Site icon নতুন কথা

অক্সিজেন সঙ্কটের আভাস,চিকিৎসা সরঞ্জামেও সমন্বয়হীনতা-স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হতাশার সুর


নতুন কথা প্রতিবেদন:ক্রমেই উর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার। হাসপাতালে হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের বাঁচার আকুতি। অথচ চিকিৎসকদের চিকিৎসা প্রদানে করুন অসহায়ত্ত¡ প্রকাশ। আর আইসিইউ তো সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। আগে হাসপাতালগুলোতে দৈনিক অক্সিজেন প্রয়োজন হতো ১০০ টন, করোনা পরিস্থিতিতে তা ১৫০ টনে পৌঁছেছে। প্রতিদিন এ চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে ও স্পেকট্রা অক্সিজেন সরবরাহ কমার ইঙ্গিত দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিকল্প উৎসের সন্ধান করলেও তারা এই মহুর্তে দৈনিক ৩৫ টনের বেশি দিতে পারবে না। ফলে অক্সিজেন সঙ্কট ঘণিভূত হচ্ছে। পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে মোট চাহিদার ১০ ভাগের এক ভাগ অক্সিজেনও সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে করোনা চিকিৎসায় সুরক্ষা সামগ্রী এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের মজুদ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষুধাগার-এর মধ্যে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা এই মহুর্তে মোটেও কাম্য নয়। করোনা রোগী ভর্তি কম হয় বলে গত বছর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে নির্মিত দেশের সর্ববৃহৎ কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল বন্ধ করা হলেও এবার রাজধানীর মহাখালীতে চালু করা হলো ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল। যদিও এখনো সেখানে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত হয় নি। হতাশার সুর পাওয়া গেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।
গত বছর করোনায় বেরিয়ে আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা। এখনো সে দশা কেটেছে বলে মনে হয় না। কারণ এক বছরেও করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারে নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বরং স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই পরিলক্ষিত হয় বার বার। কেন্দ্রীয় ঔষুধাগার বলছে, মজুত সামগ্রী দিয়ে ১৫-২০ দিন চলবে। আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কোনো ঘাটতি নেই। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উদ্বিগ্নতার কিছু নেই বলে মানুষকে আশ^াস দিলেও কেন্দ্রীয় ঔষুধাগার বলছে-তাদের কাছে মাত্র ১৩৯টি ভেন্টিলেটর, ৩১ টি ইলেট্রনিক আইসিইউ বেড, ২৫২ টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ২৫ হাজার ৫৮ টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ৭ হাজার ২২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। পেশেন্ট মনিটর আছে ৫০ টি, এবিজি মেশিন ১ টি এবং সাকশন মেশিন আছে ১ টি। এবস্থায় সংক্রমণ আরো বাড়লে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা বেশ কঠিন। সরঞ্জাম কেনাতেও কোনো সমন্বয়তা নেই। বরং কেবল উদ্যোগের অভাবে ১০ মাস ধরে বিমানবন্দরে পড়েছিল ১০২ কোটি টাকার সরঞ্জাম।
অন্যদিকে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে এক বৈঠকে মেডিকেল গ্রেডের অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেকট্রা বলেছে, যেকোনো সময় তাদের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যেতে পারে। লিন্ডে জানিয়েছেন, বন্ধ হয়ে যেতে পারে তাদের দুটি প্লান্ট। বর্তমানে দৈনিক ১৫০ টন অক্সিজেন চাহিদার মধ্যে লিন্ডে সরবরাহ করছে ৮০ টন। আর দৈনিক ৩৮ টন সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ১৮ টন সংগ্রহ করে ভারত থেকে। ভারতে অক্সিজেন চাহিদা যেভাবে বাড়ছে, তাতে যেকোনো সময় তারা রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অবশ্য নতুন উৎস সন্ধান করেছে। কিন্তু তারা দিতে পারবে ৭৫ টন। তবে এই মুহুর্তে পারবে মাত্র ৩৫ টন। ফলে সংক্রমণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে যেকোনো সময় অক্সিজেনের হাহাকার শুরু হতে পারে। যেমনটা এখন ভারতে শুরু হয়েছে।
আর আইসিইউ বেড পর্যাপ্ত নয়, তা আরো অনেক আগেই প্রকাশ পেয়েছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ বেড নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিশেষায়িত হাসপাতালেও আইসিইউ সঙ্কট। প্রতিদিন আইসিইউ বেডের জন্য রোগীর স্বজনদের হাহাকার শোনা যায়। তারপরেও দ্রæত ও কার্যকর উদ্যোগ নেই। গত বছর ২ হাজার ৩১ টি জেনারেল বেড, ৭১টি আইসিইউ বেড, ১০ টি ভেন্টিলেটর সমন্বয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়েছিল বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে। কিন্তু রোগী ভর্তির হার কম বলে সেপ্টেম্বরে তা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এবার মহাখালি কাঁচাবাজারের জন্য নির্মিত ভবনে নতুন করে চালু করা হলো ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল। এখানেও রোগীর চাপ শুরু হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, জনবল সঙ্কটের কারণে পুরোমাত্রায় চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এখানেও ১০০০ বেড, ১১২ টি আইসিইউ, ১০০টি এইচডিইউ ইউনিট রয়েছে। আর অক্সিজেন ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সুবিধাসহ বেড রয়েছে ২৫০ টি। জরুরি বিভাগেও রয়েছে ৫০ টি বেড। এই মুহুর্তে দেশের সর্ববৃহৎ এই করোনা হাসপাতালে জনবল সঙ্কট এবং প্রস্তুতেও সমস্যা রয়েছে। তা ঠিক করতে সময় লাগবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত-বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে গত ২২ এপ্রিল রাজধানীর এক সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক বলেছেন, “আমরা আর কত চিকিৎসা দিব। হাসপাতালে আর কত শয্যা বাড়াব, আর কত অক্সিজেন দিব।” তিনি বলেছেন,“করোনা রোগী বাড়লে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। তার এই হতাশার সুরে বিপদের ইঙ্গিত। তাই সামগ্রীক পরিস্থি বিশ্লেষণে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনে আরো ভয়াবহ বিপদের শঙ্কা রয়েছে।

Exit mobile version