শুক্রবার,২১,নভেম্বর,২০২৫
22 C
Dhaka
শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
প্রচ্ছদসম্পাদকীয়মুক্তমতবাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত কি ? চীনকে অবহেলা সংকট হাতের বাইরে চলে যাবে! 

বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত কি ? চীনকে অবহেলা সংকট হাতের বাইরে চলে যাবে! 

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের বোঝা : জাতিসংঘে বাংলাদেশ : জাতিসংঘের মহাসচিব গুতারেস ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের এক আশাজাগানিয়া ব্যর্থতা: বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যত কি! সীমান্তে আরাকান আর্মি গলার কাঁটা! /? চীনকে অবহেলা সংকট হাতের বাইরে চলে যাবে!
 জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ইসলামিক জোট রোহিঙ্গা প্রত্যার্পন বিষয়ে একটা প্রস্তাব পাশ করে।  ২০১৭ সাল থেকেই জাতিসংঘ ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে মায়ানমার ফিরে যাওয়ার বিষয়ে এই ধরনের প্রস্তাব উত্থাপন করে এবং পাশ করে। এটা একটা রুটিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে এবার বাংলাদেশের অসহায়ত্ব বেশ জোরালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ১৩ লক্ষ রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশ আর টানতে পারছে না। কারণ গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভূরাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ালেও জাতিসংঘ তাদের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রীর সরবরাহ সন্তোষজনকভাবে অব্যাহত রাখতে পারেনি। এখন সংকট লালরেখা ছুঁয়েছে। অন্য দিকে মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্রোত বাংলাদেশ মুখে অব্যাহত আছে। অথচ বছরখানেক আগেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশের মিডিয়ায় বেশ উচ্ছ্বাস ছিল। কিন্তু আজকে মিডিয়া জাতিসংঘের প্রস্তাব বিষয়ে অনেকটা নিরবতাই পালন করছে। কারণ কি? সকলের মনে আছে গত বছর বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতিসংঘের মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লক্ষাধিক শরণার্থীর সাথে এক সলিডারিটি ইফতারে বেশ আাশার সাথেই বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা নিরাপদে মায়ানমারে ফিরে যেতে পারবেন। রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশ আশা জেগেছিল সেই আন্তর্জাতিক ব্যক্তিদের আশ্বাসে। আশা জাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ এতদঅঞ্চলে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুসের একটা ম্যাজিক ব্যক্তিত্ব রয়েছে মনে করা হয়। কিন্তু এই আশায় পানি ঢেলে দেয় আরাকান আর্মি।
আরাকান আর্মি সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্য দখল করে তাদের কর্তৃত্ব বিস্তারে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের অনেকে তখন পরামর্শ দিল, আরাকান আর্মির সাথে রাষ্ট্র বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন করতে।  এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেশি।  যুক্তরাষ্ট্র চায়, রাখাইনে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে আরাকান আর্মির সাথে একটা সহযোগিতা স্থাপন দরকার।  এতে করিডোরও পাওয়া যাবে,  মায়ানমারে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে প্রবেশও করা যাবে।  বাংলাদেশ এই ব্যাপারে বেশ এগিয়ে যায় এবং জাতিসংঘে যে সাতটা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল তাতে বহুপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দিহান হয় এবং অভিযোগ আনে বাংলাদেশ তাদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা উগ্রবাদীদের লজিস্টিক সাপোর্ট দিচ্ছে।  বাংলাদেশ এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। বরং আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রুপকে বন্দী করে।
বাংলাদেশের এই তৎপরতার কারণে রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশের উদ্দেশ্যের প্রতি সন্দিহান হয়ে পড়ে। কারণ আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গারা মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত।  আর এরইমধ্যে জাতিসংঘ বলে বসলো তারা রাখাইনে করিডোর চায় না। এটা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিষয়। পরিস্থিতি জটিল হয় যখন বাংলাদেশ যখন চীনকে বাদ দিয়ে জাতিসংঘ তথা যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলো। আরাকান আর্মির সাথে গোপন সমঝোতাও চীনের পছন্দ হয়নি।  চীন তারপর দাবার শেষ চালটা দেয়।  চীন মায়ানমারের জান্তা সরকারকে সামরিক সহায়তা দেওয়া শুরু করে যাতে মায়ানমার সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে পারে।  এটা বেশ সফলও হচ্ছে। বর্তমানে অবস্থা এমন বাংলাদেশ আরাকান আর্মির চাঁদাবাজি ও অপহরণ মোকাবিলা করতে হিমসিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশের নাফ নদী সীমান্ত এখন আরাকান আর্মি, মাদক চোরাকারবারি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশের জেলে ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ঝুঁকি দিনদিন বাড়ছে।  জাতিসংঘ এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শুধু যুক্তরাষ্ট্রমুখী কৌশল অনেকটা মার খেয়েছে বলা চলে- ব্যর্থ হয়েছে গোতেরাস ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের আশাবাদ। রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশের বোঝা – সরকারের এই বাস্তব স্বীকারোক্তি একটা বাস্তব নীতি প্রনয়ণে হয়তো  সহায়ক হবে। কারণ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তাড়াহুড়ো বা অতি আশার কিছু নেই।  আর এখানে মায়ানমার সরকার ও  চীনকে আমলে নিয়ে ধীরে চলার নীতি নেওয়া দরকার ; নচেৎ এই বোঝা বাংলাদেশের মানচিত্রকে ঝাঁকি দিতে পারে।তারপরও আশা করি বিশ্ব রোহিঙ্গাদের মানবতা ও মানবাধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসবে এবং বাংলাদেশ এই সমস্যাকে কমিয়ে আনতে পারবে।
লেখক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক

সর্বশেষ