শুক্রবার,২৬,এপ্রিল,২০২৪
37 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়মুক্তমতরংপুর বিভাগের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ এবং "তিস্তা মহাপরিকল্পনা" দ্রুত বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে

রংপুর বিভাগের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ এবং “তিস্তা মহাপরিকল্পনা” দ্রুত বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে

“বাঁচায় তিস্তা,বাঁচাও তিস্তা”।প্রতিবছর বন্যা আর ভাঙনে তিস্তাপারের আাবাদী জমি, খেতখামার লোকালয়, মসজিদ-মন্দির,হাট-বাজার তিস্তা খেয়ে ফেলছে। বাড়ছে লাখো মানুষের দুর্ভোগ,দুর্গতি। ভাঙনে ফি বছর উদ্বাস্তু হয় তিস্তা তীরের হাজার হাজার মানুষ। ফসলহানি ঘটে ব্যাপক।প্রতি বছর সবমিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।তিস্তা পাড়ের মানুষ রিলিফ চায়না। চায় তিস্তা নদীর সুরক্ষা। বৈজ্ঞানিক খনন। এটা করা গেলে অকাল বন্যা, নদী ভাঙন ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে বাঁচবে তিস্তাপারের মানুষ।বাঁচবে বিভাগের নিম্নাঞ্চল- বিভাগীয় ও জেলা শহরের মানুষ।বাঁচবে কৃষকের রক্তঘামে সৃষ্টি তাদের সোনার ফসল। রক্ষা পাবে জমিজিরাত, ঘরবাড়ি- জনপদ।বাঁচবে দেশ।রংপুর বিভাগের কৃষিই হবে দেশের সেরা খাদ্যভান্ডার। বাড়বে গোটা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।কমবে দারিদ্র্য। প্রস্তাবিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা চোর বাটপাটপারদের দিয়ে নয়,পদ্মা সেতুর মতো যারা নদী শাসনে এক্সপার্ট যারা কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ,অভিজ্ঞ তাদেরই সহযোগীতায় নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা পরিকল্পনার কাজ শুরু করা এখন সমযের দাবি।এ কাজ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা গেলে রংপুর বিভাগ অর্থনৈতিক উন্নয়নে মাইলস্টোনে পরিণত হবে। যাদের নদী শাসনে কারিগরি বোধ নেই তাদের দিয়ে আর যাই হোক তিস্তা সুরক্ষার কাজ হবেনা।এই অভিমত দিযেছেন নদী ও পানি বিশেষজ্ঞ ড.আাইনুন নিশাত।দ্রুততার সাথে তিস্তা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কমে আসবে রংপুর বিভাগের ৫ জেলার চিরায়ত বৈষম্য,দারিদ্র্যের হার।ঘটবে অর্থনীতি ও রাজনীতির বিকেন্দ্রীকরণ। কমবে ঢাকার ওপর মানুষের অসহনীয় চাপ।”তিস্তা মহাপরিকল্পনা” ঘিরে রংপুর বিভাগে বাড়বে দেশি-বিদেশি – সরকারি বিনিয়োগ।এ অঞ্চলে গড়ে উঠবে নদীকেন্দ্রিক আধুনিক সমলয়/সমবায়ী কৃষি,ফুডপ্রসেসিং ও কৃষিভিত্তিক কারখানা। তিস্তার উদ্ধারকৃত সরকারি জমিতে গড়ে ওঠবে নানা অর্ধনৈতিক জোন। প্রসার ঘটবে পর্যটনশিল্পের।বাড়বে কর্মসংস্থান। তিস্তার সঙ্গে তিস্তার শাখাপ্রশাখা নদ-নদী ফিরে পাবে তাদের প্রবাহমান হারানো জীবন।পুনরুদ্ধার হবে নৌপথ।জাগবে প্রাণপ্রকৃতি, প্রতিবেশ-পরিবেশ।উজ্জীবিত হবে জীবন।রক্ষা পাবে জীববৈচিত্র। তিস্তা মহাপরিকল্পনা “তিস্তা চুক্তির” বিকল্প নয়।একটার সাথে অন্যটার সম্পর্ক পরিপূরক। খরাকালে তিস্তার জীবনধারা বাঁচিয়ে রাখতে” তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যাও” আমাদের পেতেই হবে।জারি রাখতে হবে তিস্তা চুক্তির লড়াই।এখানে কোন আপোষ নাই।কিন্তু তিস্তা চুক্তির অপেক্ষায় মহাপরিল্পনার কাজ বন্ধ রাখা চলবেনা।তিস্তার “৬ দফা” আন্দোলন চলবে ডাবল ইন্জিনে।দেশীয় ব্যবস্থাপনায়, প্রাক্কলিত নকশা অনুযায়ী ২০২১-২০২২ অর্থ বছরেই তিস্তা সুরক্ষায় তিস্তা নদী খননের কাজে হাত দিতে হবে।ধাপেধাপে ৪ বছরেই মহাপরিকল্পনার সবকাজ সারতে হবে।তিস্তাপারের মানুষের প্রাণের কথা, ” তিস্তা গভীর করে খনন কর,দুই তীর সংরক্ষণ করো,কৃষি বাঁচাও,ভাঙন ঠেকাও মানুষ বাঁচাও “।
