নতুন কথা প্রতিবেদন:সড়কের শৃঙ্খলা কিভাবে ফেরাতে হয় তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল কিশোর আন্দোলন। সেই আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে সংসদে পাস করা হয় নিরাপদ সড়ক আইন-২০১৮। গত বছরের নভেম্বরে তা কার্যকর করা হলেও এখনো তার প্রয়োগ লক্ষ করা যায় না। বরং অনেকটা চাপে আছে সরকার কর্তৃক কার্যকর করা ওই আইন। বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, বাড়ছে লাশের মিছিল। গাড়ীর বেপরোয়া চলাচল এখনো বন্ধ হয় নি। দূর হয় নি পরিবহন খাতের নৈরাজ্য। আজো নিরাপদ হয় নি যাত্রী, চালক ও পথচারীর জীবন। ফেরে নি সড়কের শৃঙ্খলা। এরই মধ্যদিয়ে ২২ অক্টোবর পালিত হলো ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’।
‘মুজিব বর্ষের শপথ, সড়ক করব নিরাপদ’-এই প্রতিপাদ্যে পালিত সড়ক দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালকরা মাদক সেবন করে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ‘ডোপ’ টেস্টের নিদের্শনা দিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনও পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো সড়কে শৃঙ্খলা ফেরে নি। বরং সড়কেও বিশৃঙ্খলা আরো বেড়েছে। সড়কে গাড়ি বেড়েছে কিন্তু চালক বাড়ে নি। উল্টো গাড়ি বাড়ার সাথে সাথে বৈধ চালকের সংখ্যা কমেছে। আর এ ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআরটিএ) প্রতিষ্ঠার পর থেকেই।
বিআরটিএ’র যাত্রা শুরু ১৯৮৭ সালে। তখন যানবাহন ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার। চালক ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার। অর্থাৎ গাড়ীর চেয়ে চালক বেশি ছিল ১৫ হাজার। কিন্তু গত ৩৩ বছরে নিবন্ধতি গাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫ লাখের ওপরে। কিন্তু চালকের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৫ হাজার। যানবাহনের তুলনায় চালকের সংখ্যা কম আছে ১৮ লাখ। এছাড়া নিবন্ধন ছাড়া গাড়ির সংখ্যা তো আছেই। এর ফলে পরিবহনে শ্রমিকদের কর্মঘন্টা মানা হচ্ছে না। একজন শ্রমিক বেশি টাকার আশায় বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালিয়েই যাচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনা। শ্রম আইন অনুযায়ী একজন চালক একটানা সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টা এবং সারা দিনে ৮ ঘন্টা গাড়ি চালাতে পারবেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে চালকদের কর্মঘন্টা মানার বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং বিশ্রামাগার নির্মাণের নির্দেশনা দেন। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিল পরিবহন মালিকদের। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না।
গত ৫ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ১৭০ জন। আর আহত হয়েছেন ৮২ হাজার ৭৫৮ জন। মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তারপরেও সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিআরটিএ’র জনবল কাঠামো সঙ্কটের কারণে চালকের লাইসেন্স দিতে সময় লাগছে। অন্যদিকে তরিঘড়ি করে পরীক্ষা নিয়ে লাইসেন্স দিতে হয়। কারণ একজন মোটরযান পরিচালক চালকের পরীক্ষা নিতে খুবই কম সময় পান। অন্যদিকে চাপ থাকে পরিবহন শ্রমিক মালিক সমিতির নেতাদের চাপ।
এছাড়া বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহন নেতারা আন্দোলন ডেকে সড়ক অচল করার হুমকি দেয়। এই ভয়ে নতুন সড়ক আইন পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না। ফিরছে না সড়কের শৃঙ্খলা। বন্ধ হচ্ছে নিহত ও আহতের মিছিল। নিরাপদ সড়ক দিবসে তাই সকলের প্রত্যাশা প্রতিপাদ্যের দিকে খেয়াল রেখে সরকার অবশ্যই সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সকল প্রকার চাপ ও আন্দোলনের ভয় উপেক্ষা করে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং মৃত্যুর মিছিল থামাতে আরো কঠোর হতে হবে-এমন প্রত্যাশা যাত্রী, পথচারী ও সাধারণ মানুষের।