বাজারের আগুন নিভবে কবে???
নতুন কথা প্রতিবেদন ॥ গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে কড়া সমালোচনা, রাস্তায় প্রতিবাদী মিছিল সমাবেশ, কর্তাব্যক্তিদের কড়া হুশিয়ারি-কোনোকিছুই রুখতে পারছে না দেশের বাজার সিন্ডিকেটকে। বরং দিন যতো যাচ্ছে, তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। নিত্যপণ্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতিতে বাজারে আগুন লেগেছে বেশ আগ থেকেই। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি সে আগুনে তুষ ঢেলেছে। ফলে দাউ দাউ করে বাজার জ¦লছে মূল্যবৃদ্ধির আগুনে। শহর থেকে গ্রাম-সেই আগুনে দিনআনি কিংবা নিম্ন আয়ের মানুষ তো দূরের কথা, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাও দিশেহারা পড়েছেন। সংসার চালানোর চাপে নাভিশ্বাস ওঠা সাধারণের তাই দীর্ঘশ^াসে একটাই উচ্চারণ-“বাঁচার কি কোনো উপায় নেই!”
চলতি বছরের শুরু থেকেই লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার। পেঁয়াজের ঝাঁজে গৃহিনীর চোখ নয়, জ¦লেছে পরিবারের কর্তার পকেট। কাঁচা মরিচের ঝাঁজও কম ছিল না। তেলের তেলেসমাতিতে তো ক্রেতারা অবাক। হু হু করে দাম বেড়েছে। সবজি বাজারে কোনো সবজি ৫০ টাকা কেজির নিচে ছিল না। চাল ব্যবসায়ীদের চালে দাম বাড়তে থাকে লাফিয়ে লাফিয়ে। এছাড়া মাছ-মাংস-ডিম সহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চাপে চিড়ে চ্যাপ্টা হচ্ছিলেন খোদ মধ্যবিত্তরা। কর্মহীন কিংবা নিম্ন আয়ের মানুষের অবস্থা ছিল ত্রাহি ত্রাহি। বাজারের অস্থিরতা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা না দেখে সাধারণ মানুষ ধরেই নিয়েছিল-এভাবেই মানিয়ে নিতে হবে। কোনো লাভ নেই। ফলে উপায়হীন তাই মেনে নিয়ে জীবনযুদ্ধের নতুন পথ খুঁজতে সংসার ব্যয়ে কাটছাট করে কোনো রকমে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে বাজারে আবার আগুন লেগেছে। আবার বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজিতে দাম বেড়েছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। তার আগের সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে তা বিক্রি হয় ৭০-৮০ টাকায়। বিদেশি পেঁয়াজও কেজিতে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। দাম বেড়েছে সয়াবিন তেলের। কোম্পানিভেদে আগের ১৪৫-১৫০ টাকা লিটারের সয়াবিন গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে লিটার প্রতি ১৬০-১৬৫ টাকায়। আর ৬৬০ থেকে-৬৭০ টাকার ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হয়েছে ৭৩০-৭৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অজুহাত-দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যাওয়া এবং বিদেশি পেঁয়াজের আমিদানি কমে যাওয়ায় আবারো কমেছে। অন্য দিকে ভোজ্য তেল বিক্রেতারা বলছেন, ডিসকাউন্ট কমে যাওয়ায় নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না ভোজ্য তেল। তাই দাম বেড়েছে। কিন্তু বাজারে তো শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। তাহলে সবজির দাম বাড়ছে কেন। এক্ষেত্রেও তাদের খাড়া অজুহাত পরিবহন খরচ বেশি এবং সবজির সরবরাহ কম। তাই বাড়ছে সবজির দাম। বাজারে কেবল শিম ও কাঁচামরিচের দাম কমেছে। তাছাড়া সকল সবজির দাম অপরিবর্তীত বা বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে আলু ও রসুনের দাম। মাংস ও ডিমের দাম বেশি হলেও তার মূল্য অপরিবর্তনীয় আছে। বেড়েছে সবরকম মাছের দাম। এখানে সরবরাহের স্বল্পতা ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধির অজুহাত। অর্থাৎ বাজারে যাই কিনতে যাওয়া হোক না কেন তার দাম ক্রমাগত বাড়ছে। বাজার দেখার জন্য বাজার মনিটরিং কমিটি আছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় বার বার বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের কড়া হুশিয়ারি দিচ্ছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চলছে ‘ডোন্ট কেয়ার’ গতিতে। ফলে কোনোভাবেই বাজারের আগুন নিভছে না। তাই তো বাজারে যাওয়া ক্রেতারা নিত্যপণ্যের দাম শুনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, “আর হবে না, বাজারের আগুনও নিভবে না, আমাদের পকেট পোড়াও বন্ধ হবে না!” তাদের আর্তি-“বাঁচার কি কোনো উপায় নেই।”
অন্যদিকে বাজারের তাপ সইতে না পেরে মানুষ ছুটছেন সরকারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাকের দিকে। সেখানেও মানুষের ভীড় কমছে না। কেবল নিম্ন আয়ের মানুষ’ই নয়, ভিড় করছেন মধ্যবিত্তরাও। রয়েছে স্থানীয় নেতাদের হানা। ফলে লম্বা সারিতে ঘন্টা পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে মানুষ হতাশ হয়ে ফিরছেন সেখান থেকেও। দিশেহারা মানুষ যাবে কোথায়!