজতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ দৃঢ় অবস্থান তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে শুরু হয় বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে অনৈক্য ও বিভক্তি। স্তালিন পরবর্তি সোভিয়েত পার্টি ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে শুধু রাশিয়ার ক্ষেত্রে নি-স্তালিনীকরণ নীতি গ্রহণ করেছে তাই নয়, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় মুক্তি লড়াইএও তৈরি করে বিভ্রান্তি আর মতানৈক্য। শুধু কমরেড স্তালিন এর নেতৃত্বের ভূমিকার প্রশ্নে নয় সমাজতন্ত্র বিনির্মানসহ বিপ্লবের রণনৈতিক ও রণকৌশলগত বহু প্রশ্নে মতবিরোধ শুরু হয়। এ সময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তার বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে। ৮১ পার্টির দলিল তার ঐতিহাসিক সাক্ষী। কিন্তু ষাটের দশকে এর পরিণতি এখানেই থেমে থাকেনি। গোটা বিশ্বেই এই মতানৈক্য ভাংগনে পরিণত হয়। বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন তথাকথিত চীনাপন্থী, সোভিয়েতপন্থী শিবিরে বিভক্ত হয়। এই বিভাজনে শ্রমজীবি মানুষের বিপ্লবী আন্দোলনের কতটা লাভ হয়েছে ইতিহাস তা প্রমান করছে এবং করবে । কিন্তু বিশ্ব পুঁজিবাদ যে লাভবান হয়েছে এটা আজ দিবালোকের মত পরিষ্কার। বিশ্বের দেশে দেশে সকল শ্রমজীবি মানুষের পাশাপাশি চীনা পার্টি ও চীনের জনগণকেও তার ফল ভোগ করতে হয়েছে, করতে হয়েছে সোভিয়েত জনগণকেও। এর ফলশ্রুতিতে বিংশ শতাব্দির শেষ তিনদশকে ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে পরাজিত করতে পারা ছাড়া বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের দৃশ্যমান সফলতা প্রায় নেই।
কিন্তু চীনের কমিউনিস্ট পার্টি তাঁদের দেশের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে কঠিন সংকট মোকাবিলা করেছে। ষাটের দশকের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ঢেউ, তার প্রেক্ষিতে গৃহীত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গৃহীত কৌশল ও তার প্রতিক্রিয়ার ফলে চীনের সমাজতন্ত্র বিনির্মানের ক্ষেত্রে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে চীনা পার্টি তার পর্যালোচনা করেছে। তারফলে আভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন হয়েছে তা দৃশ্যমান। পূর্বের সেই সকল গৃহীত কৌশলের ফলে শুধুমাত্র আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে নয়, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইএর ক্ষেত্রেও বিশ্বব্যাপী যে অসংগতি এবং বিপর্যয় হয়েছিল , তা আজ বাস্তবেও প্রমানিত। বিশ্বের অন্য অনেক দেশের কথা না বলেও এটা বলা যায়, বাংলাদেশে ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গৃহীত কৌশল যে সঠিক ছিল না সেটা আজ আর বিতর্কের বিষয় নয়।
সত্তরের দশকে চীনের পার্টির আত্ম-পর্যালোচনা, ঘুরে দাঁড়ানো এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় বর্তমান চীনকে দেখাটা জরুরি।
বিংশ শতাব্দির শেষ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পুঁজিবাদের নয়া-উদারনৈতিক আগ্রাসী কৌশল, তথাকথিত বিশ্বায়নের প্রভাব যখন বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের সামনে এক হতাশাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তখন নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চীনের জনগণের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতি, দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক স্বাস্থ্য কাঠামো উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বহু বিষয়ে চীনের দৃশ্যমান অগ্রগতি এক আশার আলো তৈরি করেছে এতে সন্দেহ নাই। মতাদর্শগত ভাবে যারা চীনের সমর্থক তাঁরা তো বটেই যারা তার চরম বিরোধী তাদেরকেও এই বাস্তব সত্য মানতে হচ্ছে। তাই চীনের কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ অতিক্রমের এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি ও চীনের জনগণকে বিপ্লবী শুভেচ্ছা জানাতেই হবে।
