শনিবার,৬,ডিসেম্বর,২০২৫
18 C
Dhaka
শনিবার, ডিসেম্বর ৬, ২০২৫
প্রচ্ছদসম্পাদকীয়মুক্তমতরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফর:  বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রতিরক্ষায় এর দূর প্রভাব...

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফর:  বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রতিরক্ষায় এর দূর প্রভাব কি!/?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফর : মোদির উচ্ছাস : ইন্দো- প্যাসিফিকে দাবার বোড়োর চালের পরিবর্তন : বাংলাদেশ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তার বার্তা কি: বাংলাদেশের রাজনীতি ও প্রতিরক্ষায় এর দূর প্রভাব কি!/?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর ফেসবুকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বন্ধু হিসেবে সম্বোধন করে ভারতে তাঁকে স্বাগতম জানিয়েছেন। তিনি প্রথা ভেঙে বিমান বন্দরে পুতিনকে গ্রহণ করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বরণ করেছেন। ইতিমধ্যে ডিনারও সেরেছেন। আর তিনি এসবের ছবি আপলোড করছেন। ভারতের মিডিয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের মিডিয়াও এইসব খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করছে। বিশ্ব মিডিয়ার জন্যও পুতিনের ভারত সফর গুরুত্বপূর্ণ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব কয়েকটি কারণে সকলের আলোচনায় আসছে।  প্রথমত অনেকে বলছেন,  যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক যুদ্ধে ভারত বেশ কোনঠাসা। এরমধ্যে কয়েক মাস আগে ভারত পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত বেশ একা হয়ে পড়ে। যুদ্ধ বিরতি পাকিস্তানের পক্ষে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য অনুযায়ী এই যুদ্ধে ভারতের ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। এই কোনঠাসা অবস্থায়ই যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রাশিয়া থেকে তেল কেনা সংকুচিত করার জন্য অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এইসব বিবেচনায় ভারত একটা নাজুক অবস্থায় পড়ে যায়। মোদি ট্রাম্প বন্ধুত্ব ফিকে হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের নজর চলে যায় পাকিস্তানের দিকে। পাকিস্তান এই সুযোগের সদব্যবহার করে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ খুঁজে। পাকিস্তান সহজেই বাংলাদেশকে তার পাশে পেয়ে যায়। পাকিস্তান বাংলাদেশের পরিবর্তীত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তার সামরিক আনাগোনা বাড়িয়ে দেয়। এতে ভারতের অস্বস্তি আরও বেড়ে যায়। মায়ানমার বাংলাদেশের সীমান্তের অস্বস্থিতো আছেই।  ভারত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খুশি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটা সামরিক সমঝোতা করে কিন্তু তাতেও ট্রাম্পের মন গলছে না। যুক্তরাষ্ট্রের এই সব শুল্ক যুদ্ধ তলে তলে তার সামরিক মিত্রদের সাথে সম্পর্ক শীতল হয়ে যাচ্ছে। ইউরোপ খুব বিরক্ত। ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউরোপের দূরত্ব বেড়ে যায়। ইউরোপ চায় রাশিয়া শাস্তি পাক, ট্রাম্প চায় ইউক্রেন তার ভূমি ছেড়ে দিয়ে রাশিয়ার সাথে সমঝোতা করুক। আবার রাশিয়া ও চীনকে শুল্ক ও অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে চাপে রাখতে চায়। এরই মাঝে চীন ও রাশিয়া সামরিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করে। ভারত এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের তিন নম্বর বাচ্চা হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিসরে খেই হারিয়ে ফেলে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত  চীনের সাথে বিরোধ কমিয়ে আনছে এবং রাশিয়াকে বন্ধু হিসেবে লালগালিচায় সংবর্ধনা দিলো।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন দুই দিন ভারতে অবস্থান করবেন। দুনিয়ার নজর এখন ভারতের দিকে। কারণ ভারত রাশিয়া নৌ-নিরাপত্তা সমঝোতা ইন্দো- প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে চ্যালেন্জ করবে। চীনের বিরুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নামানো এখন কঠিন হবে কারণ ভারতের নৌবাহিনী থাকবে রাশিয়ার সমঝোতায়। রাশিয়া এই সমঝোতা নিয়ে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে দাপিয়ে বেড়াবে।  চীনের সাথে ভারত স্থল সীমান্ত বিরোধে জড়ালেও নৌ বিরোধে জড়াবে না। ফলে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে রাশিয়া, চীন ও ভারতের নৌযান যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র  ভারতকে শিক্ষা দিতে গিয়ে ভারতকে ঠেলে দিলো রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে যেতে।
ভারত রাশিয়ার এই নৌ সামরিক সমঝোতা বা প্রতিরক্ষা চুক্তি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিতে বেশ প্রভাব পড়বে। আর এর কৌশলগত প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশ গত এক বছর ভারতের বিপক্ষে একটা সামরিক বলয় তৈরির দিকে ঝুঁকে গেছে।  পাকিস্তানের সাথে তার সামরিক দহরমমহরম এবং বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তার বক্তব্য ভারতের জন্য হুমকি তৈরি করছে। ভারত বাংলাদেশের বড় প্রতিবেশী। ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশের সাথে। বাংলাদেশের সমুদ্র পথও ভারতের সাথে সম্পর্কীত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান তুরস্ক ও চীনের সাথে সামরিক সম্পর্ক ও কেনাকাটা বাড়াচ্ছে।  বাংলাদেশের অভিযোগ ভারত বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ না দেখে একটা গোষ্ঠীর স্বার্থ দেখছে। সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা করেই চলেছে। অন্য দিকে,  ভারতে বিজেপি সরকার বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই যাচ্ছে। ভারতের বিজেপির বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার এবং বাংলাদেশের ভারতবিরোধী রাজনৈতিক ও উসকানি মূলক সামরিক বক্তব্য দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ককে নাজুক ও ঝুঁকিময় করে তুলছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফরকে ভারত এখন কাজে লাগাবে বৈশ্বিক এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তার প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে। বাংলাদেশকে সামনে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে গনতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়ায় বেশ সতর্ক থাকা দরকার। বাংলাদেশকে সর্বোপরি বৈশ্বিক সামরিক রিগ্রুপিংকে মাথায় রেখে একটা বাস্তব ও কার্যকর রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা নীতি গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। উসকানি কোনো সুফল আনে না।  তবে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। ভারত-রাশিয়ার সামরিক বন্ধন কোন দিকে গতি নেয় তার দিকে নজর রেখেই ভবিষ্যতের কথা বলা যাবে।
লেখক- শরীফ শমশির
লেখক ও গবেষক

সর্বশেষ