শুক্রবার,২৯,মার্চ,২০২৪
24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়বজ্রপাতে সতর্ক থাকুন

বজ্রপাতে সতর্ক থাকুন

আমরা প্রকৃতির সাথে যে নির্মম ব্যবহার করেছি, প্রকৃতি নানাভাবে তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। কখনো ঘূর্ণিঝড়, কখনো শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি আবার কখনো অকাল বন্যায় তার প্রতিশোধ নিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে ভয়াবহ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো বজ্রপাত। দিন দিন এর ভয়াবহতা বাড়ছে। বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যু। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত সপ্তাহে বজ্রপাতে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব জিওগ্রাফির অধ্যাপক ড. টমাস ডাব্লিউ স্মিডলিন এক গবেষণায় বলেছেন, “প্রতিবছর মার্চ থেকে মে পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪০টি বজ্রপাত হয়।” গত ৮ বছরে প্রায় ১৭’শ-এর বেশি মানুষ বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছে। ২০১৫ সালে সরকার বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই বছর বজ্রপাতে ১৮৬ জনের মৃত্যু হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, বছরে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হয়।
এখন প্রশ্ন হলো এই বজ্রপাত কেন হয়? বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশি^ক উষ্ণতার কারণে আবহাওয়া ও জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এর ফলে বৃষ্টিপাতের ধরণ ও সময় পরিবর্তন হয়েছে। কালবৈশাখীও বেশি হচ্ছে। বাড়ছে বজ্রপাতের পরিমাণ। বায়ু দূষণও বজ্রপাতের একটি অন্যতম কারণ। এ কারণেও বজ্রপাত বাড়ছে। আগে গ্রামে তালগাছ, বটগাছসহ উঁচু গাছের পরিমাণ বেশি ছিল। উঁচু গাছে বজ্রপাত অ্যাসজর্ব করে নিত। এখন তা না থাকায় খোলা মাঠে বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যু। শহরে উচুঁ ভবন থাকার কারণে অনেকটা রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে।

বজ্রপাতের এই মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সকলকে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের সময় ঘরেই থাকুন। ঘনকালো মেঘ দেখা দিলে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না। এছাড়া বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠ ও ধান খেতে থাকলে পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে কানে আঙ্গুল দিয়ে মাথা নিচু করে থাকতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বজ্রপাতের সময় যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। অবশ্যই উঁচু গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে। গাড়ীর ভিতরে থাকলে সম্ভব হলে গাড়ি কোনো ছাউনির নিচে নিতে হবে। বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারন্দায় থাকা যাবে না। জানালা ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বন্ধ রাখতে হবে। কোনোভাবেই মোবাইল, ল্যাপ্টপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজ চালানো যাবে না। এছাড়া আরো অনেক কিছু মেনে চলতে হবে। মোটকথা বজ্রপাত থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে পদক্ষেপ নিতে হবে। গণমাধ্যমে বজ্রপাতের ভয়াবহতা ও সতর্কতা নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। জেলা ও উপজেলায় প্রশাসনের সাহায্যে সারাদেশে বজ্রপাত সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে বেঁচে থাকতে যেমন কর্ম করতে হবে, দৈনন্দিন জীবন পরিচালনা করতে হবে, তেমনি বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহতা থেকেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এদেশের সাধারণ মানুষ আজো বজ্রপাতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন নয়। কিভাবে বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে হয় তাও তারা জানে না। অতএব মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকেই নিতে হবে। আমাদেরকেও অবহেলা না করে বজ্রপাত সম্পর্কে আবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। আমরা বজ্রপাতে সতর্ক থাকব-এটাই প্রত্যাশা।

সর্বশেষ