নতুন কথা রিপোর্ট : হরতাল ডেকে পুরনো রূপ দেখালো হেফাজতে ইসলাম। রবিবার (২৮ মার্চ) সংগঠনটির সমর্থকরা দেশের বিভিন্ন স্থানে তা-ব চালিয়েছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা তৃতীয় দিনের মতো তা-ব চালিয়েছে মাদরাসাছাত্ররা। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আগুন দিয়েছে । এ ছাড়া জেলার সরাইলেও হামলা-ভাঙচুর চালান হেফাজতের কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর উপকণ্ঠ নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক তা-ব চালানোর খবর পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে শুক্রবার থেকে হেফাজতে ইসলাম তা-ব চালিয়ে আসছে। গত শুক্রবার ঢাকায় বিক্ষোভের সময় সংঘাতের ঘটনার প্রতিবাদে ওই দিন বিকেলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হামলা-ভাঙচুর চালায় হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা। সেখানে সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন নিহত হয়। এর প্রতিবাদ জানাতে ওই দিন বিকেলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাস্তায় নামেন হেফাজতের কর্মীরা। তাঁরা রেলস্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেন এবং শহরে ব্যাপক তা-ব চালান। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় একজন। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণাবাড়িয়ার ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার হরতাল ডাকে হেফাজত। এর আগে শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনকালে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও ভাঙচুর চালান সংগঠনের কর্মীরা। ওই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের বাইরে চারজন এবং শহরে একজন নিহত হয়। গত তিন দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হাটহাজারীতে সংঘাতের ঘটনায় ১৩ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৯ জন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়।
অবশ্য হেফাজতের ডাকা হরতালে দেশের অধিকাংশই স্থানেই সাড়া মেলেনি। সারা দেশে জনজীবন স্বাভাবিক ছিল। দিনের শুরুতে যানবাহন কিছুটা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে রাজপথে ফিরে আসে স্বাভাবিক চিত্র। পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি ছিল সবখানে।
অবশ্য হেফাজতের তা-ব ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, হেফাজত নেতাকর্মীরা রবিাবর সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন, প্রেস ক্লাব, পৌর মিলনায়তন, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, পুলিশ লাইন, সদর থানা, খাঁটিহাতা বিশ্বরোড হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, শ্রীশ্রী আনন্দময়ী কালীবাড়ি, দক্ষিণ কালীবাড়ি, রেলওয়ে স্টেশন, জেলা আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যের কার্যালয়, সরকারি গণগ্রন্থাগার, গ্যাস ফিল্ড কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল-মামুন সরকারের কার্যালয়, তাঁর নিজের ও শ্বশুরবাড়ি, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে আয়োজিত উন্নয়ন মেলার অর্ধশত স্টল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী আফজাল হোসেন নেসারের বাড়ি, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আনার, জামাল খানের বাড়ি, বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কার্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইন, আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজার পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং সরাইলের খাঁটিহাতা বিশ্বরোড হাইওয়ে থানায় হামলা চালায় হরতাল সমর্থনকারীরা। টোল আদায়ের বুথ ভাঙচুর করা হয়।
হেফাজতের কর্মীদের হাতে সাধারণ লাঠিসোঁটা দেখা গেলেও জিন্স প্যান্ট ও টি-শার্ট পরা অনেক যুবককে দা, হকিস্টিকের মতো দেশীয় অস্ত্র হাতে দেখা গেছে।
হরতালকারীরা নালার কংক্রিটের স্ল্যাব তুলে এনে রেললাইন অবরোধ করায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্টেশনের কাছের রেলগেটের ব্যারিয়ার বাঁকা করে ফেলা হয়। রেললাইন থেকে ক্লিপ খুলে ফেলা হয়। তালশহর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের মাঝখানে একটি সেতুতেও আগুন দেওয়া হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রেস ক্লাবের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার রিয়াজউদ্দিন জামির ওপর হামলা করা হয়।