খেলা ডেস্ক: বাংলাদেশে তখন মাতই সকাল হচ্ছে, ঠিক তখনই দক্ষিণ গোলার্ধের পূর্ব কোনায় সুদূর মাউন্ট মঙ্গানুইতেও ধরা দিলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন সকাল। নিউ জিলান্ড, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন দল। যারা দেশের মাটিতে অপ্রতিরোধ্য, যাদেরকে তাদের মাঠে কখনোই কোনো সংস্করণে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ, এতদিনের সেই আক্ষেপ ঘুচলো নিউ জিল্যান্ডে; ধরা দিল বহুকাঙ্ক্ষিত এক স্বপ্নময় জয়।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউ জিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে। ৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করা কিউইদের ইনিংস শেষ করতে এক ঘণ্টাও লাগেনি বাংলাদেশের। এরপর ৪০ রানের ছোট্ট লক্ষ্য তাড়ায় দুটি উইকেট হারাতে হয় বটে, তাতে ম্লান হয়নি জয়ের মাহাত্ম্য। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে দুঃসময়ের চক্রে ছিল বাংলাদেশ। মাঠের ভেতরে-বাইরে নানা বিতর্ক ও ঘটনাপ্রবাহে দল ও দেশের ক্রিকেট ছিল বিপর্যস্ত। বিশ্বকাপের পরও দেশে ফিরে পাকিস্তানের কাছে নাস্তানাবুদ হতে হয় বাজেভাবে। এই সফরে দল পায়নি চোট পাওয়া তামিম ইকবাল ও ছুটিতে যাওয়া সাকিব আল হাসানকে। সেই দলটিই দুঃস্বপ্নের প্রহর শেষ করে আদায় করে নিল ঐতিহাসিক জয়। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত চক্রে ৭ ম্যাচের ৬টিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ, বাকিটি হয়েছিল ড্র। শুরুটা পাকিস্তানের বিপক্ষে হয়েছে যাচ্ছেতাই। অবশেষে অভিজাত সংস্করণের আসরে প্রথম জয়টি ধরা দিল।
নিউ জিল্যান্ডে প্রথম জয়ের অপেক্ষাটা ছিল আরও দীর্ঘদিনের। কিউইদের বিপক্ষে তাদের মাঠে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৩ ম্যাচ খেলে অবশেষে দেখা মিলল প্রথম জয়ের। সেই জয় এলো এমন এক সংস্করণে, যা ছিল সবচেয়ে অভাবনীয়। সফরকারী দলগুলির জন্য নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট জয়ের চেয়ে কঠিন কাজ যে এখন কমই আছে ক্রিকেট বিশ্বে! দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ডের টানা ১৭ টেস্টের অপরাজেয় যাত্রা থামল এই হারে। সবশেষ তিন সিরিজে তারা হোয়াইটওয়াশ করেছিল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতকে। উপমহাদেশের কোনো দলের সবশেষ জয় ছিল ১১ বছর আগে, পাকিস্তানের। সেই দলকেই এবার বড় ব্যবধানে হারাল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ইবাদত হোসেন চৌধুরি শেষ দিনেরও নায়ক। আগের দিনের চারটির সঙ্গে যোগ করেন তিনি আরও দুই উইকেট। সবমিলিয়ে ৪৬ রানে তার শিকার ৬ উইকেট। দেশের বাইরে টেস্টে বাংলাদেশের কোনো পেসারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এটি। তার হাত ধরে প্রায় ৯ বছর ও ৪৭ ম্যাচ পর টেস্টে ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের কোনো পেসার। এরপর দুটি উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ, শেষটি মেহেদী হাসান মিরাজ।
সেই উচ্ছ্বাস আরও বাড়ে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে। আঙুলে চোট পাওয়া মাহমুদুল হাসান জয় ব্যাট করতে
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৮
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৫৮ নিউ জিল্যান্ড
২য় ইনিংস: (আগের দিন ১৪৭/৫) ৭৩.৪ ওভারে ১৬৯ (টেইলর ৪০, রবীন্দ্র ১৬, জেমিসন ০, সাউদি ০, ওয়্যাগনার ০*, বোল্ট ৯*: তাসকিন ১৪-৩-৩৬-৩, শরিফুল ১২-২-৩০-০, মিরাজ ২২-৫-৪৩-০, ইবাদত ২১-৬-৪৬-৬, মুমিনুল ৪-০-৭-০)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪০) ১৬.৫ ওভারে ৪২/২ (সাদমান ৩, শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, মুশফিক ৫*; বোল্ট ৫-৩-৪-০, সাউদি ৫-২-২১-১, জেমিসন ৩.৫-১-১২-১, ওয়্যাগনার ৩-১-৪-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৯ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ইবাদত হোসেন চৌধুরি।