Saturday,7,December,2024
23 C
Dhaka
Saturday, December 7, 2024
Homeজাতীয়নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি

নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এর অন্যতম প্রভাব

নতুন কথা প্রতিবেদন ॥ করোনায় কর্মহীন, বেকার আর আয় কমা মানুষের খরচ সামলানো ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে হু হু করে। বড় ভোগান্তিতে পড়েছে অনেক পরিবার। এতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে মূল্যস্ফীতি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পণ্য ও সেবা খাতে ব্যয় বেড়ে গেছে। যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। গত এক বছরে নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারি হিসাবে চালে দাম বেড়েছে ৭৯ শতাংশ। খোলা আটায় ২৪ দশমিক ১৪ শতাংশ, খোলা ময়দায় ৩৭ দশমিক ৬৮, সয়াবিনে ২৮ দশমিক ১১, পাম অয়েলে ৩৮ শতাংশ এবং মসুর ডালে দাম বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২৬ শতাংশ।
জানাগেছে, করোনার কারণে সাধারণ মানুষের আয় কমেছে। আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে সংসারের নিত্যপণ্যের বাজারে। ১৫ হাজার টাকা মাসে আয় করা মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সবার জন্য ডাল-ভাত জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসব কারণে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতি বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের দ্রব্য বা সেবার মূল্যের স্থায়ী একটা উর্ধ্বগতি বুঝায়। সাধারণভাবেই মানুষ নিত্যদিন যে দ্রব্যের প্রয়োজন বোধ করে তার দাম নিয়েই তার চিন্তা থাকে। আর তাই মূল্যস্ফীতি মানে অর্থনীতির সব দ্রব্যের দামের পরিবর্তনকেই বুঝায় না বরং জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের একটি ‘বাস্কেট’ বা গুচ্ছের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’র ২৬৪ টার মত পণ্যের একটা বাস্কেট আছে) গড় দাম একটি নির্দিষ্ট সময়ে কতটুকু পরিবর্তিত হল তাই নির্দেশ করে। এই সময় হতে পারে, প্রতিদিনকার ভিত্তিতে, মাসিক ভিত্তিতে, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কিংবা ষাম্মাষিক, বার্ষিক ও পয়েন্ট টু পয়েন্ট সময়ের ভিত্তিতে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে ২০২১-২২ অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে মূল্যস্ফীতির হার বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থবছরের শুরুতে এই হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে রাখার অর্থমন্ত্রীর ঘোষণাও ঠিক রাখা যাচ্ছে না। সংশোধিত মূল্যস্ফীতির হার দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার দাবি, ‘গত ১৫ বছরে মূল্যস্ফীতির হার দেশে গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই হার আরো বেশি ছিল। কাজেই আমি বলবো, বাংলাদেশ একটি অসাধারণ দেশ।’
ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের অক্টোবরে রাশিয়া, তুরস্ক, ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র, চিলি, হাঙ্গেরি, মেক্সিকো, পোল্যান্ডে মূল্যস্ফীতির হার ছাড়িয়েছে ৬ শতাংশের ওপরে। কোনো কোনো দেশে দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে।
বর্তমান জ্বালানি খরচ, শক্তিশালী চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিঘœ সৃষ্টি হওয়ায় অর্থনীতিবিদদের সামনের বছরের অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। কারণ, করোনা মহামারির কারণে গত এক বছরেরও বেশি সময়ে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের আয়-রোজগার কমে গেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এরমধ্যেই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। অর্থাৎ জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ২০২১ সালের নভেম্বরে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়। যা আগের বছর একই মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর অক্টোবরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৭০। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি নভেম্বরে ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে তা ২০২০ সালের নভেম্বরের তুলনায় কম। ওই বছর নভেম্বরে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ। নভেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়ে। এ খাতে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা আগের বছর একই সময়ে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ ছিল।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আমদানি বাড়ার কারণে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে যে ঘাটতি বেড়েছে তা স্থিতিশীল ছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারের যে তথ্য তার সঙ্গে বাস্তবতার তফাত আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে ধনী আরো ধনী হয়। তাই এক্ষেত্রে কিছু নীতি পরিবর্তন করা দরকার।

সর্বশেষ