(১৪ মে তিস্তা কনভেনশনে ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’- কর্তৃক উত্থাপিত মূলপত্রটি ঈষৎ সংশোধন করে নতুন কথা’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।)
বন্যা আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত লাখ লাখ মানুষের দীর্ঘশ্বাসে তিস্তাপাড়ের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে। অগণিত মানুষের কান্নার সুর ভেসে বেড়ায় তিস্তা পাড়ে। এই ক্ষতির কারণ যতখানি না প্রাকৃতিক তার চেয়ে ঢের বেশি মনুষ্য সৃষ্ট। সরকার পরম্পরায় এ দায় কেউ এড়াতে পারে না। তিস্তার দুঃখ লাঘবে সরকারের নীরবতা দেখে আমরা ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করেছি। সকল স্তরের পেশাজীবী-শ্রমজীবী এই সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে অসংখ্য কর্মসূচি সফল করেছে। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ২০১৫ সালে রংপুর টাউন হল মাঠে কনভেনশন করে তিস্তার দুইপাড়ে প্রায় ২৩০ কিলোমিটার মানববন্ধন করেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত দীর্ঘ মানববন্ধন হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। তিস্তাপাড়ে স্তব্ধ কর্মসূচি পালন করেছি। দুই পাড়ের ১২টি উপজেলা এবং জেলায় জেলায় মানববন্ধন করেছি। তিস্তায় ক্ষতিগ্রস্ত জনপদে কয়েকশ জনসভা করেছি। তিস্তা রক্ষার দাবিতে লক্ষাধিক মানুষের স্বাক্ষর প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরণের কর্মসূচিও পালন করেছি। ১৪ মে ২০২২ তিস্তা কনভেনশনে মিলিত হয়েছি।
তিস্তা বাংলাদেশ-ভারত আন্তঃসীমান্তীয় নদী। ১৭৮৭ সালের মহাপ্লাবনে এ নদীর বর্তমান প্রবাহের সৃষ্টি। ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর বাংলাদেশ অংশে প্রবাহ ১১৫ কিলোমিটার। বর্তমানে কোথাও কোথাও এ নদীর প্রস্থ ১০-১২ কিলোমিটার। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত নদী আইনে ভারত তিস্তা নদীর বিষয়ে একতরফা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারপরও ওই বছর থেকে ভারত এ নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করছে। তিস্তা কেবল একটি নদীর প্রবাহ নয়। এ নদীর সাথে জড়িয়ে আছে রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলার কোটি মানুষের প্রত্যক্ষ নির্ভরতা। ২৩৫ বছর বয়সী নদী তিস্তার জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো পরিচর্যাই করা হয় নি। নদীটি এমনিতই পাগলী নদী হিসেবে পরিচিত। তার ওপর বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করার কারণে এ নদী আরো খ্যাপাটে হয়ে উঠেছে। ফলে নদীটি অসময়ে বন্যা আর ভাঙনে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। চরাঞ্চলের মূল্যবান কৃষি প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিস্তাকে বলা হয় উত্তরের জীবনরেখা। এই জীবনরেখার আজ মরণদশা। আশীর্বাদ তিস্তা তাই অভিশাপ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর গড়ে অন্তত ৫০ হাজার বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়। লাখ লাখ হেক্টর জমির ফসল ডুবে যায়। লাখ লাখ মানুষ তিস্তার ভাঙনে স্বর্বস্ব হারিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। আগের দিন যে ছিল অনেক জমির মালিক পর দিনই সে-ই হয়ে উঠছে ভূমিহীন, কপর্দকশূন্য। ভাঙনে নিঃস্ব লাখ লাখ মানুষের জীবন আজ বিপন্ন। তিস্তার বুকে এখন বাদাম, কুমড়া, আলু, মরিচ, পিঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, ডাল, ধানসহ অনেক ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়। কিন্তু অকস্মাৎ বন্যায় প্রায়ই কৃষকেরা ফসল ঘরে তুলতে পারেন না। গত বছর কয়েক দফায় এবং এবছরও ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এনজিও কিংবা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আসহায় কৃষক ফসল ফলায়। সেই ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের জীবনে নেমে আসে নিদারুণ কষ্ট। অনেকেই মহাজন কিংবা বেসরকারি সংস্থা থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে ঢাকায় গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। বৈশি^ক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের চরম ঝূঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। উপকূলীয় জেলাগুলোতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে আগামী ত্রিশ বছরের মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ উদ্বাস্তু হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমাদের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। এর অংশ হিসেবেও তিস্তা সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই। কারণ তিস্তার পানি ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-পদ্মা-মেঘনা হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়। তিস্তার পানি প্রবাহ কমে গেলে উজান থেকে সমুদ্রে পানির চাপ কমে যায়। তখন