বৃহস্পতিবার,২৫,এপ্রিল,২০২৪
32 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Homeসম্পাদকীয়মুক্তমতসুলতানের চিত্রকলা : শোষণমুক্তির স্বপ্নের ইশারা

সুলতানের চিত্রকলা : শোষণমুক্তির স্বপ্নের ইশারা

 ।। প্রফেসর মো. রবিউল ইসলাম ।।

নড়াইলের চিত্রা নদীর পাড়ে মাছিমদিয়া গ্রামের গরিব মেহনতি মানুষ রাজমিস্ত্রি মেছের আলীর সন্তান লালমিয়া আপন প্রতিভায় কালক্রমে বিশ্ববরেণ্য চিত্রশিল্পী এস.এম সুলতান হয়ে ওঠেন। তাঁর এই হয়ে ওঠা যেমন চমকপ্রদ তেমনই নাটকীয়। অনন্যসাধারণ এ শিল্পীর যাপিত জীবনও ছিল অসাধারণ বৈচিত্র্যপূর্ণ ও কৌতূহলোদ্দিপক। ৭১ বছরের জীবনে (১৯২৩ – ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ) ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৩ কালপর্বে শেখ মুহম্মদ সুলতান কলিকাতা, আগ্রা, দিল্লী, সিমলা, কাশ্মির, লাহোর, করাচি ,নিউইয়র্ক, বোস্টন, শিকাগো, ওয়াশিংটন ডিসি, মিশিগান, লন্ডন এককথায় ভারত উপমহাদেশ, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন এলাকায় কাটিয়েছেন, দিয়েছেন নিজের শিল্পীসত্তা তথা সৃজনক্ষমতার অসামান্য প্রমাণ।বিশ্বজয়ের পর ১৯৫৩ তে আবার ফিরে এসেছেন শেকড়ের টানে চিত্রাপারে আপনভূমি নড়াইলে। প্রবাস জীবনে তিনি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছেন শাহেদ সোরাওয়ার্দী, ফিরোজ খান নুন এবং মিস ফাতেমা জিন্নাহ সহ বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষের। সখ্য পেয়েছেন আব্দুর রহমান চুঘতাই, নাগী, শাকের আলী, ফয়েজ আহম্মেদ ফয়েজ, সাদাত হাসান মান্টো, বাড়ে গোলাম আলীর মত অসংখ্য মহান মনুষদের।পাবলো পিকাসো, সালভেদর দালী, অঁরি মাতিস, কনস্টেবল, জর্জ ব্রাকের মত বিশ্ব বিখ্যাত শিল্পীদের সাথে লন্ডনের লেইস্টার গ্যালারীতে একই প্রদর্শনীতে জায়গা করে নিয়েছে তাঁর কাজ।সুলতানের জীবন আমার প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়, তাই এ প্রসঙ্গে কোনো বিশ্লেষণে আমি যাব না। কেবল তাঁর কাজের মান ও ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য ওপরের কথা ক’টি বলতে হ’ল।

