যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনবিরোধী ‘নো কিংস’ আন্দোলন : ঢেউ এসে পড়েছে ইউরোপেও: ট্রাম্পের শাসনকে ফ্যাসিজমের তুলনা করে নাগরিক অধিকারের দাবি যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে! ট্রাম্প সমাজতন্ত্রের ভূত দেখছেন!
আমেরিকার প্রায় সব অঙ্গ রাজ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে নো কিংস আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। তার ঢেউ ইউরোপের কয়েকটি দেশেও পড়েছে। এই আন্দোলনে সাত মিলিয়ন লোকের সমাবেশ ঘটেছে বলে বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে প্রকাশ। নিউইয়র্ক থেকে সানফ্রান্সিসকো, সকল উপকূলে, নগরে এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে সমাজের সকল স্তরের নাগরিকরা সমবেত হয়ে ট্রাম্পকে জানিয়ে দিল, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রাজার শাসন চলে না। যুক্তরাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে জনগণের, কোনো রাজার অধীনে নয়। ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য এই আন্দোলনকে আমেরিকার প্রতি ঘৃণা হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এই আন্দোলনে ডেমোক্র্যাটরা থাকলেও এই আন্দোলন একটা নাগরিক আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কারণ, গত একবছরে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী নাগরিকদের বিষয়ে নির্দয় সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে আইনবহির্ভূত ভাবে বহিষ্কার করছে। আমেরিকা মহান বা আমেরিকা প্রথম স্লোগানে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে একটা বিলিয়নিয়ার ও সাদাদের দেশে পরিণত করার ঘোষণা দিয়ে অভিবাসীদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়েছে। এছাড়াও, প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের গণহত্যাকে সমর্থন করে প্রো- প্যালেস্টাইন আন্দোলনকে কঠোর হস্তে দমন করে এবং বিভিন্ন জায়গায় ফেডারেল পুলিশ নামায়। অন্য দিকে নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকারকে কাটছাঁট করে এবং ফেডারেল চাকরি থেকে অনেককেই বরখাস্ত করে। একদিকে করের বোঝা অন্য দিকে চাকরিচ্যুৎ করে নিম্ন আয়ের মানুষকে নির্মম জীবন যাপনে টেলে দিচ্ছে। সর্বোপরি শুল্ক যুদ্ধ আমেরিকার নাগরিকদের ব্যয় বৃদ্ধি করে দিয়েছেন, ট্রাম্প। ট্রাম্প তাঁর নানা বতৃতায় নিজেকে কিং সমতুল্য ঘোষণা করে এবং ফেডারেল পুলিশ দিয়ে নাগরিকদের দমনের রাস্তা বেছে নিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে ট্রাম্পের এই দমন-পীড়নের প্রতিবাদের ফলাফল হিসেবে গতকাল এই মহাসমাবেশ গুলো হয়। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ২৭০০ স্থানে এই প্রতিবাদ সংঘটিত হয়। নারী শিশু ও সেলিব্রিটিরা নেচে গেয়ে এই সমাবেশে অংশ নেয়।
আন্দোলনকারীরা বলেন, প্রেসিডেন্ট মনে করেন তাঁর শাসনই চূড়ান্ত। কিন্তু আমেরিকায় আমাদের কোনো কিং বা রাজা নেই, আমরা বিশৃঙ্খলা, দূর্নীতি ও নিষ্ঠুরতা মেনে নিব না।
এ-ই আন্দোলনে ঘি ঢেলেছে সাম্প্রতিক সরকারের কার্যক্রম বন্ধের ঘটনা। গত কয়েক সপ্তাহ সরকারি শাটডাউন চলছে। লক্ষ কর্মচারী চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন। তাঁরা বলছেন, এই প্রেসিডেন্ট একটা অভিশাপ। ডেমোক্র্যাটরা বলছে, আমরা আমেরিকাকে ভালোবাসি, তাই এই আন্দোলনকে সমর্থন করি।
ট্রাম্প অবশ্য বলছেন, তাঁরা আমাকে কিং বললেও আমি কিন্তু কিং নই। তিনি বলেন, এটা আমেরিকায় ঘৃণা ছড়াচ্ছে। ট্রাম্প এই আন্দোলনকে বলছেন, এটা হলো মার্কসিস্ট, সোশালিস্ট, অ্যান্টিফা এডভোকেটস,এনার্কিস্ট, হামাসপন্থী এবং উগ্র বামপন্থীদের আন্দোলন। কিন্তু আমেরিকার পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলন নাগরিক অধিকারের আন্দোলন হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছে।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনেও এই আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে। ডেমোক্রেট প্রার্থী মামদানী নিজেকে একজন সোশালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন। ট্রাম্প তাঁকেও সোশালিস্ট হিসেবে হুমকি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনা হবে বলেছেন।
যাইহোক, ট্রাম্পের বিভিন্ন নীতি সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বিশেষ করে তাঁর অভিবাসন বিরোধী আইন ও পদক্ষেপ মানবতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। তাই নো কিংস আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের শহরে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটা ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ জন্ম নিয়েছে বলা চলে। তার বিরুদ্ধে চলমান নাগরিক আন্দোলনকে তাই সমাজতন্ত্রের ছায়া হিসেবে দেখছেন। অনেকটা সমাজতন্ত্রের ভূত দেখার মতো।
লেখক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক



