শুক্রবার,২৬,এপ্রিল,২০২৪
29 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Homeঅনুসন্ধিৎসাস্বাস্থ্যনতুন আতঙ্কের নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

নতুন আতঙ্কের নাম ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

নতুন কথা ডেস্ক: বিশ্ব মহামারী করোনার তাণ্ডব এখনো শেষ হয় নি। এরই মধ্যে হাজির হয়েছে আরেক বিপদ। নতুন এই আতঙ্কের নাম ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’। প্রতিবেশি দেশ ভারতে মিউকরমাইকোসিস বা ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রাজধানী দিল্লিতে একদিনে ১৫৩ জনের ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বা ‘কালো ছত্রাক’ শনাক্ত হয়েছে। এ কারণে দিল্লিতে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ কে মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লির উপ-রাজ্যপাল অনিল বাইজাল এপিডেমিক ডিজিজেস আইনের অধীনে ২৭ মে এই ঘোষণা দেন। এ রোগে আক্রান্ত রোগী বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আতঙ্ক থেকে মুক্ত নয়।
জানাগেছে, ভারতে ২৭ মে পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে সংক্রমিত ১১ হাজার ৭১৭ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৮৫৯ জন সংক্রমিত হয়েছে গুজরাটে। এছাড়া মহারাষ্ট্রে ২ হাজার ৭৭০ এবং অন্ধ্র প্রদেশে ৭৬৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে সব রাজ্যগুলোর সরকারের প্রতি ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’কে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করার আহ্বাান জানিয়েছে। এই ছত্রাকে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ভারতের প্রতিটি রাজ্য, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ৮০ হাজার বোতল অ্যামফোটেরিসিন বি, ছত্রাক-প্রতিরোধক ইনজেকশন বরাদ্দ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ২৯ হাজার ২৫০ বোতল ওষুধ বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কালো ছত্রাকের সংক্রমণ সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তির জন্য বড় কোনো হুমকি নয়। তবে যাদের দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে গুরুতর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে এটি। বিশেষ করে ফুসফুস, মস্তিষ্ক, দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি হতে এবং যথাযথ চিকিৎসা না হলে এর কারণে মৃত্যুও হতে পারে।
মিউকরমাইকোসিস কি? : যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ‘সিডিসি’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুর্লভ এই ছত্রাক সংক্রমণের জন্য দায়ী ‘মিউকরমাইসিটিস’ নামক এক শ্রেণীর ‘মোল্ড’ বা ছত্রাক। ভারত ও চীনে এর আগেও এই রোগ দেখা গেছে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও এইডস রোগীর মাঝে। আর বর্তমানে যারা ‘কোভিড-১৯’ থেকে সুস্থ হচ্ছেন এবং বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ‘কিডনি’য়ের সমস্যা, ক্যান্সার ইত্যাদি দূরারোগ্য ব্যধি আছে তাদের এই ছত্রাকে সংক্রমণের শিকার হতে দেখা যাচ্ছে।
কালো ছত্রাক-লক্ষণ ও কারণ : মানব দেহে ছত্রাকের আক্রমণ নতুন কিছু নয়। চর্মরোগে অনেকেই আক্রান্ত হন। চিকিৎসকের পরামর্শে সেসব ভালোও হয়ে যায়। তবে ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ বা কালো ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানা জরুরি। কারণ এটা প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
যেভাব ছত্রাক শরীরে প্রবেশ করে : ভারতীয় সংবাদ ভিত্তিক ওয়েবসাইট, ‘ফার্স্টপোস্ট’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে মূল কারণ হল কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহের অপরিচ্ছন্ন পদ্ধতি। সেই সঙ্গে ভূমিকা রাখছে ‘কোভিড-১৯’ য়ে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বাছবিচারহীন-ভাবে ‘স্টেরয়েড’ য়ের ব্যবহার।’
কালো ছত্রাকের লক্ষণ : কালো ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নাকে ব্যথা ও ফোলাভাব দেখা দেয়, গালে প্রদাহ সৃষ্টি হয়, মুখে এবং চোখের পাতায় ছত্রাকের ছোপ দেখা দেয়। যাদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের মাথা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখে ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং এক সময় দৃষ্টি হারানোর মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে নাকের আশপাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।
ছোঁয়াচে কিনা? : এই ছত্রাক ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। একজন মানুষ থেকে আরেকজন মানুষের মাঝে ছড়ায় না।
কাদের ঝুঁকি বেশি : ‘দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস’ বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে জানায়, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, এক বা একাধিক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত এবং বিনা সতর্কতায় ‘স্টেরয়েড’ ব্যবহার করেন, তাদের এই ছত্রাকে আক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
করণীয় কী : ছত্রাক সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপণœ হতে হবে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’য়ের প্রতিবেদন অনুসারে, চিকিৎসকরা মস্তিষ্ক, সাইনাস ও নাকের ভেতরের অংশের ‘এমআরআই’ ও ‘সিটি স্ক্যান’ করবেন। পরে নাকের ভেতরের অংশে ‘এন্ডোস্কোপি’ করবেন ছত্রাক সংক্রমণ শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে। শনাক্ত হওয়ার পর সকল ‘ফাঙ্গাল’ ও ‘নারকোটিক টিস্যু’ নাকের ভেতর থেকে অপসারণ করা হবে এবং ‘অ্যান্টিফাঙ্গাল’ ওষুধের সাহায্যে চিকিৎসা চলতে থাকবে।

সর্বশেষ