নতুন কথা ডেস্ক : ৩ মে যুদ্ধাপরাধীর বিচার আন্দোলনের অমর স্রষ্টা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৯২তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৯ সালের এ দিনেই অবিভক্ত বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহীয়সী নারী। আজীবন লড়েছেন মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে জন্য।
মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত মা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সংগঠক এই বিপ্লবী নারী গত শতকের নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। তাকে আহ্বায়ক করেই ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪ টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে পরবর্তীতে ১৯৯২ সালের ১১ ফেব্রুারি ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি’ গঠিত হয়। সর্বসম্মতিক্রমে সেই কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। এই কমিটি ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ’গণাআদালত’ এর মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাত্তরের নরঘাতক গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচারের প্রতীকী আয়োজন করা হয়। আদালতে রাজাকার শিরোমণি গোলাম আযমের বিচার শহীদ জননী দেখে যেতে না পারলেও তার বিচার হয়েছে। ফাঁসি হয়েছে আরো ৬ জনের। যুদ্ধাপরাধীর বিচার এখনো চলছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ডায়েরি ‘একাত্তরের দিনগুলি’ জাহানারা ইমামের এক অনন্য সৃষ্টি। তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অনন্য জীবন, বীরশ্রেষ্ঠ, জীবন মৃত্যু চিরায়ত সাহিত্য, বুকের ভিতরে আগুন, নাটকের অবসান, ক্যান্সারের সঙ্গে বসবাস, প্রবাসের দিনলিপি প্রভৃতি। পেয়েছেন বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পুরষ্কার (১৯৮৮) কমর মুশতরী সাহিত্য পুরষ্কার (১৯৮৮) বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার (১৯৯১) ও স্বাধীনতা পদক (১৯৯৭) সহ বিভিন্ন পুরষ্কার ও সম্মাননা।
১৯৯৪ সালের ২৬ জুন দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরের একটি হাসপাতালে ৬৫ বছর বয়সে মারা যান মহীয়সী এই নারী। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম না থাকলেও তার সংগ্রামী জীবন আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণা হয়ে থাকবে চিরকাল। ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে নতুন কথার পক্ষ থেকে জানাই সংগ্রামী লাল সালাম।