বিগত একশত বছর ধরে চীনের জনগণের সামনে এবং বিশ্ববাসীর কাছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গৃহীত সকল কৌশল ও পদক্ষেপ সমানভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে বা হবে তা নয়, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। আজ ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে তার অনেক কিছু পর্যালোচনা অপ্রাসঙ্গিক তো নয়ই অপরিহার্যও বটে। চীনের পার্টিও তা করছে এবং করবে –এটা এক চলমান প্রক্রিয়া। এমনকি চীনা পার্টির বর্তমান গৃহীত নীতি মার্ক্সবাদ সম্মত কিনা বা চীন আদতে সঠিক ধারায় সমাজতন্ত্র অভিমুখী দেশ কিনা এ প্রশ্ন উঠেছে এবং উঠছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গৃহীত নীতিতে মার্ক্সবাদ লেনিনবাদ, মাও জে দং এর চিন্তাকে তাঁদের মৌলিক মতাদর্শগত ভিত্তি বলা সত্বেও এ প্রশ্ন করা হচ্ছে। পুঁজিবাদী বিশ্বের সকল বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচার নিরন্তরভাবে বলছে, চীন আর সমাজতান্ত্রিক মতধারার অনুসারি নয়। আবার সাথে সাথে তাঁদের দৃষ্টিতে পুঁজিবাদী হওয়া সত্বেও তারা চীনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিরোধীতার কৌশল অব্যাহত রাখছে। বরং সোভিয়েত ইউনিয়ন থাকাকালীন ঠান্ডাযদ্ধের প্রাক্কালে পুঁজিবাদী বিশ্ব বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার যে কৌশল নিয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন বিলুপ্তির পর তাঁরা সেই বন্ধুত্বের কৌশল থেকে সরে এসে চীনকে ঘেরাওএর সর্বাত্মক নীতি গ্রহণ করেছে? কেন? এই উত্তরটা পাওয়া এবং বোঝা জরুরি। এর বাইরে যারা নিজেদেরকে মার্ক্সবাদী দাবী করেন এমনকি বামপন্থী হিসেবে দাবী করেন তাঁদের অনেকেই চীনের গৃহীত নীতিকে পুঁজিবাদী পথ মনে করেন। অনেকে চীনকে সাম্রাজ্যবাদী দেশ, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও বিপদজনক মনে করেন। এই বিতর্ক, মতদ্বৈধতা এবং বিভ্রান্তি রয়েছে, থাকবেও। বিগত একশ বছর ধরে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলন যত ইতিবাচক ও নেতিবাচক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে তাঁর ভিত্তিতে এটুকু বলা যায়, দ্রুত বা সরলরৈখিক কোন বিশ্লেষণ সঠিক তো নয়ই কাম্যও নয়। এটা আজ দিবালোকের মত স্পষ্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর পুঁজিবাদ বিশ্বব্যাপী সমাজতান্ত্রিক মতবাদের যে মৃত্যু ঘোষণা করেছিল, সেই পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বিংশ শতাব্দির শেষ দশকে এবং একবিংশ শতকের প্রথম দুই দশকে এক মেরু বিশ্বের বাস্তবতার মধ্যেও চীনের অর্থনীতির এবং সামাজিক উন্নয়নের যে বাস্তবচিত্র সামনে রয়েছে কারুর পক্ষেই তা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। চীনের পার্টির নেতৃত্বে চীনা জনগণ তাঁদের যে নিজস্ব ধরণের সমাজতান্ত্রিক বিনির্মান প্রক্রিয়ার পথে এগিয়ে চলেছে, সেই পথেই তাঁরা আজ স্বীকৃতভাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২০ সালের মধ্যে চীনের পিছিয়ে পড়া অতি দরিদ্র জনগণকে দারিদ্র সীমার উপরে তুলে নিয়ে আসার গৃহীত নীতি সফলতা অর্জন করা এক বিপুল সাফল্য। এটা জাতিসংঘ এমনকি আই এম এফ পর্যন্ত স্বীকার করেছে। বিশ্বের কাছে এটাকে উদাহরণ ও শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করার সুপারিশও করেছে। পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নেও চীন আজ প্রথম সারির দেশের অন্তর্ভূক্ত। মহাকাশ বিজ্ঞানে এতদিন যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ( বর্তমান রাশিয়া) এর ছিল একচেটিয়া সাফল্য ও অগ্রাধিকার, চীন সেখানেও তাঁদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। সাম্প্রতিককালে চাঁদের বিপরীত পৃষ্ঠে সফল অবতরণ, মঙ্গল গ্রহে নভোযান পাঠানো, নিজস্ব স্পেস ষ্টেশনে মানুষ পাঠানো, এগুলো তার প্রমান। তথ্য-প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চীন যে পশ্চিমা বিশ্বকে শুধু ধরে ফেলেছে তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে অতিক্রম করেছে। বিশ্বব্যাংক, আই এম এফের ভবিষ্যৎবাণী মতে ২০২৭ সালের মধ্যে চীন বিশ্বে এক নম্বর অর্থনীতি হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হবে।
