মঙ্গলবার,১৮,নভেম্বর,২০২৫
23 C
Dhaka
মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৫
প্রচ্ছদরাজনীতিজামাতের ভয় কিসে?

জামাতের ভয় কিসে?

অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সমঝোতার চেষ্টা চললেও, অভ্যুত্থানে যুক্ত তিন প্রধান শক্তি—বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির মধ্যে দূরত্ব কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং সময় যত গড়াচ্ছে, বিভেদ আরও প্রকট হচ্ছে। প্রস্তাবের জায়গা এখন চলে গেছে শর্তে, এবং এসব শর্তে কোনো পক্ষই নমনীয় নয়।

অপরদিকে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল সমঝোতার তাগিদ দিলেও ঐকমত্য কমিশনের নিয়মিত অনানুষ্ঠানিক বৈঠকগুলো থেকেও ফলপ্রসূ কোনো সিদ্ধান্ত আসছে না। বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে—তারা পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির পক্ষে নয়। এমনকি উচ্চকক্ষ নিয়েও তাদের আপত্তি রয়েছে। একই সুর জামায়াত ও এনসিপিরও—তারা বলছে, পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব নয়। গণভোট ও জুলাই সনদের আইনি বৈধতা নিয়েও তিন পক্ষের অবস্থান ভিন্ন।

বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে একটি গভীর শঙ্কা কাজ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অভ্যুত্থানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে জামায়াত। প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে তাদের প্রভাব বেড়েছে। অন্তত ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-সমর্থিত উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছেন। কেবিনেট সেক্রেটারি থেকে মাঠ প্রশাসন—সবখানেই তাদের সমর্থকদের অবস্থান। তারা আশঙ্কা করছে—এই মুহূর্তে যদি নির্বাচন হয়, বিএনপি বিপুল আসনে জয়লাভ করতে পারে। তখন তাদের অর্জিত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে। সেই কারণেই জামায়াত এখন নির্বাচন ঠেকাতে প্রতিনিয়ত নতুন শর্ত দিচ্ছে, যা বিএনপির পক্ষে মানা সম্ভব নয়।

বিষয়টি আরও জটিল করছে একটি অদৃশ্য শক্তি, যারা দুই পক্ষকেই অনড় থাকার নির্দেশ দিচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে—এর পেছনে কি কোনো বড় ধরনের ‘গেইম প্ল্যান’ কাজ করছে?

এদিকে, জামায়াতের নজর এখন ডাকসু নির্বাচনের দিকে। বিভিন্ন কৌশলে সেখানে বিনিয়োগ করছে তারা। অন্যদিকে, এনসিপির সমস্যা ভিন্নধরনের। দলটি এখনও সংগঠিত নয়, এমনকি নিবন্ধনও পায়নি। দলীয় প্রধান নাহিদ ইসলাম ইতোমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না-ও হতে পারে। দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, উপদেষ্টাদের পদত্যাগ—সব মিলিয়ে এনসিপিও নির্বাচনের ব্যাপারে অনাগ্রহী।

সব মিলিয়ে অভ্যুত্থানে যুক্ত তিন শক্তির দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ এক নতুন রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। বিএনপির জন্য নির্বাচন একমাত্র পথ হলেও, এই পথ সহজ নয়। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন—নির্বাচন না হলে শুধু বিএনপি নয়, জামায়াত ও এনসিপিও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অভ্যুত্থানের চেতনা বিলীন হয়ে যেতে পারে হিংসা ও অনিশ্চয়তায়। জনগণের হতাশা থেকে উগ্রবাদের উত্থান কিংবা গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশ এখন এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক যাত্রাপথে। সামনে কী আছে, তা নিয়ে জনগণ উদ্বিগ্ন।

সর্বশেষ