সোমবার,১৭,নভেম্বর,২০২৫
23 C
Dhaka
সোমবার, নভেম্বর ১৭, ২০২৫
প্রচ্ছদসীমানা পেরিয়েইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তি কি দেখা যাচ্ছে?

ইউক্রেন যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তি কি দেখা যাচ্ছে?

— নতুন ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্রের আকর্ষণীয় প্রস্তাবে রাশিয়ার সম্মতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দীর্ঘদিনের সংকটের সমাধানের পথে বড় অগ্রগতি ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে একটি আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়েছে, যা যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করলেও আনুষ্ঠানিক শান্তিচুক্তি নয়। এই প্রস্তাবের আলোকে রাশিয়া আনুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে এবং ২০২২ সালের শুরুতে পূর্ণমাত্রায় ইউক্রেনে আক্রমণ চালানোর ফলে দীর্ঘদিনের লড়াই শুরু হয়। ইউক্রেনের ভূখণ্ডের বড় অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, যা আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এ সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখে।

বর্তমান প্রস্তাবনায়, যুদ্ধবিরতি হলেও আনুষ্ঠানিক শান্তিচুক্তি হবে না। রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন ইউক্রেনীয় অঞ্চগুলো—কারেন্ট ফ্রন্টলাইন অনুসারে—এক ধরণের ‘ডিসপিউটেড টেরিটোরি’ হিসেবে ৪৯ থেকে ৯৯ বছর পর্যন্ত স্থগিত রাখা হবে। অর্থাৎ, ওই অঞ্চলগুলোর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ স্থগিত থাকবে এবং তা রাশিয়ার কার্যত নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

সংশ্লিষ্ট শর্তের মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত অধিকাংশ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া এবং ইউরোপে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস সরবরাহ পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেওয়া। তবে সবচেয়ে স্পর্শকাতর দাবি—ন্যাটোর সম্প্রসারণ বন্ধের গ্যারান্টি—এই পর্যায়ে দেওয়া হচ্ছে না। যদিও রাশিয়ার মূল দাবি ছিল ন্যাটোকে ইউক্রেন বা পূর্ব ইউরোপের দিকে সম্প্রসারণ থেকে বিরত রাখা, আলোচনার অন্যান্য শর্তের মাধ্যমে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ এত সহজে হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে এটি রাশিয়ার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা প্রদানে কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না। এতে পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি একটি বাস্তবসম্মত সমাধান যেখানে পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তির বদলে যুদ্ধবিরতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা হবে। এর ফলে ইউক্রেনের কিছু অংশ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থেকে যাবে, যা পশ্চিমা বিশ্বের জন্য এক ধরনের বেদনাদায়ক বাস্তবতা হলেও বৃহত্তর সংঘাত এড়ানোর সুযোগ তৈরি করবে।

তবে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও বিশ্বে নতুন কূটনৈতিক উত্তেজনা এবং ভিন্ন ফ্রন্টে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষত, ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে অনিশ্চয়তা, এবং অন্যান্য আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব এই নতুন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের অবস্থান নিয়ে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই প্রস্তাবের সফল বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব হবে তা নিয়েও শঙ্কা ও আলোচনা চলছে। 

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্স, এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) কিংবা গার্ডিয়ানের বিশ্লিষণে দেখা যাচ্ছে বর্তমান প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি হলেও ইউক্রেনের স্বাভাবিক সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন রেখে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সংঘাতের অবসানে এটি এক ধরণের রাজনৈতিক আপোস হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে এই ধরনের কৌশলগত সমঝোতা ভবিষ্যতে নতুন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি করতে পারে। ইউরোপে রাশিয়ার তেল ও গ্যাস সরবরাহ পুনরায় চালু হলে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম ও সরবরাহের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এই প্রক্রিয়ায় ন্যাটোর সম্প্রসারণে আপাতত বিরত থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের সম্ভাবনা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের পরে বিশ্বরাজনীতির নতুন রূপরেখা গঠিত হবে, যেখানে পশ্চিমা ও রাশিয়া মুখোমুখি থাকবে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক মঞ্চে, সামরিক সংঘাতের পরিবর্তে ‘ঠাণ্ডা যুদ্ধের’ মডেলে।

সর্বশেষ