Site icon নতুন কথা

বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত ষড়যন্ত্রকারীদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে: সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন

 ডেস্ক রিপোর্টঃ “সভ্যতার ইতিহাসে বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যদিয়ে ১৯৭৫ সালে দেশ-বিদেশী চক্রান্তে ষড়যন্ত্রকারীরা বাঙালী জাতির অগ্রযাত্রা ও ৩০ লক্ষ শহীদানের তাজা রক্তে অর্জিত মহান স্বাধীনতাকে নিশ্চিন্ন করতে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মেতে ওঠে। এই অপশক্তি সেদিনের হত্যার বিচার কার্যক্রম বন্ধ করার হীন মানসে পরবর্তীতে মহান সংবিধানে কুখ্যাত ইনডেমেনিটি আদেশ সংযোজন করে। এই কলঙ্কিত ইতিহাসের মূল নায়করা অনেকেই এখনো চিহ্নিত হয়নি। জাতীয় অগ্রযাত্রা ও ইতিহাসের অগ্রযাত্রার স্বার্থে আমরা মনে করি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং কুখ্যাত জেল হত্যার সঠিক ইতিহাস খুজে বের করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ও ষড়যন্ত্রের মূল নায়কদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”

শুক্রবার (১৩ আগস্ট ২০২১) বিকাল ৫টায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের আয়োজনে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার বক্তারা এসব কথা বলেন।সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ কে আজাদ।
আলোচনায় অংশ নেন সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, প্রেসিডিয়াম সদস্য রামেন্দু মজুমদার, ডা. সারওয়ার আলী, খুশী কবির, রাশেদা কে চৌধুরী, রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, ড. সৈয়দ আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী ও সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চের সদস্য সচিব ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার প্রমুখ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মৌলভীবাজার জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য, অারপি নিউজের সম্পাদক ও বিশিষ্ট কলামিস্ট কমরেড সৈয়দ অামিরুজ্জামান; এডভোকেট অাওলাদ, সৈয়দ জাহিদুল ইসলাম মিলন, এডভোকেট মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, এমসিডার সভাপতি মিজানুর রহমান অালম, সাংবাদিক সৈয়দ ছায়েদ অাহমেদ, মেজবাহ অাহমেদ, কাজী সালমা সুলতানা, নাসির উদ্দিন বিপ্লব, মমিনুল ইসলাম, ময়নুল সুমন, মুকির হোসেন চৌধুরী, নন্দলাল পার্শী, ফেরদৌস লিপি, জাহাঙ্গীর অালম, জয়ন্তী রায়, জুবায়ের অালম, মানিক, অাব্দুল অালিম, অাজহারুল ইসলাম জুয়েল, সামওয়ার সামসী, মিজানুর রহমান মজুমদার সহ অন্যান্যরা।

ভার্চুয়াল আলোচনায় সুলতানা কামাল বলেন, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে দেশের সর্বস্তরের জনগণের সাথে ব্যাপক সংখ্যক নারীদের অংশগ্রহন আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে নতুন মাত্রা দেয়। বঙ্গবন্ধু তার শাসনকালে নারীদের অগ্রযাত্রা ও নারী স্বাধীনতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাঁর শাসন কার্য পরিচালনা করেন। আমরা অতি দুঃখ ও হতাশার সাথে লক্ষ করছি নারী ও শিশু নির্যাতন আজ নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনই হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাজ্ঞাপন।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, নৈতিক অবক্ষয় আমাদের অনেক অর্জনকে ধ্বংস করে চলছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন, আদিবাসী নির্যাতন সহ সকল অত্যাচার অনাচার আমাদের কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তাহলেই আমরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রকৃত সন্মান দেখাতে পারবো।

ডা. সারওয়ার আলী বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল না। এটি ছিল ধর্ম ভিত্তিক ও সামরিক শাসন ভিত্তিক রাষ্ট্রের বিপরীতে অসাম্প্রদায়িক ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্রের আন্দোলন। বঙ্গবন্ধু সত্যিকার অর্থেই একটি প্রততিশীল, ধর্ম নিরপেক্ষ ও সাম্যের বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। তাই ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড ছিল পাকিস্তানীভাব ধারায় ফিরে যাওয়ার একটি অপচেষ্টা।

নারী নেত্রী খুশী কবির বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকেই হত্যা করা হয়েছে। আমাদের যে চার মূলনীতিকে সংবিধান থেকে মুছে ফেলা হয়েছে তার প্রতিস্থাপনই হবে আজকের দিনের মূল দাবি।
শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কিভাবে আজ ধর্মন্ধতাকে উস্কেদিয়ে শিক্ষাকে দ্বিধাবিভক্ত ও সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হচ্ছে তা বিশ^য়ের সাথে লক্ষ করছি। বঙ্গবন্ধুই শিক্ষাকে জাতীয় করণের মাধ্যামে সার্বজনীন করেছিলেন। আজ সময়ের দাবি, শিক্ষা আইনে অসাম্প্রদায়িক একমুখী শিক্ষানীতি গ্রহন করে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার সোনার মানুষ গড়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হোক।
অধ্যাপক মামুন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে মূলত পাকিস্তানী ভাবধারার সামরিক ও বেসামরিক আমলারাই নেপথ্যের নায়ক হিসেবে কাজ করেছেন।

সভাপতির ভাষণে জননেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মূলত মুক্তিযুদ্ধকেই হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাকের লুজ কনফেডারেশন এর বিপরীতে তাজউদ্দিন আহমেদ এর বিশ^ শান্তি আন্দোলনের মূল ধারায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিষ্ঠা করা ছিল অন্যতন একটি সফল পদক্ষেপ, যা রাশিয়া ও ভারতকে বাংলাদেশের মিত্র শক্তি হিসেবে পেতে সহযোগিতা করে। ফলে আমাদের মুক্তি আন্দোলন সহজতর হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বাম ও প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দের অকুতভয় অবস্থান আমাদের বিপ্লবী সরকারকে আরো বেশী আস্থাশীল করে। সকল প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক শক্তির সহ-অবস্থানই হবে মুক্তিযুদ্ধের মূলচেতনায় ফিরে যাওয়া ও বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মূল স্বোপান।

Exit mobile version