আন্তর্জাতিক ডেস্ক:সা¤্রাজ্যবাদী স্বঘোষিত বিশ্ব মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্তের পর চক্রান্ত করেও ঠেকানো গেল না বলিভিয়া’র বামপন্থীদের। এক বছর আগে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া ইভো মোরালেসের দল বামপন্থী মুভমেন্ট সোশ্যালিজম পার্টি দুর্দান্তভাবে ফিরেছেন বলিভিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতায়। গত ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে এই দলের প্রার্থী লুই আর্কে ভূমি ধ্বস বিজয় পেয়েছে। বিরোধী দক্ষিণপন্থী কার্লোস মেসা হেরেছেন বিপুল ব্যবধানে। লুইস আর্কে ৫৫ শতাংশ ভোট ৬ দলীয় জোটের প্রার্থীকে হারিয়েছেন। শুধু তাই নয়, হাউজ অব কংগ্রেসেও দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। সুপ্রিম ইলেকশন ট্রাইব্যুনাল ২৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করে। এই জয়ের পর অর্কে বলিভিয়াকে ‘পূর্ণগঠনের’ প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।এটা শুধু লুইস আর্কের একক বিজয় নয়, এ বিজয় আর্জেন্টিনায় নির্বাসিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের বিজয়। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক বিশ^মোড়লদের বিরুদ্ধে বলিভিয়ার জনগণের সাংবিধানিক অভ্যুত্থানও বটে। নির্বাচনে মিথ্যা কারচুপির অভিযোগ দিয়ে গত বছর নভেম্বর মাসে তথাকথিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মোরালেসকে ক্ষমাতচ্যুত করা হয়। শুধু তাই নয় তাকে দেশ থেকেও বিতাড়িত করা হয়। এরপর নিজেদের মতো করে সরকার, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সাজায় অভ্যুত্থানকারীরা। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। ভোটের মাধ্যমেই সমুচিত জবাব দিল সমাজতন্ত্রে বিশ^াসী বলিভিয়ানরা।
গত বছর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চতুর্থবারে মতো বিজয়ী হয়েছিলেন মোরালেস। তবে ওই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে রাজপথে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্লোস মেসার সমর্থকরা। এর আগে নির্বাচন সুষ্ঠ হয়নি বলে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট রাজপথ উত্তপ্ত করার মঞ্চ প্রস্তুত করে দেয়। মার্কিন ইশারায় ডানপন্থীরা মোরালেসের সমর্থক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করে। নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিলেও বলিভিয়া জুড়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। কার্লোস মেসার সমর্থকদের সাজানো আন্দোলনের মুখে বলিভিয়ার সামরিক ও পুলিশ বাহিনীও ইভো মোরালেসের পেছন থেকে সরে যায়। এর সঙ্গে যোগ দেয় সুশীল সমাজ। এরপর মোরালেসকে হটিয়ে অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হয়। সাজানো হয় নির্বাচন কমিশন। মোরালেসকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপরও ঠোকানো গেলো না মোরালেসের দলকে।
সমসাময়িককালে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে বলিভিয়া নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছিল মোরালেসের নেতৃত্বে। তিনি প্রবৃদ্ধিকে ৬ শতাংশে নিয়ে গিয়েছিলেন। তার সময়ে দেশজ উৎপাদন তিনিগুণ বেড়েছিল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করেছিলেন। দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। বেকারত্ব কমেছে। জনসাধারণের ক্রমক্ষমতা বেড়েছে। এর মধ্যদিয়ে মোরালেস জনগণের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। কিন্তু বিরাগভাজন হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ মোরালেসের পথ মার্কিন পুঁজিবাদের জন্য হুমকি।
চুড়ান্ত ফল ঘোষণার পর সোশ্যাল মিডিয়ার এক প্রতিক্রিয়ায় অর্কে বলেন, এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হল দেশে শান্তি, আনন্দ, স্থিতিশীলতা তথা জনগণের জন্য একটি ভাল আগামী তৈরি করা। মানুষ আমাদের ওপর যে বিশ্বাস রেখেছিল তা আমরা হারাতে দেব না।’নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের প্রধান সালভাদোর রোমেরো ফল ঘোষণার সময় জানান, করোনা সত্তে¡ও ৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। বলিভিয়ানরা একবিংশ শতাব্দীতে লাতিন আমেরিকায় সর্বোচ্চ রেকর্ড তৈরি করেছে।