বৃহস্পতিবার,২৫,এপ্রিল,২০২৪
32 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeনারী কথামৃত্যুদন্ডে ধর্ষণ কমবে কি!

মৃত্যুদন্ডে ধর্ষণ কমবে কি!

নতুন কথা প্রতিবেদনঃ ধর্ষণ! আধুনিক সভ্য সমাজে এক আদিম বর্বরতার বিভৎস রুপ। নারীর প্রতি মানুষরূপী পশুদের এই হিং¯্র রূপটি সাম্প্রতিক সময়ে মহামারী আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণ, গণধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা লোমহর্ষক ঘটনায় বিবেকবান মানুষরা শিউরে ওঠলেও ধর্ষকরুপী ওই পশুদের বিবেক মোটেও জাগ্রত হয় না। বরং তারা আরো বেশি উল্লাসে মেতে উঠে। সামাজিক মাধ্যম, প্রিন্ট, ইলেট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে যতো সমালোচনার ঝড় বইছে ততো নরপশুর দল বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তীব্র গণআন্দোলনে ক্ষমতাসীন সরকার ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদÐের বিধান রেখে ধর্ষণবিরোধী আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে। রাষ্ট্রপ্রতি স্বাক্ষরিত এই অধ্যাদেশ দ্রæতই কার্যকর হবে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে মৃত্যুদন্ডে কী ধর্ষক নামের ওই পশুদের থামানো যাবে!বিশ্লেষকরা বলছেন, কেবল আইনের পরিবর্তন নয়, এর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। বেরিয়ে আসতে হবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে। কারণ ধর্ষণবিরোধী পূর্বের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের বিধান ছিল, কিন্তু বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ধর্ষকরা এমন জঘন্য অপরাধ করতে দ্বিধা করে না।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক, সামাজিক সংস্কৃতিক সংগঠন, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা একযোগে সোচ্চার হয়ে উঠেন। সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রীসভার বৈঠকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি নতুন সংশোধিত আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করেন। এই আইনকে সাধুবাদ জানালেও অনেকেই আইন দিয়ে বা সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ কমানো যাবে কিনা, এ নিয়ে সংশয়-সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আইনবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা বলেছেন, শুধু মৃত্যুদন্ডের বিধান রেখে অইন সংশোধন করলে কাজ হবে না। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণাদি, আলামত সংরক্ষণ, সর্বোপরি ধর্ষণ যে একটি সর্বগ্রাসী সামাজিক অবক্ষয় এ বিষয়টিও মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। তদুপরি আইনি শাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ, তদন্তকারী সংস্থা, প্রসিকিউশন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবার সবারই সমন্বিত একাগ্রতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও আন্তরিকতাসহ কাজ করা উচিত। আসকসূত্রে জানা যায় যে, এবছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে পর্যন্ত সারাদেশে প্রায় ৯০০ নারী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তন্মধ্যে ৪১ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এটি গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত সংবাদ, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। জানাগেছে, দেশের বিভিন্ন আদালতে নারী নির্যাতনের ১ লাখ ৬৫ হাজার মামলা দীর্ঘদিন যাবত ঝুলে আছে। এসব মামলার সিংহভাগই ধর্ষণের মামলা। ধর্ষণ মামলার বিচার হওয়ার নজির খুবই কম। দু-একটা বিচার হলেও সাজা হয় খুবই সংক্ষিপ্ত সময়ের। ফলে অপরাধীরা সাজা ভোগ করে পুনরায় ছাড়া পেয়ে আরো বড় অপরাধে জড়ায়।

বিশেষজ্ঞ মহল ও সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আইনটা সরকার গণদাবির মুখেই করেছে। তবে আইনের মাধ্যমে ধর্ষক দানবদের রুখতে হলে আইন প্রয়োগে যথাযথ ও কঠোর হতে হবে। ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যত নারী নির্যাতন মামলা দায়ের হয়েছে তন্মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ রায় হয়েছে। এর ০.৪ ভাগ বিচার ধর্ষিতার পক্ষে গেছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে রায় শেষ পর্যন্ত নির্যাতিতার পক্ষে যাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। তাই মৃত্যুদন্ডের বিধান যুক্ত করাই শেষ কথা নায়। শুধু ফাঁসি দিয়ে দিলে এই আইন পজেটিভ হবে না। বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা, তদন্ত সংস্থার ভ‚মিকা, ভিকটিমের নিরাপত্তা এসব বিষয়ও সরকারকে মাথায় রেখে এগোতে হবে। পাশাপাশি সমাজের মানুষকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে। ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টাতে হবে। তবেই ধর্ষণ নামক এই মহামারীর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।

সর্বশেষ