করোনায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ: দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবেই

নতুন কথা প্রতিবেদন:করোনায় লন্ডভন্ড গোটা দুনিয়া। মারা গেছে প্রায় ৫ লাখ। আক্রান্তের সংখ্যা মৃত্যুর কয়েকগুণ। প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের কবলে পড়েছে পুরো পৃথিবী। বিশ্বজুড়ে আবার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অদৃশ্য শত্রæ মরণঘাতী ভাইরাস কোভিড-১৯।
প্রথম ধাক্কায় স্থবির পৃথিবী আবার সচল হতে শুরু করেছে। কিন্তু দুনিয়ার মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসার মুহুর্তেই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে দেশে দেশে আবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ছে। ইতোমধ্যে নতুন করে লকডাউনের পথে কোনো কোনো দেশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিদরাও। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সে তথ্যই দিয়েছেন। শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দেশবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন। করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় গত মার্চ থেকে বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সকল পরীক্ষা। অটো পাশের সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে মাধ্যমিকের সব শ্রেণিতে। নভেম্বরেও খোলার কোনো সম্ভাবনা নেই।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তর জানিয়েছে জীবন-জীবিকার তাগিদে মানুষ ঘর থেকে বের হতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু স্বস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে কিছুটা উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শীতকালে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে। এসময় বিয়ে, পিকনিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান পরিহার করার জন্য মানুষকে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সাথে সাথে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে পালন করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
ফ্রান্সে চার মাস পর পুনরায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাতে বিশেজ্ঞদের আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সংক্রমণ কমার সাথে সাথে মানুষ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করায় সরকার নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করতে বাধ্য হয়েছে। ইউরোপের মধ্যে এখন সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে স্পেন। সেখানে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ছাড়িয়েছে। বর্তমান স্পেনে সংক্রমণের হার ১১.৮ শতাংশ। এই হার ৫ শাতাংশের নিচে নামাতে হবে বলে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা রয়েছে।
এদিকে অস্ট্রিয়া, চেক রিপাবলিকে সংক্রমণের হারও উর্ধ্বমুখী। ব্রিটেনে মৃতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ। বরিস জনসন লকডাউন পুনরায় ঘোষণা করতে পারেন। যদিও ইতোমধ্যে জমায়েতের ওপর নিষেধজ্ঞা জারি করেছে। ইসরাইল লকডাউন ঘোষণা করেছে। আগামী ৩ সপ্তাহ লকডাউনে থাকবে গোটা দেশ।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম পর্যায়ে করোনা যুদ্ধে এগিয়ে থাকলেও লকডাউন তুলে দেয়ায় আবার নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। সেখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় তারাও নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। করোনার উৎসস্থল চীনে নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। সেখানে দ্বিতীয় দফায় শতাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে। নতুন করে বিধিবিধিান জারি করছে সরকার। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আফ্রিকায়ও নতুন করে লকডাউনের কথা ভাবছে সরকার। তবে ২য় দফায় লকডাউন এলাকা ভিত্তিক হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন। আমেরিকায় বিশে^র সবচেয়ে বেশী সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। সেখানে মাস্ক পরাও বাধ্যতামূলক নয়। ট্রাম্প বলছেন, তিনি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চান না। যদিও দেশটি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনা নিয়েন্ত্রণ ও দমনে যা যা করা উচিৎ ছিল ট্রাম্প তার অনেক কিছুই করেন নি। ফলে এত সংখ্যক লোকের মৃত্যুও সংক্রমণ সহজেই হতে পেরেছে। বাংলাদেশে করোনা প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে আবার প্রস্তুত হতে হবে। সর্বত্র স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।