বৃহস্পতিবার,২৫,এপ্রিল,২০২৪
32 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়শোক কথাভাষাসৈনিক,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মীর আনিছুল হক পেয়ারার মহাপ্রয়াণে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

ভাষাসৈনিক,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক মীর আনিছুল হক পেয়ারার মহাপ্রয়াণে ওয়ার্কার্স পার্টির শোক

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো’র সদস্য,রংপুর জেলা সভপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী রংপুরের ভাষা সৈনিক,মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক,বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ,শিক্ষক এবং বরেণ্য ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মীর আনিছুল হক পেয়ারার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।তিনি তার শোক বিবৃতিতে বলেন,রংপুরে ভাষা আন্দোলনের বীজ রোপনের সূচনালগ্নে তিনি রংপুর জেলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন।ভাষা আন্দোলনে তার সক্রিয়তার খবর জানাজানি হলে তৎকালীন রংপুর জেলা স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়।পরবর্তীতে আদর্শ স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে তিনি ১৯৫২ সালে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন।সেই সময়কালে কারমাইকেল কলেজ ছিল ভাষা আন্দোলনের শক্তিশালী কেন্দ্র।তিনি কারমাইকেল কলেজে অন্যান্য ছাত্র নেতাদের সাথে গোটা রংপুর জেলায় ভাষার লড়াইকে বেগবান করতে মিছিল মিটিং,সমাবেশ সহ নানামুখী কর্মযজ্ঞে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।ভাষা লড়াইয়ের উত্তাল মূহুর্তে রংপুরের রাজপথে তিনি ছিলেন সামনের কাতারের অন্যতম ভাষা সৈনিক।ভাষা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে কারমাইকেল কলেজের সেই সময়কালের অবাঙালি অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিনের সাথে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের শলাপরামর্শে অনেক ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়।মীর আনিছুল হক পেয়ারা হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্বগোপনে ভাষা আন্দোলন জোরদার করার কাজে নিজকে উৎসর্গ করেছিলেন।১৯৫৪ সালে তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের পর কিছুটা ইতিবাচক আবহ সৃষ্টি হলে তিনি ১৯৫৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে পরীক্ষায় পাস করেন।রাজনীতির কর্মকান্ডে ধারাবাহিক অংশগ্রহণের কারণে তার উপর নেমে আসে জুলুম।১৯৫৬ সালে আবারো তিনি আত্বগোপনে চলে যান।৬ দফা আন্দোলনে তিনি কারাভোগে ছিলেন দুইমাস।১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন,৬ দফা,৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে রংপুরের রাজনীতিতে তাঁর অবস্থান ছিল অগ্রণী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন।এবং আওয়ামীলীগের তৎকালিন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ভাষাসৈনিক প্রয়াত শাহ্ আব্দুর রাজ্জাক’র সঙ্গে তিনি মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং সেন্টারে ” মুক্তিযুদ্ধের” সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি শিক্ষকতার পেশাকে জীবনের মহান ব্রত হিসেবে বেঁচে নেন।শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি জীবনের একটা বড় সময় ব্যয় করেছেন ক্রীড়া, সাহিত্য,সংস্কৃতি এবং সামাজিক কর্মকান্ডে।তিনি রঙ্গপুর গবেষণা পরিষদ,রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ,সারথী একাডেমীসহ নানা সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের কাজে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তিনি ছিলেন আপোদমস্তক অসাম্প্রদায়িক,প্রগতিশীল,মুক্তমনা,বিজ্ঞাণ মনস্ক সাদামাটা স্বভাবের স্পষ্টভাষী মানুষ।বঙ্গবন্ধু’র একান্ত সহচর মীর আনিছুল হক পেয়ারা রাজনীতিকে গ্রহন করেছিলেন মানবকল্যান, মানবমুক্তির ব্রত হিসেবে।রাজনীতির দূর্নীতি,দুর্বৃত্তায়ণ, সাম্প্রদায়িকতাকে তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কালজয়ী সংগ্রামের কিংবদন্তিতুল্য মহানায়ক মীরআনিছুল হক পেয়ারা ৩০ মে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন(ইন্না–রাজেউন)।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।তার মৃত্যুতে যে শুন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়।হক্কানী প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করে তার কালজয়ী সংগ্রামের স্মৃতিতে নিবেদন করেন শ্রদ্ধাঞ্জলি।শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানান গভীর সমবেদনা।

সর্বশেষ