নতুন কথা ডেস্ক : পৃথিবী থেকে কোনও শক্তিশালী লেন্সেই সূর্য ধরা দেয় না। সেই অপ্রাপ্তি মেটাল নাসা ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির তৈরি সৌর অরবিটার। সম্প্রতি ওই সৌর অরবিটার একগুচ্ছ ছবি পাঠিয়েছে। তার মধ্যে এ পর্যন্ত সূর্যের সবচেয়ে কাছের একাধিক ক্লোজআপ ছবিও রয়েছে। সর্বসাধারণের জন্য ওই ছবি দেখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা নাসা। উৎক্ষেপণের পর থেকে এই প্রথমবার ছবি পাঠালো সোলার অরবিটার। খবর এই সময়ের।
এই সোলার অরবিটার হলো সান-অবজার্ভিং স্যাটেলাইট। নাসা ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার মিশন। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নাসা এবং ইএসএ-র যৌথ উদ্যোগে ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল প্রথম সৌর অরবিটার। ইউরোপীয় সময় রাত ১১টা ৩ মিনিটে লঞ্চ কমপ্লেক্স ৪১ থেকে ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স অ্যাটলাস ভি রকেটে করে পাঠানো হয় সৌর অরবিটারটি। উৎক্ষেপণের সময় ঘোষণা করা হয়েছিল, মহাকাশ থেকে সূর্যের মেরুগুলির ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে পারবে এই মহাকাশযান।
উৎক্ষেপণের পরদিন সোমবার সকাল ১২টা ১২ মিনিটে জার্মানির ডারমস্টাডেটের ইউরোপীয় স্পেস অপারেশনস সেন্টারের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মহাকাশযান থেকে একটি সংকেত পেয়ে নিশ্চিত সোলার অরবিটারের সৌর প্যানেলগুলো সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
নাসা সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছরের জুনের মাঝামাঝি ওই অরবিটারটি প্রথমবার সূর্যের কাছাকাছি আসে। তবে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) ওই অরবিটার সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এই দিনটির জন্য অনেক আগে থেকেই কাউন্টডাউন শুরু করে দিয়েছিলেন নাসা ও ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। সূর্য থেকে মহাকাশযানের দূরত্ব হয় সাড়ে সাত কোটি কিলোমিটারের মতো। পরের পর্যায়ে দূরত্ব আরও কমিয়ে চার কোটি কিলোমিটারেও পৌঁছাতে পারে সোলার অরবিটার। তখন বুধের থেকেও সে সূর্যের আরও কাছে পৌঁছে যাবে।
মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্টের নাসার গড্ডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে কর্মরত নাসার বিজ্ঞানী হোলি গিলবার্ট বৃহস্পতিবার বলেন, এই অভূতপূর্ব ছবিগুলো আমরা এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কাছাকাছি পেয়েছি। তার ধারণা, এই আশ্চর্যজনক ছবিগুলো সূর্যের বায়ুমণ্ডলীয় স্তর নিয়ে জানতে সাহায্য করবে বিজ্ঞানীদের। যার ফলে, পৃথিবীর কাছাকাছি এবং সৌরজগত্ জুড়ে মহাকাশ আবহাওয়া কীভাবে চালিত হয়, সে সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা পাবেন বিজ্ঞানীরা।
আমরা এত তাড়াতাড়ি এত ভালো ফল পাব, আশা করিনি, বলছিলেন ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির সৌর অরবিটার প্রকল্পের বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল মুলার। উচ্ছ্বসিত মুলারের কথায়, অরবিটার যে দুর্দান্তভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে, এই ছবিগুলোই তার প্রমাণ।
সোলার অরবিটারের একটি অনন্য কক্ষপথে রয়েছে, যেখান থেকে সূর্যের মেরুগুলোর ছবি তুলে পাঠাতে পারবে। এই কক্ষপথে সূর্যের কাছাকাছি মোট ২২টি অবস্থান পড়বে। বুধের কক্ষপথের মধ্যে থেকে সূর্য এবং পৃথিবীতে তার প্রভাব সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ করবে এই মহাকাশযান।
উৎক্ষেপণের পর ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির মহাকাশবিজ্ঞানী গুন্থার হেসিঙ্গার বলেছিলেন, পৃথিবীতে প্রাণের জন্য সূর্যের গুরুত্ব কতটা, মানুষ হিসেবে তা আমরা জানি। তাই সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করি। সূর্য কীভাবে কাজ করে চলেছে, তা নিয়ে নিরন্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছি। আবার আমরা এটাও জানি, একটা সৌরঝড় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে।
এই অভিযান প্রসঙ্গে তার মত, এই সোলার অরবিটার মিশনের শেষে আমরা সূর্যের আচরণের পরিবর্তনের জন্য দায়ী কী, আমাদের গ্রহের উপর তার প্রভাব কতটা, সে সম্পর্কে আরও বিশদ জানতে পারব।
নাসার সঙ্গেই বিভিন্ন দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের অবদান রয়েছে এই প্রকল্পে। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার ১২ সদস্য (অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নরওয়ে, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটেন) দেশের বিজ্ঞানীরা রয়েছেন সোলার অরবিটার মিশনের গবেষণা ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।