এবার দেখা যাক এস. এম সুলতান কী আঁকতেন ? কীভাবে আঁকতেন ? কেন আঁকতেন ? ।আমরা তাঁর আঁকার ইতিহাস আলোচনা করলে দেখবো তিনি প্রথম জীবনে প্রধানত পোট্রেট এবং নিসর্গ দৃশ্য আঁকতেন। আঁকতেন ভাল লাগার তাগিদে, নিজেকে প্রকাশের তাড়নায়। এসব নিসর্গচিত্রে মানুষ চিত্র-অনুসঙ্গ হলেও ক্যানভাসের কেন্দ্রীয় ফোকাসে সেভাবে আসতো না। এ সময়ের নিসর্গ দৃশ্যের কাজগুলোতে মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যকার একধরনের একরৈখিক সরল সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছে।লড়াইয়ের তুলনায় খাপখাওয়ানোর প্রবণতা এখানে অনেক বেশি স্পষ্ট বলে মনে হয়।এ সময়ের কাজে সুলতানের নিজস্বতা থাকলেও সেখানে বৃটিশ গরানার অঙ্কনশৈলীর বেশ খানিকটা ছাপ দেখতে পাওয়া যায়।মোটামুটি ৫১/৫২ সাল পর্যন্ত সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তাঁর প্রায় সব ছবিই এ ভাগে পড়ে।১৯৪৬ সালে সিমলায়, ১৯৪৮ সালে লাহরে, ১৯৪৯ সালে করাচিতে এবং ১৯৫০ সালে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে ১৩টি একক প্রদর্শনী ও লেইস্টার গ্যালারীতে যৌথ প্রদর্শনীতে তাঁর ঠিক কী কী ছবি প্রদর্শিত হয়েছিল তা গঠিকভাবে জানা না গেলেও তদানীন্তন সময়ের বিভিন্ন চিত্র সমালোচকের লেখা পড়লে ওপরের কথারই সমর্থন পাওয়া যায়।এ সময়কালে বর্তমান বাংলাদেশে সুলতানের কোন প্রদর্শনীর কথা জানা যায় না। তখনো এ দেশের মানুষের কাছে সুলতান তেমন কোন পরিচিতি পান নি। ১৯৫৩ সালে নড়াইলে ফিরে আসার পর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তাঁর বড় ধরনের উল্লেখযোগ্য কোনো কাজের সন্ধান পাওয়া যায় না যদিও ১৯৫৪ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে তাঁর একটি একক প্রদর্শনী ও ১৯৬৯ সালে খুলনা ক্লাবে ভাস্কর কাজী মতিউর রহমানের সাথে যৌথ প্রদর্শনীর কথা জানা যায়। তবে এ সকল প্রদর্শনীতে ঠিক কী ধরনের ছবি ছিল তার যথাযথ কোন খতিয়ান আমাদের কাছে না থাকলেও যতটুকু জানা যায় তাতে বোঝা যায় সুলতানের ছবিতে একধরনের ‘থিমেটিক’ পরিবর্তনের ছাপ তখন ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।১৯৭৪ সালে নড়াইলের কৃষি,শিক্ষা,শিল্প ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর ৯০ ফুট উঁচু টাওয়ারের জন্য তিনি মানব সভ্যতার বির্বতন বিষয়ক একটি ম্যুরাল আঁকেন, যাকে তাঁর নতুন ধাচেঁর ছবির প্রথম স্পষ্ট প্রকাশ বলা যেতে পারে।।৭০ এর দশকের শুরু থেকে সুলতানের চিত্রভাবনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হতে শুরু করে পরবর্তিতে তা বিকশিত হয়ে তাঁর চিত্রকলার দ্বিতীয় পর্বের উন্মেষ ঘটায়।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ১ম জাতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে সুলতানের কিছু ছবি প্রদর্শিত হলে সুধি সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয। ১৯৭৬ সালে শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।এ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে সুলতানের চিত্রকলা এক নতুন রুপে নতুন মেজাজে আবির্ভূত হয়। বাংলাদেশের চিত্রকলায় যুক্ত হয় এক নতুন মাত্রা। মেহনতি মানুষের রক্ত-ঘামের বিনিময়ে উৎপাদন এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় বিধিবিধানের মারপ্যাঁচে উৎপাদিত পণ্যের উপর উৎপাদকশ্র্রেণীর অধিকারহীনতার যে বাস্তব অভিজ্ঞতা সুলতান আ-শৈশব লাভ করেছেন পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে জীবনের পাঠশালায় তারই গভীর পাঠ নিয়ে তিনি আরো বেশি ঋদ্ধ আরো বেশী অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন দিনে দিনে।পাশাপাশি নড়াইলের তে-ভাগা আন্দোলনে কৃষকের যুথবদ্ধ শক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে সাধারণ মানুষের অসাধারণ বিক্রম তাকে অভিভুত করেছে। তার এ অভিজ্ঞতার সারসংকলণ হিসাবে তিনি যা উপলব্ধি করেছেন তা হ’ল – এ পৃথিবীর মূল চালিকা শক্তি শ্রমজীবী মানুষ। