মামুনুলিয় মানবাধিকার

“মামুনুলিয় মানবাধিকার” নিয়ে হেফাজতি সমর্থকেরা সামাজিকমাধ্যমে সোচ্চার আছে। এরা তাদের যৌন অপরাধী লম্পট নেতার পক্ষে দাঁড়াবে সেটাই স্বাভাবিক। “মামুনুলিয় মানবাধিকার” নিয়ে প্যাথলজিকাল আওয়ামীবিরোধীরাও সোচ্চার আছে। কেন মামুনুলের “অবাধ প্রেম” এর পথে আওয়ামীলীগ কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছে, এটা তাদের অনেক দুঃখ। আসলে আপনাদের দুঃখের কোন কারণ নেই, আওয়ামিলীগের লোকেরা মামুনুলকে আটকে রাখতে পারেনি, আটকাতে চায় বলেও মনে হয়না। “মামুনুলিয় মানবাধিকার” নিয়ে রেজিমচেঞ্জের পক্ষের লোকেরাও উত্তেজিত, কারণ মামুনুলের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে, রাষ্ট্রের মরাল পুলিশিং বেড়ে গেছে, ফলে এই সরকারের পতন এখন প্রধান দাবী। “মামুনুলিয় মানবাধিকার” নিয়ে যাত্রাপালার বিবেকরাও হাজির। “মামুনুলের মানবাধিকার নিয়ে আপনাদের পরান কেন কান্দেনা? আপনারা মূর্খ, বুঝতেছেন না, মামুনুলের লাম্পট্য একটি তুচ্ছ ব্যাপার। আসল ব্যাপার হল মামুনুলের সাথে ঘটে যাওয়া রাষ্ট্রের অন্যায়।” গ্যালারিতে বসা লোকজন, আমপাবলিক যারা বিনোদন চায়, তারা একটি যৌনগন্ধী বাংলাসিনেমা দেখার আনন্দ পেয়েছে, খুশি হয়েছে সন্দেহ নেই। একটি বদমাশ ভিলেন, টিপিকাল রাজাকার চরিত্র, দাঁড়ি টুপী আছে, নৈতিকতার শিক্ষা দিয়ে বেড়ায়, “ধরা খাইছে। আল্লায় বিচার করছে!” এখানে ভাই দুইটা বিষয় আছে। এক; হেফাজতের রাজনীতি। আরও সুস্পষ্ট ভাবে বললে ১৩ দফা। এই তের দফা যারা বাস্তবায়ন করতে চায়, তারা কেমন মানুষ? সাধারণ জনগণ মামুনুলের আচরণের মধ্য একটি নমুনা পেয়েছে। সাধারণ মানুষ মামুনুলদের চরিত্র সম্পর্কে বিস্তারিত বুঝতে চায়। এই সময়ে, আপনি যদি “মানবাধিকারের” হিজাব দিয়ে মামুনুলের তথা হেফাজতের নেতৃত্বের চরিত্র আড়াল করতে নানা তত্ত্ব কথা নিয়ে আসেন, আমি আপনকে হেফাজতের পরোক্ষ সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করি। আপনি যত বড় বোদ্ধাই হন না কেন। দুই, বাংলাদেশে মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে আলাপ করতে চান? সত্যি চান না কি এগুলো উপলক্ষ্য করে আপনার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চান? সত্যি যদি মানবাধিকার, আইনের শাসন, বাক স্বাধীনতা নিয়ে আপনি চিন্তিত থাকেন, এব্যাপারে সৎ মানুষ হন, তাহলে আসেন বাংলাদেশের সমাজে যে সকল বৈষম্য ও সহিংসতা আছে, সেগুলোর মুলকারণ নিয়ে আলাপ করি। যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, তা কাঠামোগত বা সিস্টেমিক বৈষম্যের ফল। মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশের বৈষম্যমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার একটি উপসর্গ মাত্র। এই গোটা ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামের মধ্যদিয়েই সকল শ্রেণীর নারী-পুরুষের মানবাধিকার নিশ্চিত হতে পারে। নীতিকথা আওড়ানো সহজ, সমস্যার মুলে যাওয়া একটু কঠিন। আর ব্যবস্থা বদলানোর কাজটি আরও কঠিন। কিন্তু মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে, কঠিন কাজেও হাত দেয়া যায়। আসুন এই বৈষম্য ও সহিংস ব্যবস্থা বদলের আলোচনায় যোগ দেই।

লেখকঃ খান আসাদ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক।