শুক্রবার,২৯,মার্চ,২০২৪
29 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়মুক্তমতগণসঙ্গীতের অগ্রজ ফকির ভাই : কিছু টুকরো স্মৃতি কথা

গণসঙ্গীতের অগ্রজ ফকির ভাই : কিছু টুকরো স্মৃতি কথা

। । মিনা মিজানুর রহমান ।।

আশির দশক, দেশে সামরিক শাসন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বারুদে আগুনে বিস্ফোরণমুখ। তখন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের দিনরাত্রী আন্দোলন সংগ্রাম, পাশাপাশি আমাদেরও সাংস্কৃতিক আন্দোলন তুঙ্গে, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পথনাটক, গণসঙ্গীত লেখা, সুর করা, কবিতা এমনি একটি যুদ্ধ ক্ষেত্রের মধ্যে যখন বসবাস,একদিন সন্ধ্যায় কবি আবুবকর স্যারের ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাড়ার বাসায় স্যারের লেখা “সাম্রাজ্যবাদীর চোরা কারসাজিটা দ্যাখো মিয়া” গানটি আমি সুর করে কন্ঠে তোলার চেষ্টা করছি। এমন সময় ঝড়ের বেগে সঙ্গে এক ভদ্রলোককে নিয়ে ফকির ভাই সিদ্দিক স্যারের বাসায় ঢুকলেন। ঝাঁকড়া চুলের বাহার, মনে হচ্ছে চোখে চাহনিতে বিদ্যুৎ ঠিকরে পড়ছে, ভাঙা ভাঙ্গা কন্ঠ তবে দরাজ ভরাট শব্দ। খুব চঞ্চল ও বিচলিত মনে হলো। সিদ্দিক স্যার পরিচয় করিয়ে দিলেন, এর মধ্যে রাজনীতি সংক্ষেপে কাটাছেঁড়া অনেক কথাই হলো। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে মেনন গ্রুপ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন করি। তিনি শুনে খুব খুশি হলেন। জানলাম তিনিও মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর অনুসারি হয়ে ছাত্র জীবনে মেনন গ্রুপ ছাত্র ইউনিয়নের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এর মধ্যে চা পান করতে করতে সিদ্দিক স্যারের কাছ থেকে দুটি গণসঙ্গীত খাতা থেকে লিখে নিয়ে উধাও হয়ে গেলেন। সেই প্রথম দেখা, পরিচয় তারপর সঙ্গত কারণে সম্পর্ক আরও গাঢ় হয়েছে ,বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সেমিনারে, মঞ্চে ময়দানে তা কেবল গণসঙ্গীতের সুবাদে। কখনো শ্রদ্ধেয কামাল লোহানীর বাসায়, গণশিল্পীর মহড়ায়, অনুষ্ঠানে, গণসঙ্গীতের আর এক দিকপাল প্রয়াত শেখ লুতফর রহমান ভাইয়ের কোন মহড়ায়, অনুষ্ঠানে, রাজশাহীতে বহু অনুষ্ঠানে আড্ডায়, ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমীতে। এমনি কত সঙ্গকথা আজ ভীষণ ভাবে মনে পড়ছে। খুলনায়ও তাঁর বেশ আসা যাওয়া। খুলনার গণসঙ্গীত উৎসবে আসলেন অনেক মেলামেশা,অনেক কথা,আড্ডা,সে সব আজ কেবই স্মৃতি।

বছর ৩/৪ আগে সহরোওয়ার্দি উদ্যানে ওয়ার্কার্স পার্টির বিশাল সমবেশ, আমরা গণশিল্পীর পরিবেশনায় দীর্ঘ সময় গণসঙ্গীত পরিবেশন করছি, ফকির ভাই মেনন ভাইয়ের পাশে বসে গানগুলো শুনছিলেন, মঞ্চে উঠে ” মিনা মিজান সাবাস” বলে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আমার কয়েকটি গান একবার পছন্দ করে নিয়েছিলেন, কি করেছেন জানিনা। কক্সবাজার ট্রজেডিতে আবিদের চিরবিদায়ের পর একুশের বইমেলায় ফকির ভাই বরেণ্য তিনজনের জীবনী সম্বলিত একটি গ্রন্থ প্রকাশনা করেন, ওই তিনজনের মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা, অন্য একজনের নাম এই মুহূর্তে মনে নেই আর একজন হলো আবিদকে নিয়ে তাঁর স্মৃতিচারণ।

আমাদের মহান এই কিংবদন্তি শিল্পীর কথা মনে হলে শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের কথা মনে হয়। মনে হয় কবি বেনজামিন মোলায়েসের কথা! দেশের প্রতি,জনগণের প্রতি একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতার উদাহরণইতো শিল্পী ফকির আলমগীর। যিনি তাঁর কন্ঠ উজাড় করেছেন জনগণের মুক্তির জন্য। বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্রচিন্তায় যিনি মুক্তিযোদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। প্রবাহমান সময়ের কাছে যে শিল্পী লোভ মোহে আত্মসমর্পণ করেননি। যে শিল্পী মার্ক্সবাদী আদর্শে তাঁর কন্ঠকে জনগণের জন্য নিবেদন করেছেন, সেই মহান শিল্পী ফকির আলমগীরকে রক্তিম অভিবাদন। গণমুক্তির লড়াইয়ের গণশিল্পী কমরেড ফকির আলমগীরকে” লাল ” সালাম।।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, খুলনা জেলা ও সাংস্কৃতিক সংগঠক 

সর্বশেষ