রবিবার,৯,নভেম্বর,২০২৫
26 C
Dhaka
রবিবার, নভেম্বর ৯, ২০২৫
প্রচ্ছদঅনুসন্ধিৎসাস্বাস্থ্যমানসিক স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা

মানসিক স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা

আমরা যখন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলি, তখন বেশিরভাগ আলোচনায় নারীদের বিষয়টিই বেশি উঠে আসে। অথচ বাস্তবতা হলো পুরুষরাও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। তারা কেবল তা প্রকাশ করেন কম, সাহায্য চান আরও কম। এই নীরবতা অনেক সময় ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়।

পুরুষদের মানসিক সমস্যা কেন আলাদা?

নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে মানসিক রোগ শনাক্ত কম হয়। তবে তাদের আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। কারণ, তারা সাধারণত বেশি প্রাণঘাতী উপায় বেছে নেন। এটি বোঝায়, সমস্যাটি লুকিয়ে থাকলেও তার গভীরতা অনেক।
সমাজ ও ‘পুরুষালি’ চাপ
ছোটবেলা থেকেই পুরুষদের শেখানো হয়—তুমি কাঁদবে না, দুর্বলতা দেখাবে না, সব কিছু নিজের ভেতরেই সামলাবে। এই ধরণের সামাজিক চাপে তারা নিজের সমস্যা গোপন রাখে, ফলে মানসিক চাপ বাড়তে থাকে।
সাহায্য চাওয়ার প্রতি অনিচ্ছা
পুরুষরা চিকিৎসা নিতে নারাজ। তারা অনেক সময় নিজেদের সমস্যাকে গুরুত্বই দেন না। ‘এটা বলার মতো কিছু না’—এই ভেবে চুপচাপ থেকে যান। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি তিন জনে একজন পুরুষই কেবল মানসিক রোগে নিয়মিত ওষুধ খান।
কোন লক্ষণগুলো দেখলে সতর্ক হবেন?
পুরুষদের মানসিক সমস্যার কিছু লক্ষণ হলো—হঠাৎ রেগে যাওয়া, ঘুম-খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন, বিষণ্নতা, একাকিত্ব, মাদক বা অ্যালকোহলে ঝুঁকে পড়া, কাজে মন না বসা, অকারণে শারীরিক অসুস্থতা ও আত্মহত্যার চিন্তা। এসব উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
বয়স্ক পুরুষ (বিশেষ করে ৮৫ বছরের বেশি), যারা দুর্ঘটনা, নির্যাতন বা যুদ্ধের শিকার, কর্মহীন, বিবাহবিচ্ছিন্ন, একাকী জীবনযাপনকারী, অর্থনৈতিক বা আইনি সমস্যায় জর্জরিত বা যাদের পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস আছে—তাদের মধ্যে মানসিক রোগের ঝুঁকি বেশি।
পুরুষদের মধ্যে বিষণ্নতা, দুশ্চিন্তা, স্কিজোফ্রেনিয়া, PTSD (পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার) এবং মাদক নির্ভরতা বেশি দেখা যায়। এসব রোগে আক্রান্ত হলেও তারা অনেক সময় তা গোপন রাখেন এবং চিকিৎসা গ্রহণে আগ্রহ দেখান না।
চিকিৎসার উপায় কী?
চিকিৎসা হিসেবে থেরাপি বা কাউন্সেলিং, প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনা যায়। সময়মতো ঘুম, সঠিক খাবার, ব্যায়াম, মেডিটেশন, অ্যালকোহল ও মাদক থেকে দূরে থাকা—সবই উপকারে আসে। একই অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও সহায়ক।
মনের কথা খোলামেলা বলা, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, মানসিক চাপ কমাতে সৃজনশীল কাজে জড়ানো এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা নেওয়া—এগুলো মানসিক সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। নিজের যত্ন নেওয়া জরুরি, শরীর ও মনের।
আপনি কীভাবে পাশে দাঁড়াতে পারেন?
আপনার আশপাশের কোনো পুরুষ যদি মানসিক সমস্যায় ভোগেন, তাহলে তার আচরণে পরিবর্তন খেয়াল করুন। তার সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন, চিকিৎসা নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিন এবং প্রয়োজনে সহায়তা করুন। যদি আত্মহত্যার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে তাকে একা না রেখে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।
পুরুষরা অনেক সময় সামাজিক কারণে সাহায্য চাইতে ভয় পান। তাই পরিবার, বন্ধু, কর্মক্ষেত্র এবং সমাজের উচিত—এ বিষয়ে আরও সহানুভূতিশীল হওয়া। সময়মতো সহায়তা পেলে একজন পুরুষও মানসিক সুস্থতা ফিরে পেতে পারেন। আপনার একটি কথাই হয়তো কারও জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।
সূত্র: মেডিকেল নিউজ টুডে

সর্বশেষ