ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশে নির্বাচন ঠেকানোর জন্য একটি চক্র সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। তার দাবি, যারা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে জানে, তারাই অস্থিরতা উসকে দিয়ে রাষ্ট্রকে দুর্বল করতে চাইছে। তিনি বলেন, ‘এই অস্থিতিশীলতার খরচ জনগণ দিচ্ছে, আর লাভবান হচ্ছে মাত্র একটি মহল।’
বুধবার (১৮ নভেম্বর) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের উদ্যোগে ‘ধানের শীষের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিতে যুবদলের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আব্দুল মোনায়েম মুন্না বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন ঠেকাতে ‘গোপনে–প্রকাশ্যে’ একটি মহল সক্রিয়। যারা ভোটে জিততে পারবে না, তারা বুঝে গেছে নির্বাচনের বাইরে গেলেই তাদের লাভ। কিন্তু এতে জনগণের বিরাট ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার যে পরিকল্পনা বহুদিন ধরে চলছে, সেই চক্রই এখনো কল–কাঠি নেড়ে যাচ্ছে।” নির্বাচন না হলে দেশ অশান্ত থাকবে উল্লেখ করে মুন্না বলেন, “দ্রুত নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যাবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও ভেঙে পড়বে। পুলিশ যদি সারাদিন অশান্তি সামলাতেই ব্যস্ত থাকে, তখন অন্যান্য অপরাধীরা সুযোগ পায়। এই শূন্যতা থেকেই ক্রাইম বাড়ছে। দেশকে এই অবস্থার হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবিলম্বে নির্বাচন দরকার।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হবে, এবং জনগণের ভোটে বিএনপি আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসবে। যুবদল সভাপতি জানান, ৫ আগস্ট ২০২৪–এর পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে যুবদলের ২০২ জন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এখন বিএনপিতে বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়া চলছে, আমরাও তা বিবেচনা করব,’ বলেন তিনি। এরপর নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি অনুরোধ করেন, নির্বাচনী মাঠে শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখতে এবং দলের মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থীদের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করতে।মুন্না বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান বারবার নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। “ভয় দেখিয়ে নয়, উদারতায় রাজনীতি করতে হবে– এটাই তারেক রহমানের স্পষ্ট দিকনির্দেশনা,” তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি দাবি করেন, তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বিবিসি সাক্ষাৎকার তরুণদের মাঝে শক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। “যুবসমাজ বুঝতে পারছে– দ্রুত নির্বাচন না হওয়াই আজকের অস্থিতিশীলতার উৎস। নেপালে অভ্যুত্থানের পর ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন হয়েছে, বাংলাদেশেও দ্রুত নির্বাচন জরুরি ছিল,” বলেন মুন্না। দেশে এখন মবোক্রেসির আড়ালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা চলছে বলেও বক্তব্য তিনি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় নিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করা নিয়েও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর দাবি, রায় কার্যকর করার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের, রাজনৈতিক বিরোধ সৃষ্টি করার জন্য মারামারির দরকার নেই। বরং “অস্থিরতা সৃষ্টি করে রাষ্ট্রকে দুর্বল করার ধরনের কর্মকাণ্ড” কারা উসকে দিচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
জিয়ার যুদ্ধ ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, যুবদল কেবল মিছিল–মিটিং করলে হবে না; গবেষণা, তথ্য ও ইতিহাস জানা জরুরি। ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একমাত্র সেক্টর কমান্ডার যিনি বাংলাদেশের ভেতর থেকে কমান্ড করেছেন। তাঁর সততা, দেশপ্রেম, স্টেটসম্যানশিপ—এসব জানা না থাকলে জনগণকে বোঝানো যায় না।’ এসময় এই যুবদল নেতা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তারেক রহমান যদি প্রধানমন্ত্রী হন, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবেন। তিনি যে কথা বলেন, তা অন্তরে ধারণ করেন। কাজে তার প্রমাণ আমরা কাছ থেকে দেখছি।’
সবশেষে কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘শুধু মিছিল মিটিংয়ে লোক জমায়েত করে লাভ নেই; ওয়ার্ড–থানা পর্যায়ে দক্ষ টিম তৈরি করে ভোটারদের বোঝাতে হবে এবং ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। এই নির্বাচন শুধু দলীয় লড়াই নয়– রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের লড়াই।’