দ্রুতই লবণাক্ত পানি উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঢুকে পড়ে। তিস্তাপারের মানুষ তিস্তার অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে অবশ্যই তিস্তাকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে পরিচর্যা করতে হবে। দুই তীর সংরক্ষণ এবং নদীর গভীরতা সৃষ্টি করতে হবে। তিস্তার তলদেশ কোথাও কোথাও সমতলের চেয়েও উঁচু হয়েছে। ফলে সামান্য পানিতে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। এ নদীর সব শাখা নদীকে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরে ফেলেছে। এর উপনদীগুলোর অবস্থাও ভালো নেই। মাঝে মাঝে তিস্তা নদীকে ঘিরে ছোট ছোট সান্ত¡নামূলক কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। নদী পাড়ের সাধারণ মানুষের ভাষ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ পানিতেই ভেসে যায়। রংপুর বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব বিভাগ। সারাদেশে যখন গড় দারিদ্র্য ২০ শতাংশ তখন রংপুর বিভাগের গড় দারিদ্র্য প্রায় ৪৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষণা অনুযায়ী দারিদ্র্যের হার কুড়িগ্রামে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ, গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ, রংপুরে ৪৩ শতাংশ, লালমনিরহাটে ৪২ শতাংশ। ২০১১ সালের চেয়ে বর্তমানে এসব জেলায় গড় দারিদ্র্য বেড়েছে। এককথায় সারাদেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। রংপুরে অতি দারিদ্র্যের প্রধান কারণ তিস্তার ভাঙন। তিস্তার ভাঙন আর বন্যা রোধ করা না গেলে রংপুর অঞ্চলের দারিদ্র্য দূর হবে না। বাংলাদেশে বর্তমানে ১০টি মেগাপ্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে একটিও নেই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি তিস্তাকে ঘিরেই মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা হোক। সাংবিধানিকভাবে দেশের অনগ্রসর জনপদ বিশেষ সুবিধা লাভ করার কথা। সেটি বিবেচনা করলে রংপুরে সবার আগে মেগাপ্রকল্প হওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে মেগাপ্রকল্পগুলোতে তিন লাখ কোটি টাকার কাজ চলছে। সমতাভিত্তিক মেগাপ্রকল্প গ্রহণ করা হলে রংপুরে দুই কোটি মানুষের জন্য অন্তত ৩৭ হাজার কোটি টাকার ন্যূনতম একটি বা একাধিক মেগাপ্রকল্প থাকার কথা ছিল। সেটি হয় নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোনো কোনো বছর রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের জন্য মাত্র .৫ (এক শতাংশের অর্ধেক) টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বৈষম্য দূরীকরণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু বৈষম্য দূরীকরণের লড়াই করে গেছেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে তিস্তা নদী সুরক্ষায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এই টাকা ব্যয়ে তিস্তার ভাঙন এবং বন্যা রোধ করা গেলে বাড়তি উৎপাদন ছাড়াই প্রতিবছর সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার চেয়ে বেশি অর্থমূল্যের সম্পদ রক্ষা পাবে। সেজন্য তিস্তাকে ঘিরে যেকোনো বিজ্ঞানসম্মত মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য হতে পারে সবচেয়ে বেশি লাভজনক। ঋণ করে হোক অথবা নিজস্ব অর্থায়নে হোক তিস্তা সুরক্ষার কাজ এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে আমাদের দাবি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তিস্তা নদীর স্থায়ী সুরক্ষা হবে। ভাঙন যাবে জাদুঘরে। এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে নদী কেন্দ্রীক আধুনিক কৃষি, মৎস্য চাষ, পর্যটন, নৌ যোগাযোগ ও কৃষিভিত্তিক কলকারখানা। বর্তমান বিশ্ব প্রকৌশল-প্রযুক্তি বিদ্যায় অনেক এগিয়েছে। নদী সুরক্ষায় বিশ^জুড়ে প্রযুক্তি এখন অনেক সমৃদ্ধ। তিস্তা সুরক্ষায় দেশীয় সক্ষমতা উপযুক্ত নয় বলে আমরা মনে করি। এজন্য বিশে^ যারা নদী সুরক্ষায় সবচেয়ে দক্ষ-অভিজ্ঞ তাদের মেধা আর প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে। এ নদী প্রতি বছর ভয়াবহ পরিমাণ পলি বহন করে। ফলে এই পলি যাতে ভাটিতে নেমে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। যেহেতু তিস্তার ভাঙনে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ ক্ষতির মধ্যে পড়ে তাই আমরা চাই ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তুত করা হবে সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা সুরক্ষায় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক। তিস্তা সুরক্ষায় যত কালক্ষেপণ করা হবে ততই ক্ষতির পরিমাণ জ্যামিতিক হারে বাড়তে থাকবে। ২০২১ সালে ২০ অক্টোবর অসময়ে স্মরণকালের বন্যা হয়েছে। এত অকস্মাৎ বন্যা তিস্তাপারের প্রবীণরাও দেখেন নি। চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকেই বন্যা দেখা দিয়েছে। তিস্তায় ফেব্রুয়ারিতে ফসল ডুবে যাওয়ার নজিরও নেই। তিস্তা এখন খুবই অকল্পনীয় আচরণ করছে। এর কারণ তিস্তার কোনো পরিচর্যা না করা। তিস্তার ক্ষতি বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার আবশ্যকতা নেই। শুধু নদীপারে গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে আলাপ করলেই বোঝা যাবে এর চরম ভয়াবহতা। তিস্তার ভাঙনে দিশাহারা জনগণের মধ্যে অনেক সংকট দেখা যায়। তিস্তার চরে বাল্য বিয়ে ছাড়া কোনো বিয়ে নেই বললেই চলে। অভাবে-অনটনে তিস্তা পাড়ে শিক্ষার হার অনেক কম। