Site icon নতুন কথা

যুবরাই পরিবর্তনের হাতিয়ার


জীবনের সবচেয়ে স্বর্ণালী সময় তারুণ্য। মানুষ চায় সারা জীবন এই বয়সটা ফ্রেমে বেঁধে রাখতে। জীবনের যত অর্জন তার বেশির ভাগই এই বয়সেই হয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কোনো আইন-কানুন না মেনে জীবন উপভোগ করার প্রবণতা কাজ করে এই তারুণ্যে। তাই ক্যারিয়ার থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয় এই বয়সেই। এই বয়সে যে যত সফল সে তার জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত সফলতার পরিচয় দেয়। এই যে আধুনিক সমাজ বিবর্তনের ধারা তা এই তারুণ্যের হাত ধরেই এসেছে। প্রতিদিন পৃথিবী যে তার নতুন রুপ পাচ্ছে তার বেশির ভাগ অবদান এই তরুণ সমাজের।
বিশ্বায়নের এই যুগে তরুণরাই বেশি পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। আধুনিক যুগের যুবারা স্পষ্টবাদী ও অনেকটাই মুক্তমনা। এই যুব সমাজ ইতিবাচক পরিবর্তনের একমাত্র শক্তিশালী বাহক। তাই তারা শুধু আমাদের জন্য ভবিষ্যৎই নয়, বরং বর্তমানও বটে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটা জনগোষ্টি এই যুবসমাজ। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়-সম্পর্কিত জনসংখ্যা বিভাগের ‘বিশ্ব জনসংখ্যা সম্ভাবনা: ২০১৫রিভিশন’এর তথ্যমতে, বর্তমানের ১৬ কোটি জনসংখ্যার ১৫-২৪ বছর বয়সী প্রায় ২০ শতাংশ যুবগোষ্ঠী। আর বাংলাদেশ সরকারের মতে, ১৮-৩৫ বছরের জনগোষ্ঠী যুবক। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি যুবগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। গত পাচঁ বছরে এই সংখ্যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই বিশাল যুবসমাজ একটা দেশের জন্য তখনি আশীর্বাদ হয় যখন রাষ্ট্র তাদের সঠিক ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া এই বিশাল জনগোষ্ঠী বোঝাতেও পরিণত হয়। যেমনটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরিলক্ষিত হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষিত যুবক কর্মহীন মানুষের দলে নাম লেখাচ্ছেন। কারণ সরকারি হিসেবে বেকার ২৬ লাখ ৩০ হাজার। যার ৪৭ শতাংশ স্নাতক বেকার।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম ২৬ লাখ ৩০ হাজার মানুষ বেকার। এর মধ্যে পুরুষ ১৪ লাখ, নারী ১২ লাখ ৩০ হাজার। যা মোট শ্রমশক্তির সাড়ে ৪ শতাংশ। তিন বছর আগে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। এক দশক আগে ছিল ২০ লাখ। বিবিএস যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, প্রকৃত বেকার আরো বেশি। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে ৫ শতাংশের বেশি বেকার, সেখানে বাংলাদেশে সাড়ে ৪ শতাংশ বলা হচ্ছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে চাকরির বাজারে যোগ্যতা ও দক্ষতা খুবই কম। সনদ অনুযায়ী চাকরি মিলছে না। বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় শিক্ষিত বেকার বাড়ছে হু হু করে। আর এর অধিকাংশ হলো বেকার যুবক।এদিকে বিশ্বব্যাংক এর মতে সরকার কম দেখালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ওপর প্রতিবছর নতুন করে ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। সুতরাং নতুন কর্মসংস্থান তৈরির চাপ রয়েছে অর্থনীতির ওপর। বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম। আবার লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। ভারত ও পাকিস্তানে প্রতি ১০ জন শিক্ষিত তরুণের তিনজন বেকার। যারা শ্রমবাজারে প্রবেশ করে তারা সবাই যুবক। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির এক গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছরে ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ। এই বিশাল সংখ্যক বেকার যুবকদের কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না হওয়াই দেশের অগ্রগতির উন্নয়নে অংশ নিতে পারছে না। ফলে বাংলাদেশের যে পরিমাণ উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিলো তাও হচ্ছে না। উন্নয়নের মূলধারার সাথে এই যুবগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত না করায় দেশ যেমন পিছিয়ে পড়ছে তেমনি তারা দেশের বোঝাতেও পরিণত হচ্ছে।এই বিশাল যুবগোষ্ঠীর সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ত্বরায়ণ করতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে বয়স-কাঠামোর পরিবর্তনে জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও সুশাসন নিশ্চিতকরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের যুবকদের নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন পারে দেশের ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে। তাই এই যুব হাতিয়ারকে যেভাবে রাষ্ট্র ব্যবহার করবে সেভাবেই কাজ করবে। যুব দিবসের প্রত্যাশা একটি যুবক যেন দেশের উন্নয়নের অংশীদারিত্বের বাহিরে না থাকে। আমরা সবাইকে নিয়ে আমাদের সেই সোনার বাংলাদেশ গড়ব। সেইসাথে যুবসমাজের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করণে সরকার আরো আন্তরিক হবে বলে আমরা আশা করবো।

লেখকঃ সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

Exit mobile version