Site icon নতুন কথা

পাট-চিনিকলে লোকসানের জন্য শ্রমিক নয়, আমলারাই দায়ী: বাদশা

Rajsahi_WPB

বক্তব্য রাখছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি - নতুন কথা

নতুন কথা রিপোর্ট : রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল ও চিনিকল বন্ধের পেছনে লোকসানের যে কারণ দেখানো হচ্ছে তার জন্য শ্রমিকরা নয় বরং আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই দায়ী করেছেন- বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। তিনি বলেছেন, পাট ও চিনিকলে লোকসানের নেপথ্যে শ্রমিকদের দায়ী করা হচ্ছে। কিন্তু কারখানা তো শ্রমিকেরা পরিচালনা করেন না। এগুলো পরিচালনা করেন, বিজেএমসি এবং চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা। তবে কারখানাগুলো যদি লোকসান গুনে থাকে, তার দায় কেবল শ্রমিকরা কেন নেবেন? কেন মন্ত্রী-সচিব-চেয়ারম্যানরা নেবেন না?

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে বাংলাদেশের ১৫টি চিনিকলের আখচাষী ও শ্রমিক কর্মচারীদের এক প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। নাটোরের এনএস কলেজের অডিটোরিয়ামে আখচাষী সমিতি, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও চিনিকল শ্রমিকরা যৌথভাবে এই প্রতিনিধি সভার আয়োজন করেন।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পাটলিল্প আমাদের জীবন-জীবিকা ও ঐতিহ্যের অংশ। এটিকে কখনও লাভ-লোকসানের পরিমাপে বিবেচনা করা যাবে না। পাটলিল্পকে রাষ্ট্রীয়করণ করার অর্থই হচ্ছে- রাষ্ট্র স্বয়ং এই শিল্পকে প্রতিপালিত করবে। এই শিল্পকে জাতীয় শিল্প হিসেবে বিবেচনা করা হবে। চিনিকলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।’ আমাদের মনে আছে, পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলে একটি ‘কালো’ আইন জারি করা হয়েছিল। সে সময় আমাদের দেশের আখচাষী ও পাটচাষীরা সেই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, জীবন পর্যন্ত দিয়ে পাট ও চিনিকলগুলোকে সচল রেখেছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর সেই প্রতিশ্রুতিকে উপেক্ষা করে বর্তমান সরকার লোকসানের কথা বলে পাট ও চিনিকল বন্ধ করে দিচ্ছে। কাদের জন্য লোকসান এমন প্রশ্নে তারা শ্রমিকদের দিকে আঙ্গুল তুলছেন। অথচ বিজেএমসি এবং চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার যে বিশাল দুর্নীতিবাহিনী বসে আছে, তাদের বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো- সেই কতিপয় দুর্নীতিগ্রস্ত আমলারাই কারখানাগুলোতে লোকাসানের ক্ষেত্রে মূল দায়ী। সরকারি পাটকলগুলো লোকসান দিয়েছে সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে।’

রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘দেশের সরকারি চিনিকলগুলোকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার ক্ষেত্রে চীন, জাপান ও থাইল্যান্ড বিজেএমসি এবং চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার কাছে বাণিজ্যিক প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তারা সেই প্রস্তাবকে কানেই তোলেননি। অতএব সরকারি পাট ও চিনিকলে অদক্ষতা, কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, পুরোনো মেশিন পরিচালনা, উৎপাদনে সিস্টেম লস, অধিক খরচে পরিচালনা ব্যয় ও বিপণন অদক্ষতাই লোকসানের অন্যতম কারণ। সে ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শ্রমিকেরা কেন কাফফারা দেবেন? শ্রমিকদের যারা পরিচালনা করছেন, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।’
যাদের জন্য স্বাধীনতা তারাই আজ সব থেকে বঞ্চিত মন্তব্য করে ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে ছাত্র সমাজের পাশাপাশি কৃষক-শ্রমিকদের অবদানও কম নয়। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামের কৃষক-শ্রমিকের বাড়িতে মাসের পর মাস অবস্থান করেছিলেন। তাদের দেয়া খাদ্য, আশ্রয় ও আনুসঙ্গিক সহযোগীতার কারণে মুক্তিবাহিনী খুব অল্প সময়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। আমরা ভুলে গেলে চলবে না, তাদের সেই ত্যাগ ছাড়া কখনোই লাল সবুজের পতাকা অর্জন করা সম্ভব হতো না। কিন্তু দু:খের সাথে বলতে হয়, যাদের জন্যই এই মানচিত্র-পতাকা পাট ও চিনিকল বন্ধ করে তারেই আজ বঞ্চিত করা হচ্ছে। বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে তাদের মহান ত্যাগের সাথে।’

প্রতিনিধি সভায় দেশের ১৫টি চিনিকল থেকে আগত আখচাষী ও শ্রমিক কর্মচারীদের উদ্দেশে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘সরকার যে সিদ্ধান্তই গ্রহণ করুক না কেন- ওয়ার্কার্স পার্টি আপনাদের পাশে সবসময় আছে। আমরা বিশ্বাস করি, এদেশের কৃষক-শ্রমিক না বাঁচলে কেউই বেঁচে থাকবে না। আজ আপনাদের দুঃখের দিন। এই দুঃখ অন্য কেউ না বুঝলেও ওয়ার্কার্স পার্টি বোঝে। তাই আমরা চাই, আপনারা সকলে আরও ঐক্যবদ্ধ হন। কারখানায় কারখানায় আমাদের আওয়াজ পৌঁছে দিন। ইতিহাস বলে, শ্রমিকশ্রেণি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন সংগ্রামই কঠিন নয়। সুতরাং আশা করি এই আমাদের লড়াইও বিফলে যাবে না।‘

সভায় সভাপতিত্ব করেন উত্তরবঙ্গ চিনিকল আখচাষী সমিতির গোপালপুরের সভাপতি শ্রমিক নেতা অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- জাতীয় কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম গোলাপ ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি কামরুল আহসান। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন- নাটোর আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. লোকমান হোসেন বাদল, নাটোর জেলা শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিজান।

এদিকে, প্রতিনিধি সভা শেষে ১৫টি চিনিকলের আখচাষী ও শ্রমিক কর্মচারীদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ আখচাষী ও চিনিকল রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ’ নামের ৩০জন বিশিষ্ট একটি নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় উত্তরবঙ্গ চিনিকল আখচাষী সমিতির গোপালপুরের সভাপতি অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিলকে। জানা গেছে, এই কমিটির নেতৃত্বেই পাট ও চিনিকল রাষ্ট্রীয়ভাবে আধুনিকায়ন করে আবারও চালু করার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

Exit mobile version