Site icon নতুন কথা

নিয়ন্ত্রণহীন সিন্ডিকেট সময় থাকতে বাজার সামলান

অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। হু হু করে বাড়ছে বাজারের সব পণ্যের দাম। রীতিমতো নৈরাজ্য চলছে পেঁয়াজ, চাল, আলু ও সবজি বাজারে। আর এই বাজার অস্থিরতার জন্য দায়ি অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট। খোদ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ৮টি কারণে বাজারের অস্থিরতা বাড়ছে। যার প্রধান কারণ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আসলে ওরা ব্যবসায়ী নয়, শকুন। শকুনের দল মানুষের কষ্ট বুঝে না। আম্পান, করোনা, বন্যা আর অতি বৃষ্টিতে দেশের মানুষ কষ্টে থাকলেও মানবতাহীন এই শকুনেরা মানবতার হাত বাড়ায় না। বরং বিপদের সুযোগ নিয়ে মুনাফা লুটছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজার সিন্ডিকেট সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেও দ্বিধা করছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার চেষ্টা করছে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। উল্টো সরকারের সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সরকার পদক্ষেপ নিলে ওরা খাদ্যগুদামে চাল দেওয়া বন্ধ কিংবা পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বন্ধের হুমকি দেয়। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু বিক্রি না করে নিজেদের ইচ্ছে মতো দামেই বিক্রি করছে। এর ফলে করোনার চাপে চ্যাপ্টা হওয়া গরিব-নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। গরিবের সবচেয়ে সস্তা খাবার পেঁয়াজ আলু এবং কাঁচা মরিচ এখন বিলাসী খাবারে পরিণত হয়েছে। ভাতের থালায় ভাত কমার সাথে সাথে গরিবের পান্তা ভাতের প্রধান রসনা পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও আলু ভর্তাও নাগালের বাইরে চলে গেছে। বাজারে কোনো পণ্য ৮০ টাকার উপরে ছাড়া নিচে নয়।
চালের বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার বেঁধে দেওয়া দামে সারা দেয় নি চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সে দামকে পাত্তা না দিয়ে বরং চড়া দামেই চাল বিক্রি করছে। হঠাৎ করে আলুর দাম ৩০ থেকে এক লাফে ৭০ টাকা হলে আবারও সরকার হস্তক্ষেপ করে বাজারে। হিমাগার, পাইকারি ও খুচরাÑতিন পর্যায়েই আলুর দু’দফা বাড়িয়ে দেয়। আলু ব্যবসায়ীরাও সরকারকে পাত্তা দিল না। পাইকারিতে কিছুটা কমলেও এখনো বাজারে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু মিলছে না। এখানেও সেই সিন্ডিকেটের কারসাজি। এভাবে একের পর এক বাজার সিন্ডিকেটে সর্বনাশ হচ্ছে ভোক্তার।
শুধু চাল কিংবা আলু নয়, পেঁয়াজের বেসামাল বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার টিসিবির মাধ্যমে মাত্র ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করে। সরকার হয়তো ভর্তুকি দিয়ে বিক্রি করছে, তাই বলে বাজারে তো আর ৩৫ টাকার পেঁয়াজ ১০০ টাকা হতে পারে না। এখানেও সেই সিন্ডিকেটের কারসাজি। নেদারল্যান্ডস, মিসর, পাকিস্তান, চীন ও মিয়ানমারসহ ৮টি দেশ থেকে গত এক মাসে প্রচুর পেঁয়াজ এসেছে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লেও দামে কোনো হেরফের নেই। এখনো পেঁয়াজের বাজার সিন্ডিকেটের দখলেই আছে। গত এক মাস ধরে সবজির বাজারও বেসামাল। ১০০ টাকা ও এর আশপাশে দাম প্রায় প্রতিটি সবজির।
বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে সবজি নষ্ট হলেও বাজারে ব্যবসায়ীদের দোকান সবজিতে ভরা। থরে থরে সাজানো কাঁচা সবজি। এর কারণ যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ আশপাশের জেলা এবং কুমিল্লা ও নরসিংদী এলাকায় সবজিও আসছে প্রচুর। তা হলে সমস্যাটা কোথায়, সমস্যা সিন্ডিকেটে। সবজির বাজারের মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সবজির, লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। একই অবস্থা ভোজ্য তেলের বাজারে। গত এক মাসে দুই দফায় খোলা ও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১০ টাকার ওপরে। এখানেও তেল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। চারে দিকে শুধু সিন্ডিকেট আর সিন্ডিকেট। কিন্তু কেন বাজার সিন্ডিকেট এমন বেপরোয়া। কেন তারা সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। কেন সরকার তাদের কাছে অনেকটা অসহায়ের মতো আত্মসমর্পণ করছে-এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। তাহলে কি সরকারের চেয়েও সিন্ডিকেটের হাত লম্বা। লম্বা হতেই পারে সরকারের খাদ্যমন্ত্রী যখন বলে,“বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন”, তখন বুঝতে বাকি থাকে না বাজার চলে গেছে সিন্ডিকেটের দখলে। আর এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ দেখছেন না সাধারণ মানুষ। সমালোচনার ঝড় উঠেছে চারদিকে। অনলাইন, সামাজিক মাধ্যম এবং রাজপথে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রাজপথে নেমেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সকলে আঙ্গুল তুলছেন সরকারের দিকে। বাজার সিন্ডিকেটের কারণে ¤øান হয়ে যাচ্ছে সরকারের সব ভালো অর্জন। টানা তিনবার ক্ষমতায় আসা সরকার উন্নয়নে এগিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশকে। ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’-অপবাদ দেওয়া বাংলাদেশ আজ উন্নত বিশ্বের কাতারে। ‘ভুখা বাঙালি’বলে গালি দেওয়া পাকিস্তান আজ বলে আমরা কানাডা নয়, বাংলাদেশ হতে চাই। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। সেই অর্জন খেয়ে ফেলবে বাজার সিন্ডিকেট, তা হতে পারে না। হতে দেওয়া যায় না। তাই সময় থাকতে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। এখন কঠোর পদক্ষেপ নিন। তা না হলে গণবিস্ফোরণের দাবানল সব ভেঙে তছনছ করে দিতে পারে। অতএব সময় থাকতেই বাজার সামলান।

Exit mobile version