পরিস্থিতি ক্রমাগত নাজুক হচ্ছে।প্রতিবছর বাড়ছে বন্যা,ঘূর্ণিঝড়।বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ঝুকিতে বাংলাদেশ।সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে।সাগরের লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ টি উপকুলীয় জেলায়।রংপুর বিভাগসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলে জীবনজীবীকা হচ্ছে বিপর্যস্ত,লন্ডভন্ড।করোনার অতিমারি পরিস্থিতিকে আরো বেসামাল করে তুলছে। গেল বছর তিস্তা অববাহিকাসহ দেশের সব নদী অববাহিকার মানুষ টানা ৫ মাস পানিবন্দি ছিলেন। রংপুর বিভাগের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।গোটা রংপুর বিভাগের নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল।রংপুরে হয়েছিল স্মরণাতীতকালের রেকর্ড পরিমান বৃষ্টি,৪৪৭ মিলিমিটার।বুক পানিতে ডুবে ছিল বিভাগীয় শহর রংপুর।জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় দেশের সব নদী সুরক্ষা,নদী দখলমুক্ত ও দুষণমুক্ত করা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নাই।জলবায়ু অভিযোজন সক্ষমতার অংশ হিসেবে অগ্রাধীকার ভিত্তিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ” তিস্তা নদীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প” হাতে নিয়েছেন।২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের শীর্ষ কর্তা। গণমাধ্যমে পরিকল্পনামন্রী এমএ হান্নান এবং পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের দেওয়া তথ্যসূত্রে জেনেছি প্রকল্পের ঋণ প্রস্তাব চীন সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে।সম্প্রতি চীনা রাষ্ট্রদূত তিস্তা প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন।তাতে তিনি এটা চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন।তিস্তা চুক্তির মতো তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ ঝুলে থাকবে নাতো! এ শঙ্কা দানা বাঁধছে রংপুর বিভাগসহ গোটা দেশবাসীর মনে।আমাদের সবিনয় আবেদন- তিস্তা প্রকল্পের ৮ হাজার ৫’শ কোটি টাকা খুব একটা বড় টাকা নয়।বিশ্বব্যাংক,জাইকা, চীন প্রকল্পের ঋণ প্রস্তাবে রাজি না হলে নিজস্ব অর্থায়নে হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে হবে। দেশে ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে অসংখ্য মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হয়েছে,হচ্ছে।গোটা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল,২৮ টির অধিক হাই-টেক পার্ক,বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট -২,গভীর সমুদ্র বন্দর,পদ্মা সেতু,এলএনজি টার্মিনাল,এক্সপ্রেসওয়ে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র,মেট্রো রেল,কর্ণফুলি টানেলসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের বাস্তবায়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে।ওগুলোর বিরোধীতা আমরা করছিনা।দেশের উন্নয়নে ওসবের প্রয়োজন আছে- তা আমরা অকপটে মেনে নিচ্ছি।প্রশ্ন! রংপুর বিভাগ কেন মেগা প্রজেক্টের সুফল থেকে, সুষম উন্নয়নের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে!(?)। তাই, আসন্ন বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ রংপুর বিভাগের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমরা রংপুর বিভাগের প্রত্যেকটি জেলার জন্য আলাদা ” বাজেট” বরাদ্দ চাই।ইতিপূর্বে রংপুর বিভাগের জন্য এডিপি’র গড় বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ১ শতাংশের কম(০.৯৮ শতাং)।