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হারও তিস্তা পাড়ে বেশি। তিস্তাজনিত সমস্যা আর্থিক-সামাজিক-মানবিক। বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা পরিচর্যা করা গেলে সারাবছর তিস্তায় পানি থাকবে। তিস্তা নদীতে পানি না থাকলে নদী অববাহিকায় শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। যা পরিবেশের উপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আমরা মনে করি। এক সময় রংপুর বিভাগসহ গোটা দেশে ভূ-উপোরস্থ পানি দিয়েই সেচের কাজ সম্পন্ন হতো। এখন সেচসহ নানা কাজে ভ-ূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়ে গেছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিবছর ১ ফুট নিচে নেমে যাচ্ছে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নদী সুরক্ষায় নদী ব্যবস্থাপনা ও ভূ-উপোরস্থ পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা দেশের জন্য অনুরণীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে। তিস্তা নদী, তিস্তা পারের জীবন ও তিস্তানির্ভর কৃষি সমুন্নত রাখার স্বার্থে আমরা ৬দফা দাবিতে আন্দোলন করছি। এই আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি তিস্তাকে ঘিরে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই। আমরা সেই মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। বাঙালি জাতির মহান স্থপতি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসুরী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নদী রক্ষায় বারবার অনুশাসন দিয়েছেন। তার হাত ধরে আমরা এবছরই তিস্তা মহাপরিকল্পনার বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমাদের ঘোষিত ৬দফা Ñ ১. তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মতভাবে ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ।
২. তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ-শাখাগুলোর সঙ্গে নদীর পূর্বেকার সংযোগ স্থাপন ও নৌ চলাচল পুনরায় চালু।
৩. ভূমিদস্যুদের হাত থেকে অবৈধভাবে দখলকৃত তিস্তাসহ তিস্তার শাখা-প্রশাখা দখলমুক্ত করা। নদীর বুকে ও তীরে গড়ে ওঠা সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. তিস্তা ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থসংরক্ষণ। নদী ভাঙনের শিকার ভূমিহীন, গৃহহীন ও মৎস্যজীবীসহ নদী ভাঙনে উদ্বাস্ত মানুষের পুনর্বাসন। ৫. তিস্তা মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় ‘কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা’।
৬. মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। এই তিস্তা কনভেনশন-এর মাধ্যমে আমরা সরকারকে জানান দিতে চাইÑতিস্তা সুরক্ষার আন্দোলন গণমানুষের। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকেছে। তিস্তা সুরক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা নাহলে আমরা আরো বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলব। তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় দুটি পদ্ধতি আছে। দেশীয় এবং আন্তঃদেশীয়। বাংলাদেশের অংশে যেমন নিজেদের পরিচর্যার দায়িত্ব আছে তেমনি অভিন্ন নদী হিসেবে অভিন্ন ব্যবস্থাপনাতেও কাজ করতে হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না ভারত থেকে তিস্তায় ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে পানি পাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তিস্তা মহাপরিকল্পনা তিস্তা চুক্তির বিকল্প নয়। একটি অপরটি সাথে পরিপূরক। খরাকালে তিস্তার জীবন ধারা বাঁচিয়ে রাখতে অববাহিকা ভিত্তিক নদী ব্যবস্থাপনা ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের পেতেই হবে। কিন্তু চুক্তির অপেক্ষায় দেশীয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা খনন ও সুরক্ষার কাজ বন্ধ রাখা চলবে না। তিস্তা আন্দোলনের ৬দফা বাস্তবায়িত হলে কমে আসবে রংপুর বিভাগের ৫জেলার চিরায়ত বৈষম্য, দারিদ্রের হার, ঘটবে বিকেন্দ্রীকরণ, কমবে ঢাকার ওপর মানুষের অসহনীয় চাপ। তিস্তা মহাপরিকল্পনা ঘিরে রংপুর বিভাগে বাড়বে বিনিয়োগ। এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে নানা অর্থনৈতিক জোন। বাড়বে কর্মসংস্থান। তিস্তা নদীর সঙ্গে জড়িত নদ-নদী, তিস্তার শাখা-প্রশাখা ফিরে পাবে তাদের হারানো প্রবাহমান জীবন। পুনরুদ্ধার হবে নৌ-পথ, জাগবে প্রাণ-প্রকৃতি, রক্ষা পাবে জীববৈচিত্র্য। জয় হোক রংপুর বিভাগরে মানুষের। নিশ্চিত হোক সুষম উন্নয়ন।