Site icon নতুন কথা

বিদায় ৭১-এর রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা-কমরেড হায়দার আনোয়ার খান জুনো

নতুন কথা ডেস্ক \ একে একে বিদায় নিচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধ-অসাম্প্রদায়িক চেতনা রক্ষা এবং প্রগতিশীল মুক্তচিন্তা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের উজ্জ্বল নক্ষত্রসমূহ। এবার বিদায় নিলেন ’৭১-এর রণাঙ্গনের সম্মুখ যুদ্ধের আরেক সাহসী সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড হায়দার আনোয়ার খান জুনো। ১১ দফার অন্যতম রচয়িতা ঊনসত্তরের গণঅভুত্থানের সংগঠক বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সমন্বয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য কমরেড জুনো গত ২৯ অক্টোবর দুপুর ১ টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনি রোগে ভুগছিলেন এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে কমরেড জুনোর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনি ১ কন্যা, ১ পুত্র ও ৩ নাতিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড হায়দার আনোয়ার খান রনো’র ছোট ভাই কমরেড জুনোর জন্ম ১৯৪৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কলিকাতায়। পৈতৃক নিবাস নড়াইল জেলার বরশুালা গ্রামে। বাবা হাতেম আলী খান ছিলেন পেশায় প্রকৌশলী। আর নানা প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ সৈয়দ নওশের আলী।
রাজনীতির হাতেখড়ি স্কুল জীবন থেকেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এমএসসি পাশ করলেও রাজনীতিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। পাকিস্তান শাসনামলে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সক্রীয় কর্মী ছিলেন। পরে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন গঠিত হলে এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় কমরেড হায়দার আনোয়ার খান জুনো নরসিংদীর শিবপুরে কমাÐার হিসেবে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি ইউনাইটেড কমিউনিস্ট পার্টির(ইউপিপি) সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হন। ১৯৮১ সালে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হন। তিনি বাংলায় পদার্থ বিজ্ঞানের ওপরে বই ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ওপর শিবপুরের রনাঙ্গণ, ঊনসত্তরের দিনগুলি এছাড়াও ১টি উপন্যাস লিখে গেছেন। রাজনীতি পরবর্তীকালে তিনি সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন এবং গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট ও সৃজনের সভাপতি ছিলেন। তিনি টিভি চ্যানেল বাংলা ভিশনের সাথেও যুক্ত ছিলেন। ছিলেন বাংলাদেশ-কিউবা সংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কমিউনিস্ট রাজনীতিবিদ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক হায়দার আনোয়ার খান জুনোর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড ফজলে হোসেন বাদশা। এছাড়া শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সিপিবি সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদর উদ্দীন উমর, বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ঢাকা মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড আবুল হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক কিশোর রায় সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

Exit mobile version