বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা আর বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে মহারাসলীলা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মৌলভীবাজারের মণিপুরি সম্প্রদায়। ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকাল থেকে বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায় ও মৈতৈ সম্প্রদায় পৃথকভাবে এই অনুষ্ঠান করবে। এটি তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা সম্প্রীতির স্মারক হয়ে আছে। উৎসব হবে মণিপুরি অধ্যুষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়ন ও আদমপুর ইউনিয়নে। মাধবপুর ইউনিয়নের শিববাজারে জোড়া মণ্ডপে বিষ্ণুপ্রিয়া সম্প্রদায় আর আদমপুর ইউনিয়নের তেতুইগাঁও গ্রামের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ সম্প্রদায় উৎসব করবে। উৎসব ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইতোমধ্যে জনসমাগম শুরু হয়েছে। এবার লক্ষাধিক লোক উৎসবে-মেলায় অংশ নেবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন। সকল বয়সের মণিপুরি নারী ও শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় মহারাসলীলা উপলক্ষে মণিপুরিদের পাড়ায় পাড়ায় চলছে উৎসবের প্রস্তুতি।
মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে ১৮২তম রাস উৎসবের আয়োজক হচ্ছে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘ । আগামী শুক্রবার দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজারের উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড়া মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। তাই মণিপুরি পাড়ার বাড়ির উঠোনে উঠোনে নাচের প্রশিক্ষণ চলছে। প্রশিক্ষক দেখিয়ে দিচ্ছেন নাচের ভঙ্গিসমূহ। কোথাও চলছে রাস নৃত্যের মহড়া। কোথাও রাখাল নৃত্যের। নৃত্যকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপনে ব্যস্ত সময় পার করছে মণিপুরি পাড়ার ছেলেমেয়েরা। অন্যদিকে কমলগঞ্জের আদমপুরে মণিপুরি মৈতৈ সম্প্রদায় আয়োজন করছে পৃথক রাসমেলার। এবার হবে তাদের ৪২তম রাস উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে মাধবপুর ও আদমপুরের মণ্ডপগুলো সাজানো হয়েছে সাদা কাগজের নকশার নিপুণ কারুকাজে। করা হয়েছে আলোকসজ্জাও। মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। কমলগঞ্জে উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসে।
মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ জানান, এবার মাধবপুর জোড়া মণ্ডপে মহারাসলীলা আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বেলা ১১টায়। অনুষ্ঠান চলবে পরদিন ব্রাহ্মমুহূর্ত পর্যন্ত। এ ছাড়া একই দিন উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহারাসলীলা অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসব আনন্দময় করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিবছরের মতো এবারও মহারাসলীলা উপলক্ষে মাধবপুর ও আদমপুর উভয় স্থানে বসবে বিরাট মেলা। আয়োজকরা প্রত্যাশা করছেন এবারের বর্ণিল উৎসবে উভয় স্থানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে।
এবারের উৎসবের বিষয়ে মণিপুরি সমাজকর্মী, লেখক ও তরুণ গবেষক দেবাশীষ কুমার সিংহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, রাসলীলানুকরণ বৃহত্তর সিলেটের মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী মহারাসলীলা উৎসব নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। মণিপুরি নারী ও শিশু নৃত্যশিল্পীদের সুনিপুণ নৃত্যাভিনয় রাতভর মুগ্ধ করে রাখে লাখো ভক্ত ও দর্শনার্থীকে।