Site icon নতুন কথা

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলন -আজ তিস্তা পাড়ে ২৩০ কিলোমিটার মানবন্ধন

রংপুর সংবাদদাতাঃ তিস্তা রক্ষার দাবিতে আজ তিস্তার দুই তীরে দীর্ঘ ২৩০ কিলোমিটার জুড়ে মানববন্ধনে মিলিত হবে উত্তর জনপদের কয়েকটি জেলার মানুষ। তিস্তা নদীর প্রবেশ মুখ বাংলাদেশের নীলফামারীর ডিমলার পশ্চিম ছাতনাই জিরো পয়েন্ট থেকে তিস্তা-ব্রক্ষপুত্রের মিলনস্থান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর পর্যন্ত দেশের সর্ববৃহৎ এই মানববন্ধনে যোগ দিবেন নদী পাড়ের লাখো জনতা। তারা মিলিত হবেন তিস্তার প্রাণ ফেরাতে। মিলিত হবেন নদী নির্ভর উত্তরের কৃষি-অর্থনীতি বাঁচাতে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে। ৩০ অক্টোবর রংপুরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে মানবন্ধন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।
নগরীর সুমি কমিউনিটি সেন্টার অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা রক্ষার সংগ্রাম করছি। ২০১৫ সালে ‘তিস্তা কনভেনশন’ করেছি। তিস্তা তীরবর্তী মানুষদের নিয়ে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ করেছি। নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে মরা নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় ও পুকুর দখলমুক্ত করার সংগ্রাম করেছি। সংগ্রাম করেছি তিস্তাসহ শাখা নদ-নদী থেকে এক্সক্যাভেটর, লোকাল ড্রেজারে বালু ও পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে। শুধু আমরাই না, তিস্তার দুই তীরে অনেক সংগঠন তিস্তা বাঁচাতে নদী বাঁচাতে সংগ্রাম-আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। এখনো আছেন। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তিস্তা পাড়ের মানুষের আশার প্রতীক তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের ডাকে দীর্ঘ মানববন্ধনে মিলিত হচ্ছি।
তিনি বলেন, তিস্তার দু’পাড়ে বিস্তৃত চরাঞ্চলের কৃষি এখন কৃষির “হিডেন ডায়মন্ড”। দেশের খাদ্য নিরাপত্তার শক্তিশালী বলয়। খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনে তিস্তা-পাড়ের আজ কৃষি বিপন্ন। কৃষক, মুটে, মজুর, মাঝি আজ দিশেহারা, ঘরহারা। আগেকার দুই কিলোমিটার তিস্তা আর বারো মাসী নদী নেই। তিস্তার তলদেশ ভরাট হয়েছে। তিস্তায় কোনো নাব্যতা নেই। শুকনো মৌসুমে মানুষ পায়ে হেঁটে চলাচল করে। তিস্তা পাড়ের মানুষ এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি চান।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ঝুঁকিতে বাংলাদেশ উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম হক্কানী আরো বলেন, রংপুর বিভাগসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে জনজীবন বিপর্যস্ত, লÐভÐ। গত মাসেও বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ছিল পানির নিচে। তিস্তা অববাহিকাসহ সব নদী অববাহিকার মানুষ ৫ মাস ধরে পানিবন্দি ছিল। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে এবার। রংপুরে হয়েছিল স্মরণাতীতকালের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১০০ বছরেও রংপুরের মানুষ এত ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হননি। বুক পানিতে ডুবে ছিল বিভাগীয় শহর রংপুর। এবার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়েছে। হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও আন্দোলনের এই নেতা আরো বলেন, আমরা তিস্তা নদীর সুরক্ষা চাই। তিস্তার জীববৈচিত্র্য রক্ষা হোক এ আমাদের প্রত্যাশা। তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা বলতে আমরা শুধু নদীর পানির কথা বলছি না। তিস্তাকে ঘিরে জীববৈচিত্র্য, তিস্তা নির্ভর মানুষের জীবন, তিস্তা অববাহিকার ব্যবস্থাপনাও কথাও বলছি। এই ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা গেলে রংপুর বিভাগীয় নগরীসহ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
তিনি বলেন, উত্তরের জীবনরেখা তিস্তা মরতে বসেছে। এখনো তিস্তাকে তার যৌবনে ফেরানো সম্ভব। অতীতের সৌন্দর্যে তিস্তাকে আবার প্রবহমান করা যাবে। নদীর বিজ্ঞানসম্মত খনন, তীররক্ষা, শাখানদীগুলো উন্মুক্তকরণ, শাখা নদী খনন করা জীবনের স্বার্থেই অপরিহার্য। বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার নির্মাণও করতে হবে। নদী-তীরবর্তী কৃষিব্যবস্থাপনা, সমবায়ী কৃষি ও কৃষকের স্বার্থ যাতে সুরক্ষিত থাকে সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিস্তার পানি আমাদের ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে পেতে হবে। সেজন্য তিস্তা চুক্তির কোনো বিকল্প আমাদের নেই।
২৩০ কিলোমিটার জুড়ে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিহাটের সদর উপজেলা, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Exit mobile version