চীনের এই ইতিবাচক অগ্রগতি সত্বেও চীনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী প্রচারণা রয়েছে এবং চীনের গৃহীত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উদ্যোগের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। হংকং এ চীনের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘন ও বিরোধীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ উত্থাপিত করা হয়। উইঘুরে মুসলিম সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সম্পর্কে গৃহীত নীতিকে মানবাধিকার লংঘন হিসেবে চিত্রিত করা হয়। চীনা পার্টি এবং চীন সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং সে ব্যাপারে দৃশ্যমান উদ্যোগও রয়েছে। কিন্তু পুঁজিবাদী বিশ্ব এই অজুহাতে অর্থনৈতিক অবরোধ, বাণিজ্যিক যুদ্ধের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। চীনের গৃহীত বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা নিউ সিল্ক রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকে ঋণের ফাঁদে ফেলার কৌশল হিসেবে চিত্রিত করার প্রচারণা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এই প্রচারণা কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। আসলে এটা আর খুব অস্পষ্ট নয় যে, এই সব প্রচারণার আসল উদ্দেশ্য দক্ষিণ চীন সমুদ্রসহ এশিয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্রদের প্রভাব অব্যাহত রাখার যে রণনৈতিক কৌশল রয়েছে সেটা অক্ষুণ্ণ রাখা। দক্ষিণ এশিয় এলাকায় মার্কিন উদ্যোগে গৃহীত ‘কোয়াড” গঠনও এর থেকে আলাদা কিছু নয়। এরই অংশবিশেষ। এটা আসলে ‘চীন ঘেরাও’ নীতিরই প্রতিফলন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যেই চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যতই ট্রাম্প বিরোধী হন কার্যতঃ এ ব্যাপারে তাঁর নীতি আলাদা নয়।
বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারি বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে এক ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। এটা ঠিক করোনা সংক্রমন শুরু হয় চীনের উহান প্রদেশ থেকে। চীন দ্রুততার সঙ্গে তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য দেশকে অবগত করেছে এবং ভাইরাসের ‘জেনেটিক সিকোয়েন্সিং’ থেকে শুরু করে ভ্যাক্সিন তৈরির ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু পশ্চিমা দেশ অবিরত চীনকে দোষারোপ করেছে এই বলে যে এ ভাইরাস চীনের কোন গবেষোণাগার থেকে সংক্রমিত হয়েছে। এক্ষেত্রেও চীনকে কোনঠাসা করার উদ্দেশ্যই স্পষ্ট। চীনের পার্টি ও সরকারকে প্রতিমুহূর্তে এ বিষয়ে সজাগ থাকতেই হবে। চীনের পার্টি ও সরকার ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক অভিমুখী দেশ দৃশ্যতঃ করোনা প্রতিরোধে নিজেদের দেশে যেমন দ্রুততার সঙ্গে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও তাঁদের ভূমিকা ইতিবাচক। ভ্যাক্সিন নিয়ে বৈশ্বিক রাজনীতির বলয়ে এই উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতীয় ও বৈশ্বিক এই বাস্তব প্রেক্ষাপটে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি শতবছরের অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে নিজেদের সমাজতন্ত্রমুখী উন্নয়ন যেমন এগিয়ে নেবে, তেমনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে তাঁর মুল্যবান ভূমিকাও অব্যাহত রাখবে –এটাই কাম্য। ১ জুলাই, ২০২১।
লেখক : অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত), শা বি প্র বি, পলিটব্যুরো সদস্য, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি