Site icon নতুন কথা

মোজাম্মেল হক গাজী ছিলেনকৃষক আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক

নীলফামারী প্রতিনিধি: তেভাগা আন্দোলনের শক্ত ঘাটি ছিল ডিমলা।তেভাগার ঐতিহ্যের পথ ধরে সত্তর,আশি ও নব্বই দশকে ডিমলার মাটিতে যতো কৃষক-খেতমজুরদের আন্দোলন হয়েছে তার অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন মোজাম্মেল হক গাজী।খাস জমির উপর ভূমিহীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা,সারের দাবিতে উপজেলা ঘেরাও,তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন, কৃষকের গরু চুরিসহ কৃষক সংগ্রামের প্রতিটি ইস্যুতেই মোজাম্মেল হক গাজী ছিলেন লড়াই- সংগ্রামের সামনের কাতারের যোদ্ধা।কৃষক আন্দোলনের ইস্যু কি হবে- তা তিনি বই থেকে আবিস্কার করেননি।কৃষক সংগ্রামের ইস্যু তিনি কৃষকের জীবন থেকেই তুলে এনেছেন।আশির দশকে স্হানীয় অসংখ্য ছোটোবড়ো লড়াই সংগ্রামের ভিতের ওপর দাঁড়িয়েই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ অঞ্চলের পার্টি নেতা আজিজ মাষ্টার ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।কৃষকের মধ্যে অনেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন ইউপি সদস্য।১৪ জুন সোমবার দুপুরে ডিমলা রামডাঙ্গা বনবিভাগ মাঠে ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত “কৃষক নেতা মোজাম্মেল হক গাজীর” মৃত্যুতে শোক ও স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো’র সদস্য কমরেড নজরুল ইসলাম হক্কানী একথা বলেন।তিনি আরো বলেন,দেশে অনেক উন্নয়ন হলেও বৈষম্য কমেনি।মানুষে মানুষে, অঞ্চলে অঞ্চলে বৈষম্য বেড়েই চলছে।করোনার অতিমারির সময়ে কৃষক খাদ্যশস্য,সবজিসহ সবকিছুতেই বাম্পার ফলন ফলালেও লাভ কৃষকের পকেটে ঢুকছে না।লাভ খেয়ে ফেলছে ধনিক,বনিক,ফড়িয়া,মধস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট। কৃষক সমাজ কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না মহাজন,দাদন,এনজিও ঋণের মরণজালে কৃষক সমাজের অবস্থা কাহিল- বেহাল। ঋণগ্রস্ত কৃষক চক্রবৃদ্ধি ঋন পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঢাকাসহ নানা জায়গায় চলে যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে সংবিধানের নির্দেশনা ছিল তিন ধরণের অর্থনীতি থাকবে।রাষ্ট্রীয়,সমবায় এবং ব্যক্তি খাত।বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নও ছিল তাই।এখন বাজার,অর্থনীতি,কৃষি,শিল্প,স্বাস্থ্য,শিক্ষা,পরিবহন,ব্যাঙ্ক,বীমা সবকিছুই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি খাতে।
ইতোমধ্যে করোনার থাবা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে গ্রামে। সীমান্ত এলাকার জনপদে।করোনা’র টিকা গ্রামের কৃষক,খেতমজুর কবে পাবে তার নিশ্চয়তা নাই।কৃষক-খেতমজুর’রা জীবন ও জীবীকা দুটোই বাঁচাতে চায়।করোনায় কাজ হারিয়ে অনেকেই বেকার বসে আছে।স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় কৃষকের সন্তানরা দিশেহারা।এই অচলাবস্থা নিরসনে সবার আগে দরকার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। তাই,গ্রামের মানুষের কাছে সরকারি ভাবে টিকা দাও,গ্রামীন অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে সমবায় ব্যবস্হা গড়ে তোল,তিস্তা নদী সুরক্ষা কর,সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদন ও বিপনন ব্যবস্থা চালুসহ ওয়ার্কার্স পার্টির ১৮ দফা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্যে দিয়েই আমরা গাজী ভায়ের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারবো।ওয়ার্কার্স পার্টির ডিমলা উপজেলা সাধারণ সম্পাদক কমরেড সোহেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোকসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির নীলফামারী জেলা সভাপতি কমরেড তপন কুমার রায়,সাধারণ সম্পাদক কমরেড আবিদ হোসেন,সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য কমরেড মোজাফ্ফর হোসেন বাবলু,জেলা কমিটির সদস্য,যুবমৈত্রী নেতা কমরেড ওবায়দুর রহমান,তিস্তা বাঁচাও,নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য মাহমুদ আলম,ডিমলা জনতা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রহমান,স্হানীয় কৃষক নেতা মাহবুবার রহমান ও নূরুল হক।সভায় আগত সবার মাঝে পার্টির পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করা হয়।উল্লেখ্য,মোজাম্মেল হক গাজী গত ৮ জুন২০২১ প্রয়াত হয়েছেন।তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভূগছিলেন।
Exit mobile version