আন্তর্জাতিক ডেস্কঃশেষ পর্যন্ত মার্কিন অধ্যাপক অ্যালান লিখটম্যান-এর কথঅই সত্য হলো। ওয়াশিংটন ডিসি’র আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের এই অধ্যাপক ভাবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হতে পারবেন না।’ তার সেই কথাই সত্যে পরিণত হতে চলেছে। ৭ নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া ফলাফলে স্পষ্ট যে, ট্রাম্প হেরে যাচ্ছেন। আর জয়ের দুয়ারে পৌঁছে গেছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন। শুধু এবারের ফল নয়, ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচন নিয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণী ঠিক হয়েছে। কোনো হের-ফের হয় নি।
গত নির্বাচনে সবগুলো সংবাদ ও নির্বাচন বিশ্লেষকরা যেখানে হিলারি ক্লিনটনের সহজ জয় দেখতে পাচ্ছিলেন, সেখানে লিখটম্যান বলেছিলেন, নির্বাচনে জিততে যাচ্ছেন ট্রাম্প। স্রোতের বিপরীতে করা তার সেই ভবিষ্যদ্বাণীও যে সত্য হয়।
এবারের নির্বাচন নিয়েও একের পর এক জনমত জরিপের ফল প্রকাশিত হচ্ছিল। প্রায় প্রতিটিতেই ভাল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তারপরও কেউ তেমন নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। কারণ, গত নির্বাচন। ২০১৬ সালেও রাজনীতির ময়দানে একেবারে অনভিজ্ঞ ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহজ পরাজয় দেখেছিল সংবাদমাধ্যমগুলো। বিভিন্ন জনমত জরিপের ফলও তাদের সমর্থণ দিচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফল হয়েছিল উল্টো। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পূর্বাভাস করার সবচেয়ে পরীক্ষিত লোকটির দিকে না তাকিয়ে উপায় কি!
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্য আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচন সামনে রেখে আর চুপ থাকতে পারেন নি লিখটম্যান। তিনি তার পূর্বাভাসটি জানিয়ে দেন। বলেন, ‘এবার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস ছাড়তে হতে পারে।’ এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। ভিডিওটি মহুর্তেই টুইটারে ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৯২ সালেও অধ্যাপক লিখটম্যান আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন যে, নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডবিø¬উ বুশ জয় পাবেন না। বলার অপেক্ষা রাখেন না, বুশ হেরে গিয়েছিলেন। আর ক্ষমতায় এসেছিলেন বিল ক্লিনটন।
কিন্তু কথা হলো অ্যালান লিখটম্যানের পূর্বাভাস সত্য হয় কী করে? কিসের ওপর ভিত্তি করে তিনি এই ভিবিষ্যদ্বাণী করেন? অন্য সব জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ও নির্বাচক বিশেষজ্ঞকে পাশ কাটিয়ে তার অনুমান এতটা মিলে যায় কী ভাবে! সে আলোচনায় যাওয়ার আগে নির্বাচন নিয়ে তিনি কি পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তা জানা যাক।
এবারের নির্বাচন নিয়ে লিখটম্যান বলেন,‘ আমার চ‚ড়ান্ত অনুমান হচ্ছে ১৯৯২ সালের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প হতে যাচ্ছেন প্রথম মার্কিন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট, যিনি পুননির্বাচিত হবেন না। ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত তার বেশ আশা ছিল। কিন্তু মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দা ও চলমান সামাজিক অস্থিরতা কারণে তা উল্টে গেছে।’
অধ্যাপক লিখটম্যান আল-জাজিরাকে বলেন, কোনো জরিপ না, গুরুগম্ভীর বিশ্লেষণ না, বক্তব্য বা বিতর্ক নয়, এমনকি বিজ্ঞাপন বা তহবিল সংগ্রহের মতো প্রচার সম্পর্কিত কৌশলী কোনো বিষয়াদিও না-এগুলোর কোনো কিছুই নির্বাচনে তেমন গুরুত্বকপূর্ণ নয়। তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কী? লিখটম্যান বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পারফরম্যান্সটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে ১৩টি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, যাকে ‘থার্টিন কিজ’ বলা হচ্ছে। এই ১৩টি বিষয় সরাসারি ক্ষমতাসীন সরকারের পারফম্যান্সের সঙ্গে যুক্ত। যেমন অর্থনীতি ঠিক আছে কিনা বা কোনো সামাজিক অস্থিরতা চলছে কিনা ইত্যাদি। এ ধরণের ১৩টি বিষয়ের ওপর করা প্রশ্নের উত্তর শুধু ‘সত্য’ ও ‘মিথ্য’-এর মাধ্যমে দিতে হয়। ছয় বা তার বেশি প্রশ্নের উত্তর যার পক্ষে যাবে নির্বাচনে তার জয়ের সম্ভাবনা তত বেশি। এ নিয়ে তার একটি বইও আছে, যার নাম ‘দ্য কিজ টু দ্য হোয়াইট হাউজ’।
১৯৮০ সালে অধ্যাপক লিখটম্যান প্রথম এই মডেল উপস্থাপন করেন, যার ভিত্তিতে ১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সবগুলো নির্বাচনের ফল তিনি আগে থেকেই সফলভাবে বলে দিতে পেরেছেন। প্রায় বলতে হলো কারণ- ২০০০ সালে করা পূর্বাভাসটি সত্য হয় নি। অবশ্য সে নির্বাচনের ফলটি ব্যাটল বক্স থেকে নয়, বরং সুপ্রিম কোর্ট থেকে এসেছিল। আদালত আল গোরকে পরাজিত করে ফিরিয়ে দিয়েছিল।