Sunday,8,December,2024
17 C
Dhaka
Sunday, December 8, 2024
Homeজাতীয়জামিল ব্রিগেডঃ কোভিডে রাজশাহীবাসির একমাত্র ভরসা, পূর্ণ করল ২ মাস

জামিল ব্রিগেডঃ কোভিডে রাজশাহীবাসির একমাত্র ভরসা, পূর্ণ করল ২ মাস

রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহীতে মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়ায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে গত ৫ জুন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বাধীন প্রথমে ৫০ এবং পরবর্তীতে ৩০০ জন তরুণ-যুবকদের সমন্বয়ে গঠন করা হয় শহীদ জামিল ব্রিগেড। রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ও ব্রিগেডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফজলে হোসেন বাদশার উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দুই মাস পার হলেও একইভাবে একটি ফোন পেলেই বিনামূল্যে রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন-অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হচ্ছে লাল গেঞ্জি পরিহিত একদল ব্রিগেড বাহিনী।

দুই মাস ধরে শহরে ঝড়-বৃষ্টি এবং মধ্যরাতের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তারা দিয়ে চলেছেন এই মানবিক সেবা। মানবপ্রেমী এ উদ্যোগ এখন প্রশংসীত হচ্ছে সর্বমহলে।

রাজশাহী নগরীর হাদির মোড়ের বাসিন্দা গৃহিণী ফাতেমা আক্তার। কোন সন্তান না থাকায় স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলেই তাদের সংসার। গত মাসের শেষের দিকে তার শ্বাসকষ্ট আর কাশি দেখা দেয়। রামেক হাসপাতালে শয্যা সংকটের খবর শুনে সিদ্ধান্ত নেন বাড়িতেই চিকিৎসা গ্রহণের। সংগ্রহে রাখেন একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারও। তবে হঠাৎ করেই গত ৪ জুন শ্বাসকষ্ট তীব্র হওয়ায় মেপে দেখেন; অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। তখনই শুরু হয় ছুটাছুটি। এমন পরিস্থিতিতে মুহুর্তেই উদ্বীগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র সদস্য তার স্বামী আফজাল হোসেন।

প্রতিবেদককে মুঠোফোনে এভাবেই সেদিনের পরিস্থিতি বর্ণনা করছিলেন তিনি। তিনি জানান, অক্সিজেন মাস্ক পড়ার পরও যখন তার স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছিল; তিনি সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার। কিন্তু চলমান বিধিনিষেধের কারণে বাড়ির সামনে কোন যানবহন না পেয়ে আবার ফেরত আসেন বাড়িতে।

আফজাল আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমার বাড়ির ঠিক সামনের বাড়ির এক কলেজপড়ুয়া ছোটভাইকে ফোন দেই। বিষয়টি তাকে জানাতেই সে আমাকে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে জানায়- এতে ফোন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে কথা বলতে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ফোন দেই। কল রিসিভের পর জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে জানালে ওপার থেকে বলা হল- ‘আপনি হাসপাতাল যাওয়ার প্রস্তুতি নিন, আমরা আসছি।’

তিনি বলেন, ‘ফোন করার প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একদল স্বেচ্ছাসেবী বাড়ির সামনে হাজির। আমার স্ত্রীর করোনার লক্ষণ ও শ্বাসকষ্ট থাকায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিতে প্রতিবেশীরা কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। সেসময় জামিল ব্রিগেডের সদস্যরা একদিকে যেমন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে এসেছে, অন্যদিকে তারাই বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে কোন সংকচ ছাড়াই। এর জন্য তাদের একটি টাকাও দিতে হয়নি।’

‘এখন আমার স্ত্রী সুস্থ আছেন; কিন্তু সেদিন তারা ছুটে না আসলে হয়তো তাকে বাঁচাতে পারতাম না। প্রকৃতপক্ষেই জামিল ব্রিগেডের স্বেচ্ছাসেবকরা মানবতার স্বার্থে কাজ করে চলেছে’- যোগ করেন তিনি।

এদিকে সম্প্রতি জেলার গ্রাম পর্যায়ে ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে গেলে ব্রিগেডের সেবা প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত (১৫ জুলাই) গ্রামের মানুষের জন্য বিনামূল্যে আরও একটি অ্যাম্বুলেন্সের উদ্বোধন করেন ব্রিগেড কর্তৃপক্ষ। সাথে যুক্ত করা হয় ফ্রি অক্সিজেন সেবাও। এখন প্রায় প্রতিদিন রাজশাহী নগর ও জেলায় অক্সিজেন-অ্যাম্বুলেন্স সেবা এবং বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে শহীদ জামিল ব্রিগেড।

ব্রিগেডের সকল কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকি করছেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ব্রিগেডের প্রধান সমন্বয়ক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু। জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল এই সংকটকালে যেভাবেই হোক মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের সাধ্যমতো আমরা সেই চেষ্টা চালচ্ছি। গত দুই মাস ধরে ব্রিগেডের ৫০ জনেরও বেশি সদস্যরা তাদের জীবন বাজি রেখে মানুষকে সেবা দিচ্ছে।’

শহীদ জামিল ব্রিগেডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ! শহর ছাড়িয়ে গ্রাম অঞ্চলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শয্যা সংকট। রোগীদের চিকিৎসা প্রদান একটি দুরহ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পক্ষে এই দায়িত্ব এককভাবে পালন করা অনেক কঠিন। আমরা যারা রাজনীতি করি, বাংলাদেশকে ভালোবাসি; আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- সরকারের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে জনগণের সেবা এবং মানবিক দায়িত্ব পালন করা। সে কারণেই আমরা জামিল ব্রিগেড গঠন করেছি।’

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘জামিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির হাতে শহীদ একজন আমাদের সহকর্মির নাম। একটি শহীদের নাম মনে রাখা, মুক্তিযুদ্ধের চেনতাকে সমুন্নত রাখা; অন্যদিকে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। আমরা রাজশাহী শহরে দুইটি এবং জেলার গ্রাম অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি- মোট তিনটি অ্যাম্বুলেন্সসহ সেবা এবং অক্সিজেন দেয়ার জন্য সর্বাত্মক দায়িত্ব পালন করছি। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতিশ্রতি, জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা।’

সর্বশেষ