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এরা হ’ল গ্রামের খেটে খাওয়া কৃষক।সভ্যতা-সংস্কৃতি-উন্নয়ণ-অগ্রগতি সব কিছুর মূলে আছে উৎপাদক তথা গ্রামের কৃষক।তাঁর এই উপলব্ধিকে এবার তিনি রং-তুলিতে বাঙময় করে তুলতে সচেষ্ট্ হলেন। শুরু হ’ল সুলতানের চিত্রকলার এক নতুন পর্ব।সুলতান বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছিলেন সমগ্র পৃথিবীতে উৎপাদক শ্রেণী যে ভাবে শোষণের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় ঠিক একইভাবে এ দেশের গ্রামীণ কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের উপর নিজ মালিকানা প্রতিষ্ঠা করতে না পেরে ক্রমান্বয়ে কৃশ থেকে কৃশতর হতে থাকে।কিন্তু এ শোষণ যদি না থাকত তবে কৃষক যা হতে পারত তাই তিনি স্বপ্নে দেখতেন। এ কারণে সুলতানের ইমাজিনেশনে যে কৃষক, তার সাথে কথিত বাস্তবের কৃষকের আপাত কোন সাদৃশ্য তিনি খুঁজে পান নি। যে কৃষক ঝড়-বৃষ্টি-খরা উপেক্ষা করে নিজ বাহুবলে কঠোর কঠিন মাটির বুকে হাল চালিয়ে তাকে গর্ভবতী করে সমগ্র মানবজাতির অন্ন যোগায়, সে কৃষক কীভাবে শক্তিহীন কৃশ হয় ? যে উদয়-অস্ত শ্রমে নিয়োজিত সে কেন নি:স্ব হবে ? কৃষকের উৎপাদনের অনুষঙ্গ তার হালের বলদ কেন দুর্বল হবে ? এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তিনি দেখেছেন আবা হমান কাল ধরে এ দেশের কৃষকদের ওপর জমিদার-জোতদার-মহাজন-রাষ্ট্র-ধর্ম ও সমাজের অবিরাম শোষণই এ অবস্থার জন্য দায়ী। যদি কৃষক এ শোষণের জোয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারতো, তবে তার প্রকৃত রূপ  যা হতে পারতো, তাই তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন তার এ সময়কার ছবিগুলোতে। তাঁর এই অতিবাস্তব স্বপ্নগাঁথাকে শক্তিশালী রেখায় বলিষ্ঠ রঙে তিনি উন্মোচিত করেছেন ক্যানভাসের পর ক্যানভাস জুড়ে। ড্রইং, জলরঙ, তেলরঙ সকল মাধ্যমেই তিনি সচ্ছন্দ ছিলেন তাঁর এ স্বপ্ন বয়নে।‌‌‌‌‌‌‌‌‘প্রথম রোপণ’ থেকে ‘চরদখল’  এ যেন শোষণমুক্তির শক্ত ভিতের বিবর্তনের এক অনবদ্য দৃশ্যকাব্য।এ সময়ের ছবিতে প্রকৃতির চেয়ে মানুষের ফিগার অনেক বেশি প্রমিনেন্ট হয়ে উঠেছে। যে শ্রমজীবী কর্মঠ মানুষ প্রকৃতিকে নির্মাণ করে, সে কারো দাস নয় বরং সৃষ্টিশীল শক্তির এক অমিত উৎস -এ কথা উচ্চ আকিত হয়েছে এ সময়ের প্রতিটা ছবিতে।এ যেন প্রথম মানবতাবাদী গ্রীক দার্শনিক প্রোটাগোরাসের অবিস্মরণীয় উক্তি‍ Man is the measure of all things এর দৃশ্যগত প্রকাশ। সুলতানের এ সময়ের ছবি মিকেল এ্যন্জেলোর ডেভিডের কথা মনে করিয়ে দেয়।এ সব ছবি যেন দর্শকদের কাছে অশ্রুতভাষায় চিৎকার করে বলতে থাকে, আর শোষণ নয় এবার তার বিরূদ্ধে রূখে দাঁড়াতে হবে, ভাঙতে হবে ঐ বেড়াজাল। তাঁর এ সময়ের ছবি প্রসঙ্গে বিখ্যাত চিত্র সমালোচক আবুল মনসুর লিখেছেন “সুলতানের চিত্রকলা দৃষ্টি সম্মুখে প্রথম যে অভিঘাতটি তৈরি করে, তা হ’ল একটি বিস্ফোরণোন্মুখ শক্তির প্রকাশ ও মনুমেন্টালিটি বা সমুন্নত ভাব। দর্শককে উদাসীনভাবে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে দেয় না, আকৃষ্ট ও কৌতূহলী করে তোলে, আবিষ্টও করে। বিস্তীর্ণ গ্রামীণ পটভূমি নিয়ে আঁকা হলেও তাঁর ছবির মূল ‘থিম’ মানুষ; প্রকৃতি এসেছে নেহায়েত পটভূমি বা অনুষঙ্গ হিসেবে।অবশ্য, নিসর্গের রূপায়ণ সুলতানের উদ্দেশ্যও নয়। প্রকৃতির পটভূমিতে নেহায়েত ক্ষুদ্র মানুষকে প্রকৃতির চেয়েও বড় গগনচুম্বী শক্তিধর করে দেখানোই তাঁর কাজ। ফলে অনুপাতটি এখানে উল্টে যায় – মানুষ হয়ে ওঠে বৃহৎ ও শক্তিধর, প্রকৃতি দূরে সরে যায় অকিঞ্চিৎকর হয়ে। এখানে অনেকটাই তিনি জয়নুল আবেদিনের সগোত্র। তবে দুজনের অমিলও লক্ষ্যযোগ্য। জয়নুলের ছবিতে প্রকৃতি জঙ্গম ও বিপুলা, মানুষ সেখানে প্রকৃতির সাথে টিকে থাকার প্রাণান্ত সংগ্রামে লিপ্ত; সুলতানের চিত্রে প্রকৃতির ওপর মানুষের দাপট প্রতিষ্ঠিত। তাঁর মানুষ প্রকৃতির সাথে লড়াই করে না, প্রকৃতিকে শাসন করে।

