মার্কস-এর ২০৩তম জন্মদিনে রক্তিম অভিবাদন
নতুন কথা ডেস্ক : ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’-শোষিত, বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত এই কালজয়ী শ্লোগানের প্রথম আওয়াজ তুলেছিলেন কার্ল মার্কস। ৬৫ বছরের জীবদ্দশায় তার সৃষ্ট তত্ত্ব ঐতিহাসিক ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’ এবং বিখ্যাত গ্রন্থ ‘পুঁজি’ (দাস ক্যাপিটাল) পুঁজিবাদের বুকে কাঁপন ধরিয়েছিল। এখনো তা পুঁজিবাদী শোষকের ঘুম হারাম করে দেয়। কেবল তাই নয়, পুঁজিবাদী সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে তাদের তাবেদার অর্থনীতিবিদরাও মার্কসের ‘পুঁজি’র দ্বারস্থ হচ্ছেন। করোনা মহামারীর এই বৈশ্বিক সংকটেও পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো যখন চরম বিপর্যস্ত, তখনো ভিয়েতনাম, কিউবা, লাওস, কম্বোডিয়া ও চীন করোনার আঘাত মোকাবেলা করছে মার্কসবাদী আদর্শকে আঁকড়ে ধরে। ফলে আজো প্রমাণ হচ্ছে ঐতিহাসিক মার্কসবাদের প্রবক্তা কার্ল মার্কস’ই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিক এবং তার দেওয়া ‘দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ’, ‘অর্থনীতির উদ্বৃত্ত তত্ত্ব’ ও ‘রাজনৈতিক দর্শন’ই পৃথিবীর সেরা মতবাদ। গত ৫ মে ছিল মহামতি কার্ল মার্কসের ২০৩তম জন্মদিন। ১৮১৮ সালের এ দিনেই জার্মানির রাইন অঞ্চলের ত্রিয়ের শহরে জন্ম গ্রহণ করেন জগৎ খ্যাত এই মহান দার্শনিক। কমিউনিস্ট আদর্শ ও সমাজ বিপ্লবে আকৃষ্ট হন হেগেলে’র সংস্পর্শে আসার পর থেকে। বার্লিন বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে মার্কস বিপ্লব ও নিরীশ্বরবাদী চিন্তায় ধাপিত হন। তিনি’ই উচ্চারণ করেন,“ সমাজই ধনী-গরিব সৃষ্টি করেন, ঈশ^র নয়।” ১৮৪৮ সালে প্রকাশিত ‘কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো’র প্রবক্তা কার্ল মাকর্স ও তার পরম বন্ধু ফ্রেডিক এঙ্গেলস, যা আজো দুনিয়ার মানুষকে মুক্তির দিশা দেয়। কার্ল মার্কস’ই ভাববাদী চিন্তা ও দর্শনের মূলে কুঠারাঘাত করে দর্শন ও ইতিহাসকে বিজ্ঞান নির্ভর করেন। তিনি’ই হলেন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা। পুঁজিপতিরা কীভাবে শ্রম লুট করে মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে তার ‘পুঁজি’ গ্রন্থে। ‘মুনাফা কোথা থেকে আসে’-এই চিন্তায় দুনিয়ার অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিকরা যখন অন্ধকারে হাতড়েছেন, তখন মার্কস উদ্বৃত্তমূল্য তত্ত্ব আাবিষ্কার করে তার উত্তর দিয়েছেন। মার্কস সমাজতন্ত্রের ধারণাকে কল্পনা বিলাশের হাত থেকে মুক্ত করে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দিয়েছেন। তাই তিনি আজো বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মূল প্রবক্তা। কার্ল মার্কস কেবল একজন দার্শনিক বা অর্থনীতিবিদ’ই নয়, তিনি ছিলেন সমাজ বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী। জার্মানিতে জন্ম হলেও রাজনৈতিক ও দর্শনগত তত্ত্বের কারণে তাকে বিভিন্ন স্থানে থাকতে হয়েছে। ১৮৪৯ সালে তিনি লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৮৮৩ সালের ১৪ মার্চ এখানেই তিনি শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। তার জীবন সঙ্গী হয়েছিলেন জেনী। ১৩৮ বছর আগে মৃত্যু হলেও আজো তার সৃষ্ট মার্কসবাদ শোষিত-বঞ্চিত শ্রমজীবি মানুষের সংগ্রামের পথ প্রদর্শক। দিন যত গড়াচ্ছে, মার্কসবাদের প্রাসঙ্গিকতা তত বাড়ছে। মানব ইতিহাসে আজো তিনি অবিস্মরণীয়। ২০৩তম জন্ম দিনে কার্ল মাকর্স’কে রক্তিম অভিবাদন।