মঙ্গলবার,১৮,নভেম্বর,২০২৫
23 C
Dhaka
মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৮, ২০২৫
প্রচ্ছদসীমানা পেরিয়েপারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর

পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর

জাপানের হিরোশিমা শহরে বুধবার সকালবেলা এক নীরব প্রার্থনার মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হলো মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এক মুহূর্ত। ৮০ বছর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফেলা পারমাণবিক বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যায় এই শহরটি। এ উপলক্ষে এ দিনে হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে আয়োজিত স্মরণানুষ্ঠানে অংশ নেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই সেখানে বলেন, জাপানই একমাত্র দেশ, যে যুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের সরকার এমন একটি জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করে, যারা প্রকৃত ও স্থায়ী শান্তির স্বপ্ন দেখে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরপর পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পর জাপানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে। দুই শহরে নিহত হন দুই লক্ষাধিক মানুষ। অনেকে নিহত হন তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণে। আবার অনেকে বিকিরণজনিত অসুস্থতা ও পোড়া ঘায়ের ফলে প্রাণ হারান। এই অস্ত্রের ভয়াবহতা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন বেঁচে যাওয়া মানুষরা। ৮০ বছর আগে ৬ বছর বয়সী শিশু শিনগো নাইতো সেদিন হারান তার পিতা ও দুই ছোট ভাইবোনকে। বিস্ফোরণে অন্ধ ও দগ্ধ পিতা তার হাত ধরতেও পারেননি।

শিনগো নাইতো বলেন, আমার বাবার চামড়া দেহ থেকে ঝুলে পড়ছিল। তিনি চোখে কিছুই দেখতে পেতেন না। নাইতো এখন হিরোশিমার একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার অভিজ্ঞতা ভাগ করেন। ওই সব শিক্ষার্থী এই স্মৃতি নিয়ে চিত্রকর্ম তৈরি করছেন। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করার দাবিতে কাজ করা জাপানি সংগঠন নাইহন হিদানকিয়ো নোবেল শান্তি পুরস্কার পায়।
বুধবার মেয়র মাতসুই তার বক্তব্যে বৈশ্বিক সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, বর্তমান বিশ্বে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও পারমাণবিক অস্ত্রকে জাতীয় নিরাপত্তার অপরিহার্য অংশ হিসেবে দেখার প্রবণতা বাড়ছে। এ ধারা ইতিহাসের শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক শান্তি কাঠামোর প্রতি অবজ্ঞা। তিনি আরও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে নন-প্রোলিফারেশন চুক্তি কার্যকারিতা হারানোর দ্বারপ্রান্তে। সেইসঙ্গে জাপান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান- পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি, ২০২১ সালে কার্যকর হওয়া ‘ট্রিটি অন দ্য প্রোহিবিশন অব নিউক্লিয়ার উইপন্স, যাতে এখন পর্যন্ত ৭০টিরও বেশি দেশ স্বাক্ষর করেছে- তাতে জাপান যেন অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোএই চুক্তিকে সমর্থন করেনি, বরং পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিরোধ ক্ষমতার যুক্তি দেখিয়ে বিরোধিতা করেছে। জাপানও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ছাতার আওতায় থাকায় এ চুক্তি থেকে দূরে রয়েছে।

পারমাণবিক বিস্ফোরণে ক্যান্সারে আক্রান্ত জীবিত বেঁচে থাকা আরেকজন সাইতোশি তানাকা বলেন, গাজা আর ইউক্রেনে চলমান রক্তপাত আমার নিজের যন্ত্রণার কথাই মনে করিয়ে দেয়। ধ্বংসস্তূপ, পালিয়ে বেড়ানো শিশু ও নারীদের দেখলে মনে হয় আমি যেন আবার সেই সময়ের মধ্যেই ফিরে গেছি। তিনি আরও বলেন, আমরা এমন অস্ত্রের পাশে বাস করছি, যা বারবার মানবজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রনেতাদের চাপে রাখা। বিশ্ববাসীকে আরও উচ্চকণ্ঠ, আরও প্রতিবাদী ও একত্রিত হতে হবে।

সর্বশেষ