এই আকাশছোঁয়া বৈষম্যের কারণে সারাদেশে দারিদ্র্যের হার কমলেও রংপুর বিভাগের গড় দারিদ্র্যের হার ৪৬ শতাংশ।করোনাকালে এ হার এখন অারো বেড়েছে।সারা দেশে গড় দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ হলেও তিস্তা তীরবর্তী কুড়িগ্রামে এই হার প্রায় ৭১ শতাংশ,লালমনির হাটে ৪২ শতাংশ,গাইবান্ধায় ৪৭ শতাংশ,রংপুরে ৪৩ শতাংশ।নদী ভাঙন, করোনাকালে ইনফরমাল সেক্টরে “দিন আনা দিন খাওয়া” মানুষের কর্মহীনতা এবং কৃষি পণ্যের দাম কমার কারণে বৃহত্তর দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলাও চরম দারিদ্র্যের ঝুকিতে ছটপট করছে।রংপুর বিভাগে বেকারত্বের হার দেশের অন্যান্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রাপ্তিতে রংপুর বিভাগের অবস্থান তলানিতে।খাদ্য উৎপাদন এবং পোষাক খাতে রংপুর বিভাগের কৃষক-খেতমজুর ও নারি শ্রমিকদের অবদান অসামান্য।
রংপুর বিভাগের উন্নয়ন হয়নি- তা বলছিনা। বলছি সুষম উন্নয়ন হয়নি।প্রতিটি ক্ষেত্রেই।দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার ম্যাগাপ্রজেক্ট হয়েছে,হচ্ছে।রংপুর বিভাগ ০+০+০=০। আমরা এবারের বাজটে বৈষম্যের অবসানে কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চাই।”তেলে মাথায় তেল দেয়া আর ন্যাড়া মাথায় বারি দেয়ার” নীতির পরিবর্তন চায় রংপুর বিভাগের দুইকোটি মানুষ।রংপুর বিভাগের তরুণরাও সোচ্চার একই দাবিতে।এ বছরেই বাজেট পরবর্তী জরুরি একনেক সভায় “তিস্তা পরিপরিকল্পনার” অর্থায়নের বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন- মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের এটাই প্রত্যাশা।দাবি রংপুর বিভাগের সুষম উন্নয়নে বাজেটে আালাদা বরাদ্দ। সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করা সাংবিধানিক দায়িত্ব। জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন।মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিল মানুষে-মানুষে,অঞ্চলে-অঞ্চলে বৈষম্য কমানো।
এই দাবিতে ক্যাবিনেটে,জাতীয় সংসদে,পরিকল্পনা প্রনয়নে সজাগ,সচেতন এবং সোচ্চার থাকতে হবে রংপুর বিভাগের ৫ মন্রীসহ সকল সংসদ সদস্যদের।তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তিস্তা চুক্তি সই করাসহ ৬ দফা দাবিতে ” তিস্তা বাঁচাও,নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের” ডাকে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর তিস্তার দুই তীরে ২৩০ কিলোমিটার মানববন্ধনহয়েছে।তিস্তাপারে ৫ লাখ মানুষ দাঁড়িয়েছিলেন ওই দাবিতে।একই দাবিতে ২০২১ সালের ২৪ মার্চ তিস্তার দুই তীরের হাট বাজার বন্দরে ১০ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একই দাবিতে ১ লাখ গণস্বাক্ষর পৌঁছে দেয়া হয়েছে।তিস্তা পাড়ের মানুষ বুকভরা আশায় বসে আছেন- দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ দেখতে।আমরা ” নাকের বদলে নড়ুন চাইনা “।ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ানোর কৌশল বাদ দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তিস্তানদী পুনরুদ্ধার শীর্ষক- ” মহাপরিকল্পনার” কাজ শুরু করার দিকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।গাড়িকে ঘোড়ার পিছনেই রাখতে হবে।উন্নয়নের রথযাত্রায় মূলধারায় শামিল হতে রংপুর বিভাগের কোমর সোজা করতে প্রয়োজন এই বিভাগের প্রতিটি জেলার জন্য বাজেটে আলাদা বিশেষ বরাদ্দ রাখা।এরজন্য লড়াইটাও জরুরি।
লেখক: পলিটব্যুরো সদস্য বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি,সভাপতি, তিস্তা বাঁচাও,নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ।

সর্বশেষ