সুলতানের এ সময়ের ছবিতে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বিশেষভাবে দেখা যায়।

প্রথমত: ছবির মানুষগুলো সকলেই পেশীবহুল ও আত্মমগ্ন।

দ্বিতীয়ত: প্রত্যেকে আত্মশক্তিতে উদ্ভাসিত ও কর্মচঞ্চল।

তৃতীয়ত: কোন মানুষ একা নয়, তারা যূথবদ্ধ ও আপন অধিকার রক্ষায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

যাত্রা,গাঁতায় কৃষক, জমি কর্ষণে যাত্রা, জমিকর্ষণ, ধানকাটা, মাছধরা, ধান তোলা,পাট ধোয়া, গুণটানা, জমি দখল, চর দখল ইত্যাদি শিরোনামের ছবিগুলোর দিকে তাকালেই আমরা উপর্যুক্ত বৈশিষ্ট্যসমুহ দেখতে পাব।সুলতান নিজেই তাঁর ছবির ‘থীম’প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তা এখানে তুলে ধরছি “আমার ছবির ব্যাপার হচ্ছে সিম্বল অব এনার্জি। এই যে মাসলটা, এটা যুদ্ধের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, সয়েলের সাথে যুদ্ধ। তাঁর বাহুর শক্তিতে লাঙ্গলটা মাটির নিচে যাচ্ছে, ফসল ফলাচ্ছে। শ্রমটা হলো বেসিস। আর আমাদের এই অঞ্চল হাজার বছর ধরে এই কৃষকের শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। সেই কৃষকদের হাজার বছর ধরে মারা হয়েছে। …. আমি কৃষকের হাজার বছরের এনার্জিকে, ওদের ইনার স্ট্রেইন্থকে এক্সজারেট করে দেখিয়েছি। কাজের ফিলিংসটাকে বড় করে দেখিয়েছি।”

সর্বশেষে এস.এম সুলতানের সুবিখ্যাত দুটি ছবি ‘জমি দখল’ ও ‘চর দখল’ এর কথা বলে আমার বক্তব্যের ইতি টানতে চাই। ছবি দু’টোতে সুলতান কৃষকের দাবী প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম তথা তার ওপর শোষণ শাসনকারীদের বিরুদ্ধে যূথবদ্ধ কৃষকের শক্তির উত্থানকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।তিনি যেন বলতে চেয়েছেন কৃষকের ওপর আবাহমানকাল ধরে চলে আসা শোষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পথ হলো আত্মবলে বলীয়ান হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথ, এ পথে যে বাধাই আসুক না কেন তাকে মোকাবেলা করার শক্তি ও সাহস শ্রমজীবী মানুষের নিজের মধ্যেই রয়েছে। কেবল দরকার তাকে উজ্জীবিত করে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা। এখানে সুলতান যেন তাঁর স্বপ্নের মানুষ তথা কৃষক সমাজের শোষণমুক্তির পথের দিশা তুলে ধরেছেন। সুলতানের ছবিতে পুরুষের পাশাপাশি শ্রমজীবী নারীরাও এসেছে স্বমহিমায়। তাঁর ধানভানা,পানিভরা,পাটধোয়া,চুলবাঁধা মাছকাঁটা প্রভৃতি ছবিতে কর্মঠ নারীর প্রতিকৃতি প্রকাশিত হয়েছে। সুলতানের নারী কেবল পুরুষের প্রমোদসঙ্গী নয় বরং তারা জীবনের কর্মযজ্ঞে পুরুষের সহযাত্রী, সহযোদ্ধা।তাই সুলতানের ছবি যে এনার্জির কথা বলে তাতে নারী-পুরুষের কোন বিভেদ নেই, বরং সকলেই একই লড়াইয়ের সহ-যোদ্ধা।

পরিশেষে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রাম তথা কৃষকের শোষণমুক্ত জীবন গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই কেবল বাংলাদেশের সত্যিকার উন্নয়ন হতে পারে -এস.এম সুলতানের ছবির এ বক্তব্যকে মর্মে ধারণ করে মানবিক সমাজ গড়ার মহান ব্রতে দল-মত,ধর্ম-বর্ণ,নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত বয়ান শেষ করছি।

লেখক : গবেষক ও প্রবন্ধিক

সর্বশেষ