করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে মাস্কের বিকল্প নেই

নতুন কথা প্রতিবেদন \ চীনের উহানে জন্ম নেওয়া অদৃশ্য শত্রæ করোনার দাপট এখনো থামেনি। বিশ্বজুড়ে এখনো সংক্রামণ ও মৃত্যুর হিসাব বন্ধ হয় নি। অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে স্থবির পৃথিবী আবার সচল হতেই বিশ্ব স্বাস্থ্যবিদরা করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ এর ভয়ঙ্কর থাবায় দ্বিতীয় বারের মতো বিপর্যস্ত হয়েছে দুনিয়ার বহু দেশ। অনেক দেশই নতুন করে লকডাউনে যাওয়ার চিন্তাও করছে। আসছে শীতে করোনা দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিদাও। সতর্ক বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামাল দিতে জারি করা হয়েছে ৯ দির্শেনা। যার অন্যতম হলো মাস্ক ছাড়া সরকারি ও বেসকারি পর্যায়ে কোনো সেবা প্রদান করা যাবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্যবিদরাও বলছেন করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। মানতে হবে অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধিও।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৬ হাজারের ওপরে মানুষ করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি দিনই করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তার পরেও মানুষ করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। গ্রামের মানুষ করোনা নামক এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসকে কিছুই মনে করেন না। হাটে-বাজারে, চায়ের দোকানো, মসজিদ-মন্দিরসহ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয় হচ্ছে না। বরং অবহেলা-অনীহায় কাটছে দিন। শুরুর দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতার কারণে শহরে কিছু মানুষ মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানলেও এখন অনেকটা ঢিলেঢালা। গণপরিণে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো লক্ষণ নেই। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা সামলাতে সরকার অনেক আগেই মানুষকে সতর্ক করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহŸান জানিয়েছেন। বহু আগেই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে জারি করা ৯ দির্শেনার অন্যতম নির্দেশনা হলো সরকারি-বেসরকারি কোনো অফিসে মাস্ক ছাড়া সেবা দেওয়া যাবে না। অতএব এ কথা স্পষ্ট যে করোনার হাত থেকে রক্ষা পেতে মাস্কের কোনো বিকল্প নেই। এই সত্যটি ভুলে গেলে চরম মূল্য দিতে হবে-বলছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে তিন মাস আগে এ্যান্টিজেন নীতিমালা প্রণয়ন করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সেপ্টেম্বর দেশে এ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারপরও দেশে এ্যান্টিজেন ভিত্তিক করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয় নি। যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ধীরগতি মহামারী নিয়ন্ত্রণে বাধাগ্রস্ত করবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে এ পর্যন্ত বেশ কিছু এ্যান্টিজেন কিট দেশে এসেছে। যেগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সস্টিটিউটকে (আই ই,ডিসি আর) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে একটি কিটের ভ্যালিডেশন নিয়ে কাজ করছে। তবে সেখানে বেশ সময় লেগেছে। কারণ বাইরে থেকে নমুনা এনে কিটটি ভ্যালিডেট করতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কিটের কার্যকারিতা গ্রাস পায়।
গত মার্চ মাসে করোনা সংক্রমন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু আরটি পিসি আরের মাধ্যমে দেশে করোনা পরীক্ষা চরছে। এতে সময় ও অর্থ দুই’ই বেশি লাগে। নতুন পরীক্ষায় গতি আনতে এ্যান্টিজেন পরীক্ষার পক্ষে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর করোনা পরীক্ষায় এ্যান্টিজেন পরীক্ষার অনুমতি দেয় সরকার। এটা আল্প সময়ে করা যায় ব্যয়ও কম হয়। দেশের সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল, সরকারি পি সি আর ল্যাবে এ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু পর্যপ্ত কিটের অভাবে এখনো পরীক্ষা শুরু হয় নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কিট সরবরাহের জন্য ইউএন এফ পিএ’ কে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ১ সপ্তাহ সময় চেয়ে গত একমাসেরও তা সরবরাহ করতে পারেনি। তাছাড়া সিএমডির মাধ্যমে কেট কেনার প্রক্রিয়া শুরু হলেও মাত্র একটি প্রতিষ্ঠনের কিট ভ্যালিড হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় ঐ প্রক্রিয়া ও কেনা হয়নি, ফলে এ্যন্টিজেন পরীক্ষায় পিছিয়েছে।
এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর জানায়, এ্যান্টিবডি বা এ্যান্টিজেন কিট একধরনের মেডিক্যাল ডিভাইস। আমরা ১০১৫ সালে মেডিক্যাল ডিভাইস সংক্রান্ত নীতিমালা প্রনয়ণ করি। যা আমাদানীর ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু শর্তবলী মেনে করতে হবে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যাতে দ্রæত বিষয়টি সুরাহা করা যায়।